ময়মনসিংহে হিজড়া

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 13 Sept 2014, 05:25 AM
Updated : 13 Sept 2014, 05:25 AM

ময়মনসিংহে হিজড়া । " ওগো পেয়ারে পোলা নাচাইবি " । ময়মনসিংহ জেলা , উপজেলা শহর এমনকি গ্রামাঞ্চলের উচ্চ বিত্ত মধ্যবিত্ত পরিবারে নবাগত বাচ্চার কান্না কানে আসলেই ফটকে কড়া নাড়ে ওরা । এরপর ঢোল বাজিয়ে তালি দিয়ে টাকার আবদার । ওদের আবদারে নবজাতকের অভিভাবক মহল কেউবা সাড়া দেয় হাসি মুখে । কেউবা আবার খালি হাতে ফেরৎ দেয়। বেশীরভাগ মানুষই নজজাতককে তুলে দেয় তাদের কোলে । দুহাতের বিচিত্র ভঙ্গির তালি আর ঢোলের তালে তালে কোরাস গায় ওরা। সাধারণ মানুষের মত ওদের গলার স্বর নয় । একটু আলাদা । মহিলাদের মত করে কথা বলে ওরা । গলার স্বর অনেকটা নারী পুরুষের মিশ্র ভঙ্গিতে । অনেক মানুষই ওদের গান শুনতে ভিড় জমায় । আবার অনেকে দূর দুর করে বিদায় দেয় ওদের । তখন বিষন্ন মুখে অভিষাপ দেয় । ওরা হিজরা কেউ বলে খোজা । ওদের নেই নির্দিষ্ট কোন পেশা । ওদের জীবন জীবিকা বড়ই করুণ । অস্পষ্টতার ছাপ ।

দুহাতে তালি , কোমড় দোলোনোসহ অদ্ভুত চালচলন পথিককে দৃষ্টি কাড়ে । ওদের মধ্যে ভদ্র অভদ্র দুটোই আছে । সাধারণ মানুষের মত ।কেউবা একটু ইতর । নিজের সমাজে ওদের খুবই মিল লক্ষনীয় । নপুংসক হিজরাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চেহারায় পুরুষ নারী উভয় লিঙ্গের মত দেখা গেলেও এরা সম্পূর্ন অক্ষম যৌনতায় । ব্যাপক পরিশ্রমি হিজরাদের বাড়িতে বসে থাকলে খাবার জোটে না । আবার ওরা বাড়িতে বসে থাকতেও নারাজ । পরিশ্রমি হিজরাদের অধিকাংশ মানুষই অবজ্ঞা করেন না । জমজমাট আসর জমাতে ওরা খুবই ওস্তাদ । নবজাতকের কান্নার শব্দে যেন ওরা সারা দেয় তেমনি বিয়ে , জন্মদিন উপলক্ষে দলবদ্ধভাবে ওদের সরব পদচারণা ।

আবার অনেক হিজরা দলবদ্ধভাবে না থেকে ব্যক্তিগতভাবে অন্য সাধারণ পেশাতেও নিয়েজিত থাকে । তবে ওরা স্বাধীনচেতা । ময়মনসিংহ শহরের হিজরা রুবি, মমতা, শারমিন, রতœা, হাসি, মালা, অন্তরা, দুলারী, রানী, লিপি , সুখী অকপটে স্বীকার করে বলে আমাদের জীবন জীবিকা সামাজিকভাবে খুবই কস্টের । আর মনের কষ্ট বলে বোঝানোর মত নয় । জন্ম থেকেই মনোকষ্টে জ্বলছে ওরা । এই কষ্ট ভূলতেই ওরা আনন্দ উল্লাস করে থাকে । এই হিজরারা রেলির মোড় , মেডিকেল গেইট এলাকায় কামাল জামালের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে । মাস পেরুনোর আগেই ১৬শ' টাকা ভাড়া গুনতে হয় । নপুংসক হিজরা নামের এই মানষরা সামাজিক লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার । তারা চায় সামাজিক সহযোগীতা ।