মুক্তাগাছায় বাক্সে মৌমাছি চাষে সফলতা

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 20 May 2016, 05:59 AM
Updated : 20 May 2016, 05:59 AM


ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় মৌচাষী আটানীবাজারের বাসিন্দা আলীম (৩৫), পাড়াটঙ্গীর তাজুল ইসলাম (৪০) এবং কাঠবওলার মো: আব্দুল জলির সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে বাক্সে মৌচাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন । প্রতিবছর উৎপাদন করছেন লাখ লাখ টাকা । মধু বিক্রির পাইকারী বাজার ও মন্দা মৌসুমে ঋণের ব্যবস্থা করার দাবী সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাদের প্রতি ।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তাগাছার আটানি বাজারের আলীম , পাড়াটঙ্গীর তাজুল (৪০) এবং কাঠবওলার আব্দুল জলিল (৫০) যথাক্রমে ৮বছর থেকে একযুগ ধরে কৃষি ও অন্য কাজের পাশাপাশি বাক্সে মৌমাছি পালন শুরু করেন ।

আশানুরুপ মধু উৎপাদিত হওয়ায় ক্রমশ: বাড়ছে তাদের মৌমাছি চাষের পরিধি । কাঠবওলার আব্দুল জলিল জানান, বিআইএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মৌ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন । ৫-৬ বছর আগে টাঙ্গাইলের গোপালপুরের এক চাষির কাছ থেকে উন্নত প্রজাতির মিলিফিরা জাতের মৌমাছি সংগ্রহ করেন । একশ ফ্রেম ও ১২ বাক্সে নতুন জাতের এ মাছি পালন শুরু করেন ।

একটি খামার গড়ে তুলে নাম দেন ভাই বোন মধু । বর্তমানে তার মৌমাছির বাক্সের সংখ্যা দাড়িঁয়েছে ৬৫টিতে । আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসংখ্যা একশতে দাঁড়াবে বলে তিনি জানান । এসব বাক্স থেকে বছরে তিনি ৩৫ থেকে ৪০ মণ মধু সংগ্রহ করেন । বৈয়ম বা বোতলে ভরে মধু বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে । বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মধুপুর বনের কমলাপুর রাবার বাগানের এক পান্তে সারিবদ্ধ অনেকগুলো বাক্স রাখা । পরিচর্যায় ব্যস্ত আছেন চাষী আব্দুল জলিল ।বাক্স খুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মৌচাকগুলো দেখালেন । আব্দুল জলিল জানালেন , যখন যেখানে যে ফুলের আধিক্য থাকে তিনি বাক্সগুলো নিয়ে তখন সেখানেই চলে যান । এবার সরিষার মৌসুমে তিনি এগুলো নিয়ে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর ও ঘাটাইলে চলে গিয়েছিলেন । সরিষা মৌসুমে তিনি সাড়ে ২৬ মন মধু সংগ্রহ করেন ।

এর আগের বার গিয়েছিলেন গাজিপুরে । লিচুর মৌসুমে রাজশাহী , শরিয়তপুর, মধুপুর বনে আর ফুলের মৌসুমে নদীর চর এলাকায় চলে যান এবং কুল মৌসুমে মুক্তাগাছার আশেপাশে বাক্স নিয়ে ঘুরে বেড়ান । এখাবে বিভিন্ন মৌসুমে তিনি বাক্স নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান । তাকে সহযোগীতা করে তার বড় ছেলে নাজমুল হোসেন ।অনেক সময় কাজের লোক দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেন । মূলত কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি এই মৌচাষ করেন । আব্দুল জলিল জানান, রাবার গাছের ফুল ও কচি ডগা থেকে মৌমাছি পর্যাপ্ত মধু সংগ্রহ করতে পারে এবং সেই মধুর মান খুবই ভালো হয় । তাই তিনি বিশাল রাবার বাগানে বাক্সগুলো রেখেছেন ।

তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে মৌমাছির খাদ্য সংকট দেখা দেয় । তখন মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না । এ সময় বাইরে থেকে প্রচুর পরিমাণে চিনি খাইয়ে মৌমাছিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় । উৎপাদিত মধু বিক্রি করতে খুবই ঝামেলা পোহাতে হয় বলে তিনি জানান । এত বেশি মধু খুচরা বিক্রি করা অনেক কষ্টের কাজ ।

তিনি বলেন ঢাল মৌসুম অর্থাৎ বর্সাকালে যখন প্রকৃতিতে ফুলের আধিক্য কম থাকে তখনকার ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারিভাবে ঋণের ব্যবস্থা করা এবং উৎপাদিত মধু সুলভমূল্যে পাইকারি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়া হলে মৌচাষ আরও সম্প্রসারিত হতো । আটানীবাজারের মৌচাষী আলীম ও পাড়াটঙ্গীর তাজুল ইসলাম ইসলাম জানান, স্থানীয় বাজারে এবং কবিরাজদের কাছে উৎপাদিক মধু বিক্রি করা হয় । পাইকারী বাজার ধরতে পাওয়া গেলে মৌচাষে আরো অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব ।