ময়মনসিংহে নারী শক্তির সাত বছরে পদার্পন

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 12 Oct 2016, 09:35 AM
Updated : 12 Oct 2016, 09:35 AM

ময়মনসিংহে শহরের নারী পরিচালিত দুর্গাপূজা নারী পুরুষের দুই শ্রেণীর সম্প্রীতির বন্ধন সুতো । নারী শক্তি নামের একটি সংগঠন শহরের শিববাড়ি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন।


কমিটির সভাপতি শুক্লা দাশ, সাধারণ সম্পাদক সুচিত্রা সেন গুপ্তা জানালেন, মহিলাদের দ্বারা আয়োজিত এই পূজা ৭ তম বর্ষে পদার্পন করলো।

শুধু পূজা করাই নয় প্রতিবছরই বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় মেধাবী ছাত্রছাত্রী এবং সাংস্কৃতিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেয় এই নারী শক্তি পূজা কমিটি।


এই মন্ডপে দুর্গাপূজায় পুরোহিত ব্যাতিত সকলেই নারী । দিনরাত খেটে তাদের হস্তশিল্পের মাধ্যমে পূজা প্রাঙ্গনকে সংরক্ষনের বার্তায় আলাদা মাত্রায় নিয়ে যায় যা মন ছুঁয়ে দেয় এই পূজা দেখতে আসা সকল দর্শনার্থীদের।

৭ বছর ধরে ব্যতিক্রমী এই দুর্গাপূজায় ভিন্নমাত্রার আয়োজন পূঁজারি ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। জানা গেলো, অত্রাঞ্চলের নারীদের জমানো মুষ্ঠির চাল যার অর্থে চলে এই দুর্গাপূজার আয়োজন । গরীব দুখি নারী শিশুদের পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বিতরণ করা হয় কাপড়-চোপড় ও নগদ অর্থ।

কমিটির নেতৃবৃন্দ বললেন, ময়মনসিংহ শহরের একদল সাহসী নারী এই পূজো আয়োজন শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরে। এতে নারীদের অংশগ্রহন প্রতিবছর বেড়েই চলেছে যা একটি অনুকরণীয় অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত।


২০১০ সালের শহরের শিববাড়ী মন্দিরে প্রথম নারীদের আয়োজনে এই দুর্গাপূজা শুরু হয়। নারীদের এ আয়োজন শুধু শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, নানা বিষয় যুক্ত করে এ আয়োজনকে বর্ণাঢ্য আকারে ও প্রকারে তুলে এনেছেন তারা। প্রথম সভায় ৭৪ জন নারী সদস্য উপস্থিত ছিলেন।


১৩৫ জন নারী সদস্য নিয়ে প্রথম বছর পূজা উদযাপন পরিষদ গঠন করা হয়। নারীদের এ আয়োজনের সংবাদ জেনে বহি:বিশ্বের অনেক নারীই এই নারী শক্তি পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য হয়েছেন। নারীরা শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রতিটি সদস্য এক রকম শাড়ি পরেন। অষ্টমী পূজায় এবং বিসর্জন শোভাযাত্রায় ওই শাড়ি পরিধান করা বাধ্যতামূলক।

পূজা উদযাপন পরিষদ প্রতি বছর সংগঠনের সদস্য এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের লেখা নিয়ে স্মরণিকা প্রকাশ করে থাকে। বিজয়াদশমীর দিন এই মন্ডপে চলে সিঁদুর খেলা। দেবীকে মিষ্টি মুখ করিয়ে বরণ করে নিয়ে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। মনে একটাই প্রার্থনা 'করেন, আবার এসো মা। অপেক্ষা আরও একটা বছরের।


বছরকার আবাহন পর্ব শেষ। তিনদিনের পূজা শেষে বিজয়া দশমীর সকাল থেকেই বেজেছে বিসর্জনের সুর। দশমীর সকাল থেকেই মন্ডপে ভিড় করেন মহিলারা। প্রথমে দেবীবরণ। তারপর সিঁদুরখেলায় বিদায়পর্বের সূচনা হয়। চারদিনের প্রাণঢালা আনন্দ স্রোত পৌঁছে যায় শেষ লগ্নে। বিষাদসিন্ধুতে ডুবে যাওয়ার আগে সিঁদুরখেলায় অন্তরের সব আবেগ উজাড় করে দেওয়া হয়।


দশমীর সকালে এই মন্ডপে রীতিমত উৎসবের মেজাজ। বেলা গড়ালেই মন্ডপ ছেড়ে রওনা দেন দেবী দুর্গা। কিন্তু তাতে কী? উৎসবের শেষ মুহুর্তেও উজাড় করে দিতে হবে নিজেদের। আনন্দের সাগর থেকে উঠে আসা জোয়ারের স্রোতে ভেসে পড়া, ভাসিয়ে নেওয়া সঙ্গীসাথীদের।


পূজা আসে, পূজা যায়। দশমীর পর আবার এক বছরের প্রতীক্ষা। প্রতিবছর এই চারটে দিনের অপেক্ষায় থাকেন এই নারীরা। কিন্তু দশমী এলেই মনটা কেঁদে ওঠে। আবার একটা বছরের অপেক্ষা। দেবীবরণ এবং সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে আগামী বছরের পূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যায়।

এই নারী আয়োজকরা দরিদ্রদের বস্ত্র ও নগদ অর্থ বিতরণের পাশাপাশি বছরব্যাপী বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে সংগঠনকে গতিশীল করে রাখেন।

এবছর তাদের পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করেছেন, ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন, ডিআইজি ময়মনসিংহ রেঞ্জ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (পিপিএম), জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান ও পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম (বিপিএম, পিপিএম) অতিঃ জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হারুন-অর-রশিদ ও সামরিক-বেসামরিক পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ ।


ভূয়শী প্রশংসা করেছেন এই নারীদের ভিন্নমাত্রার দুর্গাপূজার আয়োজন দেখে ।


মহিলা-পুরুষের স্বাভাবিক পার্থক্যকে পার্থক্য হিসাবে না দেখে, আমরা দেখি খামতি হিসাবে দেখবার প্রবণতা। পুরুষ যদি তথাকথিত মহিলা কাজে পারদর্শী না হন, তাহা পৌরুষের নিশান। আর নারীরা যে তথাকথিত পুরুষালি কাজে দড় নহেন, তাহা দুর্বলতা। মন না বদলাইলে বৈষম্য ঘুচবে না।