শিক্ষকদের অপরাজনীতির দায়ভার কি শিক্ষার্থীরাই বহন করবে?

মামুনুর রশীদ জাবি
Published : 21 July 2012, 10:30 AM
Updated : 21 July 2012, 10:30 AM

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রকৃতির অপরূপ মহিমায় গাঁথা এই নিবিড় বন্ধন বাংলাদেশের অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্মৃতির মায়ার বন্ধনে সারাজীবন আবদ্ধ করে রাখে। কিন্তু সেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে প্রতিনিয়ত কী ঘটে চলেছে?

দীর্ঘদিন আন্দোলন শেষে সরকার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেনকে নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। এর মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও নতুন উপাচার্যেও বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে আবার আন্দোলনমুখর হয়ে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যারয়। নতুন উপাচার্য এসেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি পর্যায়ক্রমে সবক্ষেত্রে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় সকলে আশা করেছিল সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য জাকসু নির্বাচনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ডীন নির্বাচন এবং সিন্ডিকেট নির্বাচনের পর সর্বশেষে উপাচার্য নির্বাচন দিবেন । আর এই প্রথা বহির্ভূত স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের জন্য আরও একবার শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নামতে হল আন্দোলনে।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা তাদের নতুন অভিভাবকের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে সকল কাজ পরামর্শের ভিত্তিতে করার পরামর্শ দেন। উপাচার্যও তাদেরকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, সকলের মতামতের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়া হবে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ¯্রােত অন্যদিকে বইলো। মাননীয় উপাচার্য নিজের মত করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হলেন। অধিকাংশ শিক্ষকদের মতামতকে উপেক্ষা করে কিছুসংখ্যক শিক্ষকের ভুল পরামর্শে তিনি নির্ধারণ করলেন উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের তারিখ। যার ফলশ্রুতিতে সকল শিক্ষকদের তীব্র বাধার সম্মুখীন হলেন। তিনি নিজের মত করে প্যানেল তৈরি করে উপাচার্য নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি নিজে ক্ষমতার আসনে আসীন থাকতে চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি এখনো মনে হয় জানেন না যে, নিজের এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় রাজত্ব করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তিনি জানা মতে অনেক ভালো একজন জ্ঞানী মানুষ তবে কেন এই ক্ষমতার অশুভ ভূত তার মাথায় চেপে বসেছে এটা ঠিক আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকছে না।

উপাচার্য নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আন্দোলনে আবারও মুখর হয়ে উঠেছে। কেননা জাকসু নির্বাচনসহ মেয়াদোত্তীর্ণ ডীন নির্বাচন এবং সিন্ডিকেট নির্বাচনের পর উপাচার্য নির্বাচন করার কথা। কিন্তু তিনি উল্টো পথের পথিক। যার জন্য শিক্ষকরা আবার আন্দোলনে নেমেছে। আর এই আন্দোলনের মাঝে সকল ধরণের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হয়ে রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা এক ভয়াবহ সেশনজটের সম্মুখীন হতে চলেছে। কিন্তু কেন? শিক্ষকদের এই অপরাজনীতির বেড়াজালে জিনিয়ারা আজ কঠিন সমস্যার সম্মুখীন কেন হবে? আর এর দায়ভার কেইবা গ্রহন করবে?

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মান জনক বিদ্যাপিঠগুলো আজ অস্থিরতার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে একদমই নিরব। শিক্ষকদের একর পর এক আন্দোলন চলবে আর আমাদের মত সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সব আন্দোলনের কুফল গ্রহণ করবে? তা কী করে হতে দেয়া সম্ভব! বাংলাদেশের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীরা ধর্মঘটের আহ্বান করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে অস্থিরতা। অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে উপাচার্যের পতন আন্দোলন । ছাত্রলীগের এক কর্মী নিজেদের মাঝে সংঘর্ষে নিহত হলে শিক্ষার্থীরা এবার শুরু করেছে তাদের দাবী আদায়ের আন্দোলন। বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে তাদেও সাফল্যের ধারা বাংলাদেশকে এ অনন্য খ্যাতির স্থানে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এখন কি চলছে? মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পতনের জন্য শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা একত্রে আন্দোলনে নেমেছে। এসব আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম নষ্ট করছে না বরং বিশ্বের দ্বারপ্রান্তে আমাদেও সম্মানটুকুও খুইয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার উন্নত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগুরুদের যদি এমন ক্ষমতার লালসা থাকে তাহলে এসব গুরুজনদের নিকট থেকে আমরা শিক্ষার্থীরা কী শিখবো! ক্ষমতায় যখন সকল কিছুর মূল সেখানে শিক্ষার্থীদের কথা ভাবার কী কেউ নেই? শিক্ষকদের অপরাজনীতির কারণে ছাত্রদের জীবন হতে গুরুত্বপূর্ণ সময় অযথাই ঝড়ে যেতে পারেনা। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর ও নৈতিকতার মাপকাঠি। তারা যা শেখায় তাই জাতি শেখে। কিন্তু সেই শিক্ষকরাই যখন তাদের স্বার্থ উদ্ধারে ছাত্রদেরকে অসৎ কার্যে লেলিয়ে দেয় তখন তাদের কাছ হতে জাতি ভালো কি আর আশা করতে পারে। তাই শিক্ষকদের উচিৎ সকল লালসা বাদ দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা একটু ভাবা। তাদের উচিৎ দেশটাকে আরও বেশি কিছু দেয়া কেননা তারাই জাতির পথপ্রদর্শক।