জাবিতে ছাত্রলীগ নামধারীদের সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, জমি দখল ও মুরগী চুরিসহ নানা অভিযোগ

monashah
Published : 6 May 2011, 06:07 PM
Updated : 6 May 2011, 06:07 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নামধারী বহি®কৃত ও অছাত্রদের হলে অবস্থান ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি বহি®কৃত ও অছাত্রদের সাথে পরীক্ষা না দিয়ে আদুভাইয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই ক্যাম্পাস ও আসপাশের এলাকায় অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, জমি দখল ও মুরগী চুরিসহ নানা রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে সন্ত্রাস করায় একদিকে ছাত্রলীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও নিরপেক্ষতা নিয়ে বারবার বিতর্কিত হতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে যানা গেচে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ নেতা শরীফুল ইসলামের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ফল প্রকাশিত হয়েছে এক বছর আগে। বর্তমানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলেও হলে অবস্থান করছে। গত মাসে তার নেতৃত্বে ওই হলে চার বৈধ ছাত্রকে লোহার রড, লাটি, হকিস্কিট ইত্যাদি দিয়ে মারপিট করে হাত পা ভেঙ্গে হল থেকে বের করে দেয়া হয় বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়। একই হলের অপর নেতা এসএম শামীমুল ইসলামের শিক্ষা বর্ষের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তিন বছর পূর্বে। মৌখিক পরীক্ষা না দিয়ে আদু ভাই হিসেবে সে হলে অবস্থান করছে। গত মাসে শরীফ ও শামীমের নেতৃ দিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ওই হল দখল করে। হল দখলের সময় সে একটি অস্ত্র ফেলে রেখে গেলে পরে পুলিশ অস্ত্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়। তারা দুই জন এ মাসের প্রথম দিকে হলের কর্মীদের নিয়ে জামশিং এলাকায় একটি জমি দখলে গিয়ে ধাওয়া খেয়ে ফিরে আসে বলে বিশ্বস্ত্র সুত্রে জানাগেছে। শহীদ সালাম বরকত হলে চয়ন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংগঠন কর্তৃক বহি®কৃত হলেও ছাত্রলীগের নামেই সব কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। ওই হলের অপর নেতা নেয়ামুল পারভেজে ও ভাসানী হলের নেতা আজগর আলীর শিক্ষা বর্ষের ছাত্রজীবন শেষ হয়েছে দুই বছর পূর্বে। তারা মৌখিক পরীক্ষা না দিয়ে আদু ভাই হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছে। চয়ন, আজগর ও পারভেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পান্দুয়া এলাকায় একাধিক দিন একটি জমি দখল করতে যেতে দেখা গেছে। গত ফেব্র"য়ারী মাসে চয়ন, আজগর, পারভেজ ও ভাসানী হলের সম্রাট ২০/২৫ জন ক্যাডার নিয়ে পার্শ্ববর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী গেরুয়ার চিহিৃত সন্ত্রাসী খোকন-মাসুদের সাথে একাত্রিত হয়ে গভীর রাতে পান্দুয়া এলাকার একটি মুরগীর ফার্ম হতে প্রায় ২লাখ পাঞ্চাশ হাজার টাকার মুরগী চুরি করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা জাচাই করে। এর আগের রাতে ওই ফার্মের যায়গা লীজ গ্রহিতাকে অপহরণ করা হয় বলে যায়গার মালিক সাংবাদিকদের জানায়। এখনো ওই ফার্ম লীজ গ্রহীতার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। আজগর ও পারভেজ সম্প্রতি ক্যাম্পাসে এক ঠিকাদারকে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা কার্পেটিং ও পুরাতন ভবন সংস্কারের মোট ১৯ লাখ টাকার কাজ পাইয়ে দিয়েছে বলে ছাত্রলীগের একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে। গেরুয়া বাজারে ওই ঠিকাদারের অফিসে তাদের প্রায়ই যাতায়াত করতে দেখা যায়। তারা ঢাকা আরিচা মহাসড়কে চলমান হানিফ, সুপার, গ্রীণওয়ে, গ্রেটওয়াল ও বোরাক পরিবহন থেকে প্রতি মাসে চার হাজার টাকা করে চাঁদা নেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একাধীক কর্মী জানিয়েছে। আজগর-পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অনিক ট্রেডার্সের কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করলে টাকা না দেয়ায় গত মাসে গভীর রাতে জুনিয়ম কর্মীদের দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে ৫শ্রমিককে লোহার রড, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে মারপিট করায়। ওই ঘটনার পর থেকে প্রশাসন কাজের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাহারায় বসালেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। এবিষয়ে আজগর ও পারভেজ বলেন, 'আমরা কোন কন্ট্রাক্টরকে মারপিটসহ কোন সন্তাসের সাথে জড়িত নই।'। সম্প্রতি তাদের জুনিয়র কর্মীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাস থেকে নামিয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির থেকে মায়ের চিকিৎসার টাকা ছিনতাই করে। ওই ব্যক্তি 'আমার মায়ের চিকিৎসার টাকা, নেবেন না প্লিজ', 'আমার মাকে বাঁচাতে পারবোনা।' ইত্যাদি বলে হাউমাই করে কাঁদতে থাকলে তাকে জোর করে অন্য একটি বাসে তুলে দেয় বলে প্রত্যাক্ষদর্শী এক সাংবাদিক জানায়। ১মে বঙ্গবন্ধু হলের শরিফুর ইসলাম ও সরকার আজগর আলী ১০/১৫জন ক্যাডারকে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ছাত্রলীগের যুগ্ন-সম্পাদক আবুল হাসনাত তালুকদারকে কুপিয়ে যখম করে। এনিয়ে তাদের নামে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করায় ছাত্রলীগ যেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার বির্তকিত হতে হচ্ছে।