বিতর্কিত নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ দলের চেয়ে দেশ বড় মনোভাব

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 17 Oct 2014, 05:00 PM
Updated : 17 Oct 2014, 05:00 PM

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে । নতুন নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহে নামছেন সংগঠনটির পদবঞ্চিত নেতারা । গতকাল বিএনপি অফিসের সামনে ককটেল বিষ্ফোরনের ঘটনাও ঘটেছে । নতুন কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত অনেকের বিরুদ্ধে হত্যামামলা, সংগঠনের মিছিলে গুলি , চাঁদাবাজি, বিবাহিত, ঠিকাদার , চাকরিজীবি , দলের টাকা আত্নসাতের অভিযোগ এমন সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে । নেতৃত্ব সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ সেখানে এই নেতারা কি করে মনোভাব পোষন করবেন ব্যক্তির চেয়ে দল বড় , দলের চেয়ে দেশ বড় । ছাত্র নেতৃত্বের এই কলঙ্ক যে শুধু ছাত্রদলেই তা নয় । সকল রাজনৈতিক দলের ছাত্রনেতা এই মনোভাব পোষন করেন এমন ছাত্রনেতার সংখ্যা খুব কমই দেখা যায় । যেটা দেখা যায় সেটি হচ্ছে , নিজের দল আঁকড়ে ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকা । এর ফলে দল ও দলের নেতা কর্মীদের অন্যায় সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকার প্রবনাতা লক্ষ্য করা যায়। যা বুমেরাং হয়ে নেতৃত্বের উপর আঘাত হানে । নেতৃত্ব জনপ্রিয়তা হারিয়ে নি:স্ব হয়ে পড়ে । দলীয় কর্মীদের স্বার্থপরতা এখানে প্রবল । রাজনৈতিক ক্ষমতাকে তারা অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চায় । তাই তাদের দাবী অবাধ ও অতিমাত্রায় হয়ে দাঁড়ায় । এসব দাবী আদায়ের বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘাত, অবিশ্বাস ও হানাহানি দেখা দেয় । দলের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিশৃংখলা আর সেই বিশৃংখলার প্রকাশ ঘটে আইন- শৃংখলা পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে । ফলে নেতৃত্ব অনেক ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়ে । এই বিতর্কিত নেতারা কি জানেন যে, নেতৃত্ব একটি সামাজিক গুণ , যা কোন যৌথ কর্ম প্রচেষ্টাকে সংহত ও পরিকল্পিত উপায়ে সার্থক করতে প্রায়াসী হয় । ছাত্র নেতৃত্ব হলো সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সকল ছাত্রদের সহযোগী হতে প্ররোচিত করার কাজ । ছাত্রদের সঠিকভাবে পরিচালিত করে জাতির ললাটে গৌরবের জয়টিকা পরাতে ছাত্রনেতাদের সুযোগ্য নেতৃত্ব অত্যাবশ্যক । জনপ্রিয় নেতাই গণতন্ত্রের বাহন ।সন্মোহনী নেতৃত্বকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বলা হয় । এ ধরনের নেতা নানাবিধ পন্থায় অপরকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে । এরূপ ছাত্রনেতার কাজ হল তার প্রতি ছাত্রদের আস্থা গড়ে তোলা এবং সেই আস্থাকে কাজে লাগিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করা । সামাজিক গুণ,জন্মগত গুণ ও সাধনালব্ধ গুণ যোগ্যতার বিকাশ ঘটায় এবং নেতৃত্ব উন্নত ও বলিষ্ঠ হয় । অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সহনশীলতা, আতœসংযম, কঠোর ও কোমলতা, দুরদৃষ্টি , সুবক্তা, উত্তম শ্রবণকারী , নিরপেক্ষতা , ন্যায়নীতি , দায়িত্ববোধ নেতৃত্বকে আকর্ষণীয় করে তুলে । আমাদের দেশে এমন ছাত্রনেতার সংখ্যা খুবই কম । ছাত্র নেতৃত্ব ছাত্রদের সুখ- দু:খ ও আশা -ভরসাকে এমনভাবে ব্যক্ত করেন যেন তিনি ছাদের বন্ধু, পথ প্রদর্শক ও রক্ষাকর্তা । ছাত্ররা তার কথা ধৈর্য ধরে শোনে এবং গ্রহণ করলে তাকে সমর্থন করে । তার পিছনে কাতারবন্দী হয় । এরূপে নেতৃত্ব যখন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে তখন তিনি ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেন । তাঁর কথাবার্তা শুনে মনে হয় যেন তিনিই ছাত্র এবং ছাত্রদের কথাই তার কথা । সন্মোহী বক্তৃতা দিয়ে নেতৃত্ব ছাত্রদের অবিভূত করে ফেলেন । ফলে তারা নেতাকে তাদের ভাগ্যের নিয়ন্তা ভাবতে থাকে । মনে করে যে, নেতা তাদের মনের কথা ও দাবী অনেক বেশী বুঝেন ও জানেন এবং সে দাবী আদায়ের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করে দেবেন । এরূপ বিশ্বাস বোধ গড়ে তুলে নেতৃত্ব ছাত্র রায় অর্জন করেন । ছাত্রদের কোন সমস্যা ও সংকট মোচনে নেতৃত্ব যে কর্মসূচী দান করেন তাকে ছাত্র রায় বলে চালিয়ে দেন এবং কর্মসূচীকে গণছাত্ররায়ে পরিণত করার জন্য রাজনৈতিক হাতিয়ার প্রয়োগ করেন । সভা- সমিতি , শোভাযাত্রা , হরতাল , আন্দোলন , ঘেরাও ইত্যাদি হাতিয়ার প্রয়োগ করে এমন অবস্থা সৃষ্টি করে যে, রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচীগুলো ছাত্রদের দাবীতে পরিণত হয়ে যায় । এসব কর্মসূচী ও দাবীর প্রতি ধীরে ধীরে ছাত্রদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে আর দাবী জোরদার হয় । এরূপে নেতৃত্ব রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে ছাত্ররায় সৃষ্টি করেন , নিজের প্রতি আস্থা গড়ে তোলেন এবং সমাজ ও সরকারকে ছাত্র রায় মানতে বাধ্য করেন । আমরা কত দুর্ভাগা ; আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয় ছাত্ররাই ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে । নেতাদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্যা প্রচলিত সমস্যাকে আরো প্রবল করে তুচ্ছ । প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টির অভাবের কারণে সমস্যার তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী হচ্ছে না বরং তা প্রকট আকার ধারণ করে দেশকে সংকটের মুখে নিক্ষেপ করছে । নেতৃত্বের দায়- দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার শেষ নেই । সজাগ ও সচেতন ভাবে কাজ না করলে নেতৃত্বের সফলতা অর্জন করা যায় না ।