মফস্বলে সাংবাদিকতা পেশা আমার নেশা

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 4 Nov 2014, 03:51 PM
Updated : 4 Nov 2014, 03:51 PM

সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা ।তবে মফস্বল এলাকায় যদি কেউ এটাকে পেশা হিসাবে নিয়ে রুটি রুজির চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে এটা হবে তার মস্তবড় ভুল।তখনএ পেশাটিকে কুলশিত করা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না ।মফস্বল এলাকায় থেকে আমি সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত কম করে হলেও দেড় যুগ ।যদিও এটা আমার পেশা নয় বলা যেত পারে নেশা ।বাংলাদেশে কয়টি সংবাদমাধ্যম আছে যারা মফস্বলের সাংবাদিকদের স্বচ্ছলভাবে চলার মতো পারিশ্রমিক দেন । আমার জানা মতে, জেলা পর্যায়ের কিছু সাংবাদিকদের মোটামুটি চলার মত সন্মানী দেয়া হলেও উপজেলায় যৎসামান্ন । এই সন্মানী দিয়ে সাংবাদিকদের সংসার চালানো তো দূরের কথা নিজেরই চলার উপায় নেই । দুই হাজারের দশকে ইচ্ছা জাগে মফস্বলের সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ার । অনেক সাংবাদিক আমার প্রস্তাবে রাজি হন । তন্মধ্যে একজন দাবী করে বসলেন, আপনার সাথে সংগঠন করতে পারি এক শর্তে । আমাকে প্রতিদিন আড়াই কেজি করে চালের ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা । সংগঠন করতে এই শর্ত ! বেচারা একজন পেশাদার সাংবাদিক ।সাংবাদিকতা করে সংসার চলাতে হয় ।মাস গেলে পত্রিকা কর্তৃপক্ষকেও কিছু দিতে হয় । কথাগুলো বললেন, অপর একজন সাংবাদিক। পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে দিতে হয় মানে বুঝলাম না । আপনার বোঝার কথাও না দাদা । কারণ , আপনারা তো কোটিপতি মানুষ সাংবাদিকতা করেন শখে । আর তার করতে হয় টাকা রোজগারের জন্য । পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে মাসে মাসে কিছু না দিলে প্রশাসন, পুলিশ,কালোবাজারী , দুর্নীতিবাজ , অবৈধ কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত তাদের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করবে না । আচ্ছা এটা বুঝলাম ,কিন্তু সংগঠন করলে চাল দিতে হবে কেন? উত্তরে বললেন , সংগঠন করলে আয় হবে সংগঠনের কমেযাবে তার ব্যক্তি আয় তাই ।

হায়রে সাংবাদিকতা! এই যদি হয় তাহলে অসহায় মানুষ ও দেশের কি হবে প্রশ্ন করলে অপর সাংবাদিক বললেন এটা আপনি ভাবুন। এটা আপনার কাজ । তারা ভবুক দুনীর্তিবাজদের নিয়ে। আমাদের অঞ্চলে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী ডাক্তারের (প্রয়াত)ছেলে সাংবাদিকতায় নাম লেখান । বেচারা সাংবাদিকতার নেশায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের সঞ্চিত সকল অর্থই শেষ করে ফেলেছেন একটি পাক্ষিক পত্রিকা চালাতে গিয়ে । এখন তার সংসার চলছে স্ত্রীর প্রাইভেট পড়ানোর অর্থে । আবার এমনও সাংবাদিক আছেন যিনি এক সময় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন। সাংবাদিকতায় এসে আজ তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক । চলেন প্রাইভেটকারে । ৬/৭টি আলিসান বাড়ি ও বহু জায়গাজমির মালিক তিনি এখন ।

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ,এই সাংবাদিকের কোনো লেখা পত্র পত্রিকায় দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার । শুনেছি তিনি ফোন করলে মানুষের সরকারী বেসরকারী চাকুরী ,বদলী পদোন্নতিসহ অনেক কিছুই হয় । তার ফোনে এমপি মন্ত্রীরা পর্যন্ত তটস্থ । সম্প্রতি তার এক সহকর্মীর ভালো নাম ডাক হয়েছে । তাবে সহযোগী এখনও অর্থের সান্নিধ্য পাননি । বেচারা এক বাড়িতে লজিং থাকেন । সকালে ঐ বাড়িতে কিছু জল আহার করে বের হন । বেশির ভাগই সারাদিন উপোষ দিয়ে রাতে বাড়ি ফেরেন । মাঝে মধ্যে কোন ভূক্তভোগীর সন্ধান পেলে দুপুরের আহাড়টা হয়ে যায় । বেচারা প্রায় ৪০ বছরে পা রাখতে চলেছেন । এভাবে চললে কবে বিয়েথা আর কবেইবা সংসারের হাল ধরবেন তা আমার বোধগম্য হয় না ।

এখন বলতে পারেন, কাক কাকের মাংস খায় না । আপনি সাংবাদিক হয়ে সাংবাদিকের সমালোচনা করছেন । আমি বলবো, আমার দৃষ্টিতে এরা সাংবাদিক নয় । এরা সাংবাদিক জাতির কলংক । গতকাল বিডি নিউজে একটি প্রতিবেদনে দেখলাম ৫শ' টাকায় সাংবাদিকের কার্ড পাওয়া যায় । এই সাংবাদিকরা প্রথমে পরিচয় পত্র সংগ্রহ করেন । পরে ভূমি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, থানা , জুয়ার আসর ,খাদ্যগুদাম প্রভৃতি অফিসে গিয়ে কার্ড দেখিয়ে মোটা টাকা আদায় করেন । সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে টিআর, কাবিখা প্রভৃতি প্রকল্পের টাকা আত্নসাত করেন । মানুষ এসমস্ত কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে তাদের সম্বোধন করেন সাংঘাতিক বলে । এই সাংঘাতিকদের কারণে সাংবাদিকরা আজ কূলষিত ।এর জন্য দায়ী আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা আর স্টার নিউজের মতো অনলাইন পত্রিকা। এদের অপতৎপরতা রুখতে না পারলে এক সময় নেশায় আক্রান্ত সাংবাদিকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না ।