‘নৈঃশব্দ্যের শব্দযাত্রা’-বইটির মোড়ক উন্মোচন

মামুন ম. আজিজ
Published : 14 Feb 2012, 08:33 AM
Updated : 14 Feb 2012, 08:33 AM

২০১২ সালের অক্টোবর মাসের দিকে 'সংকাশ' সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় মূলত অনলাইন ফেসবুককে আঁকড়েই। মাঝে দুএকটা রিয়েল লাইফ মিটিংও হয়। ধীরে ধীরে সংকাশ এর নির্ভৃত লেখকগণ কাগজের মাঝে মলাটে বদ্ধ একটি সংকলনের বাসনা পোষন করতে থাকনে। যার বদৌলতে একুশে গ্রন্থমেলা 2012 তে প্রকাশিত হয়েছে 'সংকাশ' এর প্রথম গল্প সংকলন `নৈঃশব্দ্যের শব্দযাত্রা'। বইটি প্রকাশ করেছে ভাষাচিত্র প্রকাশনী। একুশ জন গল্পকারের 21 টি সেরা গল্প নিয়ে বইটি সংকলিত হয়েছে।


[News from R TV]

বিগত ১১ই ফেব্রুয়ারী (শনিবার) ২০১১ তারিখের সন্ধ্যার নির্মল ক্ষণে ‌'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র' এর হলরুমে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বইটির মোড়ক উন্মোচন করলেন।


(নৈঃশব্দ্যের শব্দযাত্রা হাতে আবু সায়ীদ স্যার)

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার একজন প্রতিষ্ঠিত বাগ্মী। ওনার কথা শোনার জন্য মানুষ মুখিয়ে থাকে। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আমরা সকলেই মুখিয়ে ছিলাম। তিনি নিরাশ করেননি। সেদিনের মোড়ক উন্মোচনে তাঁর ভরাট শুদ্ধস্বর কণ্ঠের জ্ঞান গর্ভ বাণী নিয়ে সংকাশ এর সভাপতি আহমাদ মুকুল ভাই একটা প্রবন্ধ লেখা শুরু করেছেন , সেই প্রবন্ধের প্রথম পর্ব থেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের সেদিনের মূল্যবান কথার খানিকটা এখানে পাঠকের জন্য উদ্ধৃত করা হলো।

…সাধনা করতে হবে একা। জীবনে একাকিত্ব খুব প্রয়োজন। নিজের আত্মিক উন্নতির জন্য নিভৃতচারণ প্রয়োজন। কিন্তু বিকাশের জন্য দল প্রয়োজন। সামষ্টিক শক্তি প্রয়োজন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) নির্জন হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান-উপলব্ধি মানুষের কাছে নিয়ে এসেছেন। গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করেছেন। কিন্তু ঠিকই তার বাণী সাধারণ মানুষকে বিলিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মের জন্য সমষ্টি প্রয়োজন।

প্রত্যককে আত্মিক বিকাশ ঘটাতে হবে, নিভৃতে। কিন্তু সেটা হবে সামগ্রিক বিকাশ, উচ্চ স্বরে প্রয়োগ করতে হবে দলে, গোষ্টিতে, সংঘে।….গৌতম বুদ্ধ চিরদিনই বোধিদ্রুমের নিচে বসে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে সাধারণের কাছে এসেছিলেন। তাঁর উপলব্ধি সমাপ্ত হলে কর্মযজ্ঞের প্রয়োজনেই তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন।…''বুদ্ধং স্মরণং গচ্ছামি'', ''ধর্মং স্মরনং গচ্ছামি'' এই দুইয়ের পরই আসছে ''সংঘম স্মরণং গচ্ছামি''। সব মিথ্যা হয়ে যায় যদি সংঘবদ্ধ শক্তি সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ কর্ম কিংবা সাফল্যের পূর্বশর্ত হলো 'সংঘ'। অনেকগুলো 'একা'র শক্তি যখন সংঘে বা দলে গতিময়তা আনবে তখনই বিপ্লব আসবে।

কয়েকজন লেখক একাকী লিখতে লিখতে একটি লেখক সংগঠণে চলে এলো। গোপনে গোপনে লিখতে লিখতে পারস্পরিক একটি নিরব প্রতিযোগিতাবোধ সৃষ্টি করতে হবে, যার নাম 'প্রফেশনাল জেলাসি'। তাহলেই দলের মধ্যে গতি আসবে।….''ওপাড়েতে পাটা নাই পুতা নাই, মরিচ বাটে কালে, ওরা খেলো তাড়াতাড়ি আমরা মরি ঝালে'' অর্থাৎ আরেকজন আমাকে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে এই বোধটা প্রয়োজন!

'পেশাদারী ঈর্শা' মানে কাদা ছোড়াছুড়ি নয়। এটা হতে হবে নিজের ভেতরের চালিকাশক্তি।

ভার্চুয়াল জগতে বন্ধু হওয়া সম্ভব। কিন্তু স্পর্শ উষ্ণতা ছাড়া ওটা টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ভার্চুয়াল জগতের লেখকরা এক হয়ে স্পর্শের শক্তিতে স্থির বায়ুতে টর্নেডো সৃষ্টি করবে।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমাদের সংগঠনের উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করেছেন এবং এই সংকলন প্রকাশটিকে একটি শুভ সূচনা ধরে সাধানায় নিয়েজিত হয়ে ঐক্যকে শক্তিতে রূপান্তর করার উপদেশ দিয়েছেন। স্যার 'নৈঃশব্দ্যের শব্দযাত্রা' -বইটির মোড়ক উন্মোচন করায় 'সংকাশ' এর সকলের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।

মামুন ম.আজিজ
নির্বাহী সম্পাদক
সংকাশ (সংকোচহীন শব্দযাত্রা)