ময়মনসিংহে চাতালকন্যা

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 31 July 2016, 04:24 AM
Updated : 31 July 2016, 04:24 AM

ময়মনসিংহে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ ধানের উপর নির্ভর করে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা, ফুলপুর, তরাকান্দা জেলাসদরসহ ১২টি উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৫ শতাধিক চাতালকল।

এখানে কাজ করছে সহস্রাধিক নারী ও শিশু শ্রমিক। এসব চাতালকলে শ্রম আইনের বালাই নেই। নারী ও শিশু শ্রমিকদের ক্ষেত্রে রয়েছে বেতন বৈষম্য। পুরুষের সমান কাজ করলেও নারীদের ও শিশুদের মজুরী দেওয়া হয় কম। আজ শনিবার এলাকা ঘুরে এসব তথ্য জানা গেলো।

সড়ক , নৌ ও রেলপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় এবং সস্তায় শ্রমিক সহজলভ্য হওয়ায় আত্রাঞ্চলের চাল তৈরীর এই শ্রমঘন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে চালের মোকাম। এখন দেশের বৃহৎ কয়েকটি চালের মোকামের একটি।

চাতালের কাজ খুবই কষ্টের। দিন রাতের মধ্যে বিশ্রামের সময় কম। দিনভর চলে ধান শুকানোর কাজ। সন্ধ্যার পর সেই শুকানো ধান মেশিনে ভাঙ্গানো শুরু হয়। ভোরের দিকে উৎপাদিত চাল বস্তা ভর্তি হয়ে চলে যায় নির্দিষ্ট মোকামে। রাতে একইসঙ্গে চলে ধান সিদ্ধ করার কাজ। ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় রাতে সিদ্ধ করা ধান শুকানোর কাজ। বলা চলে ২৪ ঘন্টাই ব্যস্ত থাকতে হয় চাতাল শ্রমিকদের।

এখানে নেই কোন শিফট অর্থাৎ একদল ১২ ঘন্টা কাজ করলো, এমন ব্যবস্থা নেই। ঘুরে ফিরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে সেই একই শ্রমিককেই কাজে নেমে যেতে হয়। চাতালকণ্যা কাজলী, জাহানার, রুপালী,সখিনা,আমেনা,করিমন,হাজেরা,জরিনা জানান, ভোরের দিকে একটুখানি বিশ্রামের সময় পাওয়া যায়। এই হাড় ভাঙ্গা খাটুনির পর মজুরী পাওয়া যায় খুব নগণ্য । দিনে ৪০/৫০ টাকা । সঙ্গে দেয়া হয় চালের খুদ। মেশিনে ধান ভাঙ্গার সময় কিছু চাল ভেঙ্গে এই খুদ হয় ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এসব হতদরিদ্র নারীরা এলাকায় কাজ না পেয়ে দল বেঁধে এখানে এসে বিভিন্ন চাতালে কাজ নেয়। অক্লান্ত পরিশ্রম করে তারা এখানে। অভাব রোগ শোক আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সব মিলিয়ে তাদের জীবন অমানবিক।

জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে তাদের ঘরে পৌঁছেনি শিক্ষার আলো, স্বাস্থ্য সেবা পরিবার পরিকল্পনা কি তা জানেনা। অসাধু মলিক আবার স্থানীয় মাস্তানদের দ্বারা হরহামেশাই যৌন নিপীড়নের শিকার হয় এরা। প্রতিবাদ করার সাহস পায় না এরা।