মুক্তাগাছায় মে দিবস পালন

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 1 May 2015, 06:20 AM
Updated : 1 May 2015, 06:20 AM

ছবি ক্যাপশনঃ মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ), মটর শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে র‌্যালি

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় র‌্যালি, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মে দিবস পালিত হচ্ছে । শ্রমিক লীগ , জাতীয় শ্রমিক পার্টি, মটর শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন দিনটি পালন করছে। এবারের মহান মে দিবসের শ্লোগান ছিল- শ্রমিক -মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি।

দিনের কর্মসূচি শুরু হয় শুক্রবার সকাল ৯টায়। মুক্তাগাছা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে থেকে র‌্যালির আয়োজন করে মুক্তাগাছা উপজেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়ন। র‌্যালিটি মেইন রোড হয়ে শহরের মহারাজা রোড, দরিচারআনি বাজার, চৌরঙ্গীর মোড় ,টান বাজার আটানী বাজার , বড় মসজিদ রোড হয়ে মার্কেট থেকে বের হয়ে মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সামনে এসে শেষ হয়।

র‌্যালিতে মুক্তাগাছার এমপি ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি , মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. উম্মে আফসারী জহুরা, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ্যাডভোকেট বদর উদ্দিন আহমেদ , শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান , সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমান পেল্টু প্রমুখ ।

অনুরুপ কর্মসূচী পালন করে মুক্তাগাছা বিড়ি ,রাজ মিস্ত্রি,দর্জি, কুলি,হোটেলসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ।

জানা যায়,আজকের দিনে শ্রমিকরা যতটুকু সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে সেটা দুয়েক দিনের অর্জিত ফসল নয় ৷ বহু ত্যাগ আন্দোলন ও প্রানের বিনিময়ে আজকের শ্রম ব্যবস্থা ৷

১৪শ থেকে ১৫শ শতকে ইউরোপ মহাদেশে ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ধারায় প্রথম অঙ্কুরোদগমের সুচনার সময় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার গর্ভে শ্রমিক শ্রেনীর উৎপত্তির পূর্বশর্ত পুন্জীভূত হয় ৷
১৬শ শতকের পূর্ব পর্যন্ত ভাড়াটে জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশই ভাড়াটে শ্রমিক ছিলো ৷ কিন্তু জোরপূর্বক কৃষকদের ভূমিহীন করার মাধ্যমে শ্রম বাজার সৃষ্টি করা হয় ৷

প্রথমদিকে পুজিবাদীদের বিরুদ্ধে শোষিত শ্রমিকদের শুধু ব্যাক্তিগত প্রতিবাদ, স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ ও বিচ্ছিন্ন ধর্মঘটের ধরনে আত্বপ্রকাশ করে ৷ ১৮ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ও ১৯ শতকের গোড়ার দিকে ইংল্যান্ডে লুডিট নামে গনবিদ্রোহ ঘটে তবে সেটা তেমন ফলপ্রসূ হয়নি ৷

১৯শতক হতে ইউরোপে বুর্জোয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে ৷ ১৮৩১ সালে ফ্রান্সে লিয়োঁ শহরে শ্রমিকদের যে বিদ্রোহ ঘটে তা সরকারী সেনাবাহিনী নির্মমভাবে দমন করে ৷
১৮৪৪ সালে জুন মাসে সাইলেসিয়ায় স্থানীয় কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে বস্ত্রকল শ্রমিকদের বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে ৷ এটিও সামরিক বাহিনীর হাতে দমিত হয় ৷
১৯ শতকের চল্লিশ ও ষাটের দশকের বছরগুলোতে শ্রমিকদের মাঝারি মজুরী ছিল আগেকার একশ বছরের তুলনায় কম ও কর্মঘন্টা ছিলো ১৩-১৬ ঘন্টা ৷ বেতনসহ ছুটি তো দূরে থাক সাপ্তাহিক কোন ছুটিই ছিলোনা!

১৯ শতকের ৮০ দশকে অদক্ষ শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে ও ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের জন্য সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলে ৷ এই আন্দোলন দানা বেধে ওঠে ও ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে ৷
১৮৮৬ সালে ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বত্র মিছিলের ঢেউ বয়ে যায় ৷ গোটা শিকাগো শহর ধর্মঘটে বাধা পড়ে ৷ পুলিশ নির্মমভাবে গনবিক্ষোভের মোকাবেলা করে এতে ১১ জন গুলিতে নিহত হয় ৷ একদল শ্রমিক আদালতে দন্ডিত হয় ও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় ৷ অনেকের কারাদন্ড হয় ৷

শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে "মে দিবস" বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস"।

পহেলা মে সেই আন্দোলনের কথাই আমাদের স্বরণ করিয়ে দেয়। ১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেনী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে। রাশিয়াসহ পরবর্তীকালে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে।

জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (অরগানাইজেশন বা আই .ত্রল.ও) প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে এবং সকল দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহবান জানায়। এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ আই.এল.ও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেনীর প্রাধান্যের কারনে অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক দেশে বেশ গুরুত্বও সংকল্প সহকারে মে দিবস পালন করা হয়।