ময়মনসিংহে বীরঙ্গনা হাজেরার নেই ঈদ আনন্দ

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 12 Sept 2016, 02:53 PM
Updated : 12 Sept 2016, 02:53 PM

ঈদের মাত্র দুই দিন বাকি । জামা- কাপড়, বাজার- সদাই কিছুই করা হয়নি । মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের কাছে কতবার গেছি তার হিসাব নাই । কাগজ পত্রও জমা দিছি । মরার পর স্বীকৃতি দিয়া কি করমু । সরহার কি আমার লেইগ্গা ভাববো না । হুনছি আমার মত তিনজনরে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিছে সরহার। অরা নাকি ব্যাংকে একাউন্ট খোলেছে টেহা তুলব। আমার ভাতা আর অইনা বাবা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৫ বছর পর রবিরার কান্নায় ভেঙে পড়ে উপরোক্ত কথাগুলো বললেন , ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়া বীরাঙ্গনা হাজেরা খাতুন । হালুয়াঘাট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবিরুল ইসলাম বেগ জানান, আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে হাজেরা খাতুনকে বীরঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য সরকারের সংশ্লিস্ট বিভাগে কাগজপত্রাদি জমা দিয়েছি।

ঐ আবেদনপত্রে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী দ্বার করেছেন। দেরিতে হলেও হাজেরা বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাবেন এটা আমারা আশা করি। আমাদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে বীরঙ্গনা যারা আগে কাগপত্র জমা দিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে হালুয়াঘাট থেকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছেন। হাজেরারটাও হবে।

হাজেরার ঘরে নেই ঈদ আনন্দ । অথচ একাত্তরের সেইদিনের বিভৎস স্মৃতি আজো হাজেরার হৃদয়কে আলোড়িত করছে। ঘরবাড়িহীন এই হাজেরার চোখে –মুখে হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুরতার ছাঁপ এখনো ভেঁসে বেড়াচ্ছে। শুবার নেই একটুখানি ঘর। কাগজ আর পাতা দিয়ে ঘেরা একটু জায়গাতেই রাত্রিযাপন করেন হাজেরা। হাল্কা বৃষ্টি হলেই গঁড়িয়ে ভেসে যায় ঘর। আর সেটাই হচ্ছেন হাজেরার একমাত্র আশ্রয়স্থল।

হাজেরা জানান, তাকে স্বাধীনতা দিবসের ১৪ দিন পুর্বে পাক-হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছিল। হালুয়াঘাট থেকে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার দুরে গোবড়াকুড়া গ্রামের একটি পরিত্যক্ত গাড়ো বাড়িতে তাকে তুলে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয় হানাদার বাহিনী। একপর্যায়ে হাজেরা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও মুখ খুলেননি হাজেরা। কিন্তু সেই রাতের পাক সদস্যের দ্বারা নির্যাতনের তচিহ্ন গুলো দামিয়ে রাখতে পারিনি সেই কঠিন বাস্তবতাকে। সেই দিনের লজ্জার কথা ভারাক্রান্ত হয়ে প্রকাশ করলেন, মহিয়সি নারী হাজেরা।

একই দিনে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী। আর একই সাথে হাজেরার উপড় চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। অতি দ্রুত যেন হাজেরা উপযুক্ত সম্মাননা পান সেই দাবি জানান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারাও।