মুক্তাগাছার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এক জমিদার পরিবার সংকটে

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 21 March 2015, 04:28 PM
Updated : 21 March 2015, 04:28 PM


ছবি ক্যাপশন: মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ): দৈন্যদশায় জমিদার পরিবার

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এক জমিদার পরিবারের করুণ দশা। মুক্তাগাছাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে তাদের জমিদারীরর স্থাবর অস্থাবর বহু সম্পত্তি থাকলেও তা আজ বেদখলে। ঐ পরিবারের সন্তানের লেখাপড়া চলছে কলেজ কর্তৃপক্ষের দয়ায়। পরিবারটির সংসার চলছে সুপারি, নারিকেল বিক্রি করে।

বলছি মুক্তাগাছার কিংবদন্তিতুল্য জমিদার বকুল কিশোর আচার্য চৌধুরীর (ডাবল এমএ ) পরিবারের কথা ।জানা যায়, ১৯৭১ সালে নিজ দেহরক্ষীসহ প্রথমে রাজাকার কর্তৃক ধৃত এবং নিঁখোজ । পরবর্থীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি ব্রহ্মপুত্র নদ সংলগ্ন স্থানে হত্যা করা হয় বকুল আচার্য চৌধুরীকে ।
যিনি ছিলেন বর্তমান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প সেই বাড়ির মালিক। মুক্তাগাছায় বসবাসকারী তার পুত্র দেবাশীষ আচার্য চৌধুরী (টুবলু) ২০০২ সালে স্ত্রী ও তিন মেয়ে রেখে পরলোক গমণ করেন । টুবলুর মৃত্যুর পর তার পরিবারে নেমে এসেছে দৈন্যতা । শ্বশুরের একটি কাচারি বাড়িতে করুণভাবে বসবাস করছেন টুবলুর শ্রিপ্রা আচার্য চৌধুরী (৫০) এবং তার মেঝো মেয়ে দিপাঞ্জনা আচার্য চৌধুরী (আনন্দ মোহন কলেজের এমএ শেষ বর্ষের ছাত্রী) ও ছোট মেয়ে দেবজানী আচার্য চৌধুরী পিয়ালকে নিয়ে (হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের এইচ এসসি পরীক্ষার্থী ) । শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজে পড়–য়া বড় মেয়ে অর্পিতা আচার্য চৌধুরীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় স্বামীর সাথে বর্তমানে দিনাজপুর বসবাস করছেন।

শিপ্রা আচার্য চৌধুরী দু:খ করে বলেন, বলতে লজ্জ্বা লাগে আমরা এখন নামেই জমিদার পরিবার । সংসার চলছে ভাঙ্গা কাচারি বাড়ির গাছের সুপারি , নারিকেল বিক্রি করে ।
দু'বেলা দুমুঠো অন্নই যেখানে জুটছে না সেখানে মেয়েদের লেখাপড়া । চলছে অতিকষ্টে । হাজী কাশেম আলী কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের আর্থিক দৈন্যতার কথা বিবেচনা করে ছোট মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ফ্রি করে দিয়েছে । দয়া দাক্ষিন্যে আমাদের পরিবারকে চলতে হবে তা কোনদিনই ভাবিনি । এখনও আমাদের যে সম্পত্তি আছে তা দিয়ে ভালোই চলতে পারবো । কিন্তু এগুলি বেদখলে থাকায় সে সুবিধাটুকু থেকেও আমরা বঞ্চিত ।

তিনি জানান , ১৯৫৩ সালে আমার শ্বশুরকে উনার ১৪ জন ভাই বোন বাংলাদেশে আমাদের সকল সম্পত্তি ঘরোয়াবণ্টন নামার মাধ্যমে উইল করে দেন । বিনিময়ে উনার ভাইবোনেরা আমাদের ভারত ও পকিস্তানের সম্পত্তি নিয়ে নেন। ১৯৬৮ সালে আমার শ্বশুর আমার স্বামীর নামে ঐ সম্পত্তি উইল করে দেন । সরকার ১৯৭৫ সালে আমাদের বাড়িসহ (বর্তমানে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প) ৪ একর সম্পত্তি একোয়ার করে । মূল্য নির্ধারন করে সাড়ে ৩লাখ টাকা । সেই টাকা আমার স্বামীর নামে বরাদ্দ হয়েছে।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আজো সেই টাকা আমরা পাইনি । ময়মনসিংহ এলএ অফিস আমার স্বামীর নামে চিঠি দিয়েছে এটা এখনও অবমুক্ত হয়নি । তিনি বলেন, এখন খ গেজেট এসেছে । গত এক বছর ধরে অফিসে ঘোরাফিরা করে যাচ্ছি । টাকা পাচ্ছি না । যথাসময়ে টাকাগুলি পেলে আমাদের খুবই উপকারে আসতো ।

শিপ্রা আচার্য চৌধুরী বলেন , ময়মনসিংহের ভালুকা, গফরগাঁও, গাজীপুর, জয়দেবপুর, বগুড়া, বরিশাল, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে এখনও আমাদের ভূ সম্পত্তি রয়েছে ।
সেখানটার দখলদারগণ আমার কাছে আসেন । তারা নগদ টাকা দিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর চান । কিন্তু আমি টাকা নেই না । স্বাক্ষরও দেই না । আমি তাদেরকে বলি , তোমরা আমাদের নামে ঝামেলামুক্ত কাগজ তৈরি করে নিয়ে আসো, তারপর বিক্রির কথা ভাববো । না বুঝে না জেনে স্বাক্ষর দিলে ঝামেলা হবে এমন চিন্তা করি । আমি চাই না রাজবংশের উপর চুনকালি মাখতে ।

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আমার আর্তি বিবেচনায় নিয়ে সহযোগীতায় এগিয়ে আসবেন এটাই চাওয়া তার ।