১৯৬৪ সালে জন্ম তিনিও মুক্তিযোদ্ধা!

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 19 Oct 2014, 05:08 PM
Updated : 19 Oct 2014, 05:08 PM

১৯৬৪ সালে জন্ম তিনিও মুক্তিযোদ্ধা! মুক্তিযুদ্ধকালীন বয়স পনের হলে মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে যাদের বয়স ১৫ বছর তারাই কেবল মুক্তিযোদ্ধা । যাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা নন, এমন বিধান রেখে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা ঠিক করা হয়েছে। নি:সন্দেহে এটি সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। চাই বাস্তবায়ন। এই উদ্যোগের সাথে স্বাধীনতা বিরোধী অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেট থেকে বাদ দেয়া হলে আরো ভালো হতো । একটি উদাহরণ তুলে ধরছি । মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংবলিত বাংলাদেশ গেজেটে ১৯৬৪ সালে জন্ম নেয়া ব্যক্তিও মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। এ ব্যাপারে আজ থেকে গত দুই বছর আগে লিখিত অভিযোগ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অভিযোগকারী ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহমুদ আতা ইলাহী সূত্রে জানা যায়, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে প্রকাশিত এই গেজেটের ১১১৮ নম্বর ক্রমিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ৭ নং ঘোগা ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের আফসর আলীর পুত্র ইউসুফ আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইউসুফ আলীর এসএসসি সনদপত্রে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৬ আগস্ট ১৯৬৪।

এই হিসেবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে তার বয়স ছিল ছ' বছর। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংবলিত বাংলাদেশ গেজেটে চিহ্নিত রাজাকারের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তার অভিযোগ। পাশাপশি মুক্তিযুদ্ধের অনেক সংগঠক ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এই গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে ঐ সময় তদন্ত ও যাচাই-বাছাইসহ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করে স্বাধীনতা বিরোধী অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেট থেকে বাদ দেয়ার জন্য তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছিলেন, আতা ইলাহী । গত ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তিনি এই আবেদন জানান। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও গেজেটের ১০৫০ নম্বর ক্রমিকে মুক্তাগাছা উপজেলার পাড়াটঙ্গী গ্রামের মৃত মালে ফরাজীর পুত্র আবুল ফরাজী ও ১০৫১ নম্বর ক্রমিকে একই গ্রামের মৃত মোদক শেখ এর পুত্র আব্দুল গফুর এবং ৪৪১১ নম্বর ক্রমিকের চর লাঙ্গুলিয়া গ্রামের জৈমত শেখের পুত্র আব্দুল শেখকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অপরদিকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মৌলভী ইয়াকুব আলী, মরহুম এ্যাডভোকেট শামছুল হক, আবু তাহের সরকার ছানা মিয়া, প্রয়াত শিশির কুমার রক্ষিত, বছির উদ্দিন, হাবিবুর রহমান লল, মরহুম শরাফ আল আজাদ, ইদ্রিস আলী সরকার, এমএ বারী, আবু সাঈদ, শমশের আলী, মরহুম আব্দুল হক ও নূর মাহমুদসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক গণপরিষদের সাবেক সদস্য ও মুক্তাগাছা পৌরসভার সাবেক মেয়র খোন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ এসব নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, এটি দুঃখজনক। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এ্যাডভোকেট ইদ্রিস আলী আকন্দ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ময়মনসিংহ জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রব আক্ষেপ করে জানান, কেবল রাজাকারই নয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মেয়াদে অসংখ্য স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ সময় বাদ পড়েছেন অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তাগাছার তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য কেএম খালিদ বাবু তদন্ত ও যাচাই-বাছাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ পত্র দিয়েছিলেন । কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অভিযোগ আজো লাল ফিতায় বন্দি ।