ময়মনসিংহ ও মুক্তাগাছা মুক্ত দিবস

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 9 Dec 2015, 06:19 AM
Updated : 9 Dec 2015, 06:19 AM


১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ ও মুক্তাগাছা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর যৌথর নেতৃত্বে ময়মনসিংহ শত্রুমুক্ত হয়।

এই দিনটি ময়মনসিংহবাসীর জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যময় ও অবিস্মরনীয়। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দীর্ঘ ৯মাস ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক খন্ড যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ৯ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ব্রহ্মপুত্র পুত্র নদের অপর পাড় শম্ভুগঞ্জে এসে অবস্থান নেয় ও মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পাক সেনাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ার চুড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

পরদিন ১০ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিবাহিনী খবর পায় ব্রম্মপুত্র নদের উপর রেলওয়ে সেতুটি ডিনামাইট দিয়ে পাকবাহিনী ধবংস করে দিয়েছে। ভোরে পাকবাহিনী ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়েছে। সকাল ১০টায় মুক্তিবাহিনী শম্ভুগঞ্জ ফেরীঘাট পার হয়ে বীরবেশে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে। সে সময় আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান মুক্তিবাহিনীর ও ব্রিগ্রেডিয়ার সান সিং বাবাজী মিত্রবাহিনীর নেতৃত্বদেন।

মুক্ত ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে একে এক সবাই জমায়েত হতে থাকে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ ময়দানে। স্বাধীন দেশের পতাকা উড়ানো হয়। এইদিন একদিকে ছিল বিজয়ের অনাবিল আনন্দ অপর দিকে ছেলে হারা মা, ভাই হারা বোন, স্বামী হারা স্ত্রীর ক্রন্দন। তবুও সবকিছুর মাঝে বিজয়ের আনন্দ উদ্বেলিত করে ছিল মুক্তিকামী মানুষদের। মহান ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৬ ও ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে উজ্জীবিত ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাড্তির আশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে মনোনীত করার পর থেকেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নানা অজুহাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত করায় প্রতিটি বাঙ্গালী তাদের স্বাধীকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্নস্থানে প্রকাশ্য ভাষণ ও গোপন নির্দেশের মাধ্যমে গোটা জাতি বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রশক্ষিণ গ্রহণ করতে থাকে । মহান নেতার নির্দেশে জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ময়মনসিংহে গঠিত হয়। ২ মার্চ জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানে অভিবাদন জানাবেন আগের দিন থেকে মাইকে ময়মনসংহ শহরব্যাপী ঘোষণা হতে থাকে ।

জয় বাংলা বাাহনী প্রধান আবুল হাসেমের নেতৃত্বে জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সারিবদ্ধভাবে শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন হল চত্বরে সমবতে হয়ে আওয়ামী লীগরে সংগ্রামী নতো রফিক উদ্দনি ভূইয়াকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানান। মুর্হুমুহু জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা উত্তোলন করনে তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ । অভিনন্দন অনুষ্ঠান পরচিালনা করনে তৎকালীন জলো ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান বাংলাদশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী আশরাফুল ইসলাম।

এ ছাড়াও উপস্থতি ছিলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, নেতাকর্মীদের মধ্যে জনাব শামছুল হক, এডভোকটে আব্দুর রাজ্জাক, ইমান আলী, আনন্দমোহন কলেজের ভিপি আব্দুল হামিদ, মতিউর রহমান, আফাজ উদ্দনি, কমর উদ্দনি, এডভোকটে আনোয়ারুল কাদির, সৈয়দ আহমদ, চাঁন মিয়সহ অন্যান্য রাজনতৈকি নেতৃবৃন্দ। ৭ র্মাচ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে ''এবারের সংগ্রাম আমাদরে মুক্তির সংগ্রাম, এবাররে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবলো করতে হবে'। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহবানের পরেই বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযদ্ধের জন্য সংগঠতি হতে থাকে । অবসরপ্রাপ্ত সেনা, পুলিশ এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ অত্যন্ত গোপনে অস্ত্র চালনা ও রণ কৌশল বিষয়ে শিক্ষা দান করনে। ২৫ র্মাচ ১৯৭১ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণের পর ২৬ র্মাচ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার পর থকেে পাকহানাদার বাহিনী নিধনে মরিয়া হয়ে উঠে ।

যারই ধারাবাহকিতায় খাগডহর তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প সংগ্রামী জনতা ঘেরাও করে এবং বাঙ্গালী ইপিআর সদস্যদের সহায়তায় পাকস্তিানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার কর। এ যুদ্ধে ইপিআর সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের ড্রাইভার পুত্র আবু তাহরে মুকুল শাহাদৎ বরণ করনে। মূলতঃ এই যুদ্ধরে পর পরই ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থতি সীমান্ত ফাঁড়গিুলি বাঙ্গালী বিডিআরদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে ।নহিত পাক সনোদরে লাশ নয়িে ময়মনসিংহবাসী বিজয় মিছির করতে থাকে ও ধৃত অন্যান্য পাকসনোদরে র্কতৃপক্ষের মাধ্যমে ময়মনসিং জেলখানায় প্রেরণ করা হয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এক সকালে পুরাতন বিডিআর ভবনের ৩য় তলার শীর্ষে হাজার হাজার লোকের জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা উত্তোলন করনে সাবেক কমান্ডার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ।

এ যুদ্ধে আবুল হাসমে, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন আহমদে, ম হামিদ , এসএম নাজমুল হক তারা, মৃত চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের(কাদু মিয়া), একেএম শামছুল আলম, শেখ হারুন, খোকন বিডিআর ও পুলিশের সদস্যসহ জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অনকে সদস্যই অংশগ্রহণ করনে।

১৯৭১ সালেরএই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় মুক্তাগাছা । মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ , পৌরসভাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান প্রতি বছরের মত এবারও শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবে । পাকবাহিনী ৭১ এর ২৩ এপ্রিল জামালপুর থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে মুক্তাগাছায় প্রবেশ করে । সেদিন শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে জীপ ও ট্রাকের এক বিশাল কনভয় নিয়ে পাকবাহিনী মুক্তাগাছা দখল করে । শহরের বিভিন্ন স্থানে গুলি বর্ষণ লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগে শহীদ হন অসংখ্য জনতা । এসময় প্রতিনিয়িত পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ধর্ম , বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে মুক্তাগাছার অগণিত জনতা । যুদ্ধকালীন সময়ে রফিজ উদ্দিন, ডা: বাবর আলী ,জবেদ আলীও আব্দুর রাজ্জাক এই ৪টি কোম্পানী পাক হানাদারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল । অপরদিকে মকবুল হোসেন পাবনা ও টাঙ্গাইল এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি কোম্পানী গঠন করে । মুক্তিযোদ্ধারা খতম করে বহু রাজাকার ও পাকবাহিনীর সদস্যকে । ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১০ই ডিসেম্বর মুক্ত হয় মুক্তাগাছা ।