রাইতে বাড়ির বাইরে আইলে বাজান মাইর দিবো

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 9 Oct 2014, 06:14 PM
Updated : 9 Oct 2014, 06:14 PM

সকালে ঈদের নামাজ পইরা ক্ষেতে গেছি । ক্ষেতের কাম সাইরা বাড়িত আইলে বাজান ছিরা পুরান একটা জুতা দিছে । হেই জুতা বেইচ্চা কটকডি কিনছি ।

ক্ষেত থেইকা একটা ব্যাঙ ধইরা আনছি। ব্যাঙডারে বাইন্দা রইসুল, আমিন আর কোরবানের নিকট দিয়া আরেকটা ব্যাঙ খুজবার গেছিলাম । কিন্তু পাইলাম না। আরেকটা ব্যাঙ পাইলে মজা অইত । দুই ব্যাঙরে এক কইরা বিয়া দিতাম ।

সহালে মা রাইন্দা ঘানি টানতাছে । তেলের অর্ডার পাইছে । বাজান আর আব্দুল চাচা এহনো ক্ষেতে আছে । বাজান কইছে বাড়িত থন খাইয়া আবার ক্ষেতে আয় মেলা কাম পইরা রইছে । বাড়িত আইয়া ফডাফট খাইয়া ফাঁহে দোহানে গেছিলাম । আব্দুল চাচার দোহানের টেলিভিশনে ডিশ আছে । ঐ দোহানে অগি, টমি, ডরিমন এগুলা কাটুন দেখতে ভালা লাগে ।

দোহানে যাইয়া দেহি বড়রা ভূতের সিনামা দেখতাছে । দোহানদার চাচারে কইলাম চাচা একটু কাটুন দেইন দেহি । অমনি দোহানে বহা নুরুল চাচা আমার কানে চিমটি মারছে । আর ধমক দিয়া কইছে যা বেডা টেলিভিশন দেহা ভালা না। দোহানদার চাচা কইছে কাটুন দেখবার চাইলে দুপুরে আহিস তহন সবাই যাবো গা । টেহা লইয়া আহিস দোহানে লাড়ু, খুরমা, চানাচুর আরো অনেক ভালা ভালা মাল উডাইছি । কথাগুলো বলছিলো ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল দাওগাঁও ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কৃষক রায়হানের পুত্র সাইফুল (১০) । পারিবারিক অশিক্ষা আর আর্থিক দৈন্যতা সাইফুলের পরিবারের নিত্যসঙ্গী। মা জরিনাকে সারাদিন সরিষা তেল ভাঙ্গার ঘানি টানতে হয় । ঘানি টানার গরু নেই তাদের । তাই ফসলও উৎপাদন করতে হয় গরুর বিকল্প হিসেবে নিজেদেরকেই । দুপুরে বায়না ধরে মায়ের নিকট থেকে ১০ টাকা নিয়ে সাইফুল তার বন্ধু রইসুল , আমিন আর কোরবানকে নিয়ে দোকানে যায় টিভি দেখতে । দোকানদার চাচা ১০ টাকা রেখে একটি পটেটো চিপ্স ধরিয়ে দিয়ে বলে এহনও দোকান খালি অয় নাই । কাটুন দেখতে অইলে রাইতে আহিস । এইডা কেমনে সম্ভব চাচা । রাইতে বাড়ির বাইরে আইলে বাজান মাইর দিবো । তাইলে এহন যা কাইল আহিস। ঈদের দিন আর কার্টুন দেখা হলো না সাইফুলদের।

ঈদের নতুন জামা-কাপড় কোথায় তোমাদের প্রশ্নকরা হলে এই শিশুরা জানায়, ঈদের নামাজ পড়ার পর নতুন জামা-কাপড় আলমারীতে তুইলা রাখছি । এইগুলা পইরা খেলাধূলা করলে ময়লা হইয়া যাইব তাই । আত্নীয় স্বজনের বাড়ি বেড়াতে গেলেই কেবল নতুন জামা-কাপড় পড়া হয় তাদের ।ধনী আর গরীব নয় সকল অসহায় মানব শিশু কিছু সহজাত আচরণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার জন্য তার আরোও অনেক কিছু শিক্ষার প্রয়োজন আছে । কোন কিছু শিখবার ক্ষমতা ধীরে ধীরে ঘটে এবং তা অনেকখানি শিশুর মানসিক বিকাশের উপর নির্ভরশীল । খেলা ও টেলিভিশনে শিক্ষনিয় কিছু অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটে । অপুষ্টি শিশুর মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করে । শিশুদের মারধর করলে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় । মূলত শিশুর শিক্ষা তার মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য । তাই মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধতাসমূহ দুর করে শিশুর মানসিক বিকাশে সকলকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত ।