বানরের দাম ত্রিশ হাজার টাকা!

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 5 Nov 2014, 08:20 PM
Updated : 5 Nov 2014, 08:20 PM

বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মায়ের কোলে । বন্যেরা এখন বনে নেই । বন থেকে এদের ধরে আনা হয়েছে লোকালয়ে । সম্প্রতি এক ব্যক্তিকে দেখা গেলো বানরকে দিয়ে খেলা দেখাতে । লোকটি জানালেন , একটি বানরের দাম কমপক্ষে ত্রিশ হাজার টাকা । বানরের খেলা দেখিয়ে প্রতিদিন ৮শ' টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় । শিকারীদের কবলে পড়ে এবং ইকোসিস্টেমের কারণে বাংলাদেশের প্রাণীকূল আজ গভীর সংকটে । লেখায় তুলে ধরা হলো দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বন শালবনের বন্যপ্রানীর চিত্র । এই বন বৃহত্তর ঢাকার সাভার, গাজীপুর সদর , কাপাসিয়া, শ্রীপুর কালিয়াকৈর ,কালীগজ্ঞ, বৃহত্তর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ভালুকা,ফুলবাড়িয়া, টাঙ্গাইলের মধুপুর, ঘাটাইল, জামারপুর শেরপুর ও নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহ, রংপুরের মিঠাপুকুর,দিনাজপুর সদর,বিরামপুর ও হাকিমপুর ,রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকা, কুমিল্লার লালমাই,ব্রাহ্মনবাড়িয়া,কসবা ও আশুগঞ্জ জেলা ও উপজেলা সমূহে অবস্থিত। বনের আয়তন সোয়া লাখ হেক্টর। ইকোসিস্টেমের পরিবর্তনের কারণে এখন এই সমতল ভূমি বনের বন্যপ্রাণী অবলুপ্তি হচ্ছে। শতাব্দীকাল পূর্বেই বনে হরহামেশাই হাতি,হরিণ, চিতাবাঘ,নেকড়ে, বানর,হনুমান, বনবিড়ার,মাছ বিড়াল,খেক শিয়ার, খাটাস, ভোদর, বেজী,বন মহিষ, সম্বর হরিণ,মায়া হরিণ, বন্য শূকর,কাঠ বিড়ালী, সজারু, বন মোরগ, কাল তিতির, বাাঁডই, হরিয়াল, তিলা ঘুঘু, গোলাপী ঘুঘু, রাম ঘুঘু, পার ঘুঘু, ওয়াজ ঘুঘু, টিয়া , কুল ময়না,বক হাড়কিলা, অজগর, সোনাগুই, গোখরা, দারাজ,কাল নাগ, কচ্ছপ, প্রভৃতি বন্যপ্রাণী ও সরীসৃপরাজিকে অভয়ে বিচরণ করতে দেখা যেত।

ক্রমান্বয়ে মানুষের আবাসস্থল সৃষ্টি, শখ ও লোভ চরিতার্থকরণ, চোরাচালান ও বেআইনী শিকার,কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ এবং বিদেশী আগ্রাসী প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের কারণে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটায় উপরোক্ত প্রাণীদের মধ্যে অনেকগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে । অবশিষ্ট টিকে থাকা বন্য প্রাণীও অবলুপ্তির পথে। মধুপুর ও রসুলপুর জঙ্গলে এককালে বন্য হাতী শঙ্কার কারণ ছিলো । এরা আজ অবলুপ্ত। স্থান সংকুলানের প্রয়োজনে মানুষ বন কেটে আবাসভূমি সৃষ্টি ও দেশীয় বড় বড় পুরাতন গাছ কেটে বিদেশী আগ্রাসী প্রজাতির গাছ রোপন করায় বন্য প্রানীর স্থানের অভাব,প্রজনন, আহার ও বিশ্রাম ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ শখ ও লোভ চরিতার্থ করার জন্য অনেক দুর্বল প্রজননক্ষম প্রজাতির প্রাণীসমূহকে বন থেকে ধরে এনে আপনগৃহে পোষ মানায়। বনে অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে মানুষ বন্যপ্রাণী হত্যা করে। ফসল রক্ষার্থে প্রয়োগকৃত কীটনাশকের প্রভাবে মৃত কীট-পতঙ্গ খেয়ে মারা যায় অথবা প্রজননের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে ।

অভিজ্ঞমহল জানায়, বিদেশী রাবার(হেবিয়া) গাছ খেয়ে বন পশু পাখি নির্মম মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি বনের আকাশিয়া, ইউক্যালিপটাস,পাইন এসব বিদেশী প্রজাতির গাছ বন্যপ্রাণীর খাদ্য ও আবাসস্থল হিসেবে উপযোগী নয় । জানা যায়, ১৯৬১ সালে গঠিত বন্যপ্রাণী তহবিল সমতল ভূমি বনের অবলুপ্ত প্রাণীদের রক্ষার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয়নি বলেও অনেকাংশে এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করে । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আইন, শিক্ষাদান, নির্ধারিত বনাঞ্চল সৃষ্টি, উদ্যান প্রতিষ্ঠা , শিকার সংরক্ষিত এলাকা সৃষ্টি, বন্যপ্রাণীর নিবাস এবং বিনোদন পার্ক স্থাপন । সমতল ভূমির বন , সুন্দর বন এবং পার্বত্য চট্রগ্রামে ২৬১ দশমিক ৮৯ বর্গমাইল অঞ্চল বন্য প্রাণীর নিবাস হিসেবে নির্ধারিত হয় । ১৯৬২ সালে মধুপুরে ও ১৯৭৪ সালে সালনায় ৩৩ হাজার ২৪১ একরে দুটি ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলা হয়। মধুপুরের লঘুরিয়ায় ১ বর্গমাইলের চিড়িয়াখানা সৃষ্টি করা হলেও অর্থাভাবে তা বন্ধ হয়ে যায় ।একজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ জানান, ফুলে পরাগ রেণুর উপস্থাপন এবং বীজ ও ফল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে উদ্ভিদকুল তার বংশ বৃদ্ধি করে থাকে । বিশেষ উদ্ভিদের পরাগায়ন একটি বিশেষ প্রাণী দ্বারা সম্পন্ন হয় । অপরপক্ষে নির্দিষ্ট ধরনের ফল ও বীজ ভক্ষণ করে একটি প্রাণী বেঁচে থাকে । আবার ঐ সকল বীজ মলত্যাগের সময় মাটিতে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে গাছ সৃষ্টি হয় । নির্বিচারে বণ্যপ্রাণী হত্যার কারনে পরাগায়ন অথবা বীজ বিসরনে নির্ভরশীর সকল উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না। বিশেষজ্ঞমহল জানান, অর্থনৈতিক , পরাগায়ন ও বীজ বিসরণ, খাদ্য, শিক্ষা , বৈজ্ঞানিক কারণ ছাড়াও চিত্তবিনোদনের ক্ষেত্রে বণ্যপ্রাণী বিশেষ ভূমিকা পালন করে । তাই এদের সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।