ভালুকায় কুমির চাষ লাভজনক

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 18 August 2016, 11:28 PM
Updated : 18 August 2016, 11:28 PM

ময়মনসিংহে ভালুকায় কুমির চাষ লাভজনক। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উভচর সরীসৃপ প্রাণি কুমিরের কোনো কিছুই 'ফেলনা' নয়। ইতোমধ্যে উৎপাদিত কুমিরের চামড়া রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। এবার মাংস রপ্তানির চিন্তা-ভাবনাও চলছে বলে জানিয়েছে উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান। সবমিলিয়ে রপ্তানিবাণিজ্যে কুমিরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ভালুকা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ভরাডোবা-সাগরদিঘি সড়কের উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামে রেপটাইল ফার্ম লিমিটেড কুমির চাষ ও কুমির রপ্তানি করছে।

জানা গেছে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিগত ২০০৪ সনের ৫ মে খামারটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিইএস এর অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি পুরুষ এবং ৬০টি মাদী কুমির আমদানি করেন।

পরে ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলোকে খামারে অবমুক্ত করা হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০-১৪ বছর। আর কুমিরগুলো লম্বায় ছিল ৭-১২ ফুট। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সনের আগস্ট মাসে ওই খামারের প্রথম দুটি মাদী কুমির ডিম দেয়া শুরু করে। ক্রমান্বয়ে কুমিরের বংশ বিস্তারের মাধ্যমে ওই খামারে প্রায় ৮০০ কুমিরে উন্নীত হয়। সরকারের কাছ থেকে কুমির রপ্তানির চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে ২০০৯ সনের অক্টোবর মাসে জার্মানের হাইডেল বার্ড ইউনিভার্সিটি কুমিরের শরীরের অংশ বিশেষ থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক মেডিসিন আবিষ্কারের জন্য ওই রেপটাইল ফার্ম লিমিটেড থেকে কুমির রপ্তানির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১০ সনে ওই খামারের রপ্তানিযোগ্য ৩০০ কুমির মধ্য থেকে ৬৭টি কুমির জার্মানে রপ্তানি করেন। বাকি ২২৩টি কুমির ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির প্রক্রিয়া চালান। জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৭টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে কুমির রপ্তানির দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম লিপিবদ্ধ হয়।

কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর। আমদানিকৃত কুমিরের মধ্যে ১৫টি পুরুষ রয়েছে। প্রতি মাসে এদের ৩০০ কেজি মাংস খাবার হিসেবে দেয়া হতো। বন্য অবস্থায় ১০/১২ বছর বয়সে এবং ফার্মে ৬/৭ বছর বয়সের একটি স্ত্রী কুমির বছরে একবার (এপ্রিল-মে মাসে) ৪০ থেকে ৫০টি করে ডিম দেয়। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৮০ দিন। এখানে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে খামারে ৪০টি পুকুর রয়েছে। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সারওয়াত কুমির ফার্ম থেকে দেড় কোটি টাকার দিয়ে আরও ৪০ টি ব্রিডার কুমির ক্রয় করে আনা হয়েছে। সব মিলে বর্তমানে এ খামারে ৯০টি মা কুমির রয়েছে। এ ছাড়াও এ খামারের নিজস্ব উৎপাদিত ছোট বড় মিলে ১৫ শতাধিক কুমির রয়েছে যে গুলির দৈর্ঘ্য তিন ফুট থেকে সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা।

কুমিরের কোনো কিছুই 'ফেলনা' নয় বলে চামড়া, গোশত, দাঁত ও হাঁড় বিপণন করা যায়। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যমানের কুমিরের গোশতের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ব্যাংকক, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ অর্ধশত দেশে কুমিরের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে।

২০০৪ সালে এটি দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুমিরের প্রজনন শুরু করে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তারা কুমিরের চামড়া রপ্তানি শুরু করে। এখন পর্যন্ত মূলত জাপানে বছরে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ চামড়া রপ্তানি হচ্ছে। এর পরিমাণ বাড়িয়ে বছরে দুই হাজার করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপাশি মাংস রপ্তানির চিন্তা ভাবনা চলছে বলে জানান, রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডের কর্মকর্তারা ।