টাঙ্গাইলে নিহত মোশাররফের ময়মনসিংহের বাড়িতে কান্নার রোল

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 14 May 2015, 06:31 PM
Updated : 14 May 2015, 06:31 PM

টাঙ্গাইলে নিহত মোশাররফের ময়মনসিংহের বাড়িতে কান্নার রোল


ছবি ক্যাপশন: মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) : নিহত মোশাররফ, ক্রন্দনরত নিহত মোশাররফের বাবা মা

টাঙ্গাইলে নিহত মোশাররফের ময়মনসিংহে বাড়িতে কান্নার রোল । টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স অধ্যয়নরত মেধাবী ছাত্র মোশাররফ হোসেন (২৫) প্রতিপক্ষ ছাত্রদের হামলায় গতকাল বুধবার নিহত হন ।

ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় মানকোন ইউনিয়নের মুজাটি চরপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি । মৃত্যুর খবরে মুক্তাগাছায় নেমে আসে শোকের ছাঁয়া । চলছে কান্নার রোল ।

মুক্তাগাছা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মচারী তার পিতা শহীদ । শহীদ জানান, বুধবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে মোশাররফের মুঠোফোনে কল করি । মোবাইল রিসিভ করে মণির নামে একজন । মণির তাকে ফোনে বলে, তোর পোলা জাওড়া ছিলো তাই তারে আমরা মাইরা ফালাইছি ।

মোশাররফের মা গৃহিনী সেলিনা খাতুন জানান, প্রতিদিন সকালে ফোন করে মোশাররফের খোঁজ খবর নেই । গতকালও ফোন করি । পত্তুত্তরে সে বলেছে , আম্মা আমার চিন্তা করো না আমি ভালো আছি ।

মোশাররফের একমাত্র ছোট ভাই ৭ম শ্রেনীর ছাত্র আজিজুল্লাহ আল মারুফ বলেন, ভাইয়া আমাকে খুবই আদর করতেন । এই বলে বাড়ির সকলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন । বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা ।

মোশাররফের পারিবারিক সূত্র জানায় ,বুধবার রাতে মোশাাররফের লাশ ঢাকা জেলার সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছিলো । আজ বৃহস্পতিবার তার লাশ মুক্তাগাছার মুজাটিতে আনা হবে । এরপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে ।

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মোশাররফ নিহত ও দুইজন আহত হয়েছেন।

আহত দুইজন হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র ফয়সাল ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বাঁধন।

এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শামসুল হক শিবলী।

সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। যেকোনো সময় উভয়গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত মোশাররফ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মোজাটিচর পাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও নিহত মোশাররফ নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দাবি করে আসছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. খাদেমুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বুধবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় ছাত্রলীগের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনির গ্রুপ ও মোশারফ গ্রুপের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে উভয় গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। মনির গ্রুপের লোকজন মোশাররফ, বাঁধন ও ফয়সালকে কুপিয়ে আহত করে। সংঘর্ষের সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণও ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ক্যাম্পাসে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আহতদের টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মোশাররফের অবস্থার অবনতি ঘটে। তখন তাকে জরুরিভাবে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে রেফার করা হয়। সাভারের কাছাকাছি গেলে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে স্থানীয় এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. আশরাফ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন , আহত তিনজনের মধ্যে মুক্তাগাছার মোশাররফের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তাকে জরুরি চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার করা হয়। আহত দুই জন টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা করে। সভায় আগামী শনিবার সব বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

টাঙ্গাইল মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ।

সূত্র জানায়, গত ৯ মে শনিবার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে পুলিশ বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হল থেকে ।