ফুলবাড়ীয়ায় বীরাঙ্গনা ও পরিবারের দুঃখ গাঁথা

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 8 Nov 2016, 06:23 PM
Updated : 8 Nov 2016, 06:23 PM

ময়মনসিংহে একজন শহীদ, দুই জন জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা বীরাঙ্গনা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন কাটছে অতিকষ্টে। দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও তারা পাননি সরকারি কোন সুযোগ- সুবিধা।

ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বাকতা ইউনিয়নের কৈয়ারচালা গ্রামের শহীদ জননী মালেকা । একাত্তরে স্বামী কৃষক আক্কাছ আলীর বাড়িতে এ নারীর ওপর চলে পাক হানাদারদের অকথ্য নির্যাতন। ধর্ষিত হন তিনি। ২ সপ্তাহ চলতে থাকে রক্তক্ষরন। অত:পর মৃত্যু। শহীদ হন ঠিকই কিন্তু তার গর্ভজাত রেখে যাওয়া ৩ পুত্র ও এক কণ্যা শ্রমিক পেশায় বেঁচে থাকার তাগিদে জীবন যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

এ উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের নূরজাহানের সাথে মুক্তিযুদ্ধের এক যুগ আগে বিয়ে হয় প্রতিবেশী হযরত আলীর সাথে। একাত্তরে পাকবাহিনী সদস্যরা তাকে একটি স্কুল রুমে ধর্ষিত হন তিনি। দেশ স্বাধীনের পর স্বামী তাকে এবং তার মেয়ে হাজেরা খাতুনকে ফেলে রেখে চলে যান ভারতে। ক্রমে ক্রমে এই নারী শ্রবন প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। জীবিকার তাগিদে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষা।

এ উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী বালা দেবীর বিয়ে হয় ভালুকা উপজেলার গোয়ারী গ্রামের নিতাই চন্দ্র দেবনাথের সাথে। একাত্তরে সেখানে তিনি ধর্ষিত হন। পাক বাহিনী তাকে ধর্ষন করেই ক্ষান্ত হয়নি। কেড়ে নেয় তার মুক্তিযোদ্ধা স্বামী ও ৮ বছর বয়সী সহোদর ছোট ভাই খোকন দেবনাথকেও।

তিনি ধর্ষিত হওয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্বশুড় তাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেন। এই বীরঙ্গনা নারীর এখন ছোটভাই হত-দরিদ্র কানাইলাল দেবনাথের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে অতি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। শহীদ, এই বীরঙ্গনা ও তার পরিবারের সদস্যরা চান সরকারি সুযোগ-সুবিধা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ বি সিদ্দিক জানান, উপজেলায় ১৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা আছে। নতুন করে ১৮শ ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভূক্তির আবেদন করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) বনানী বিশ্বান জানান, আমি এক সপ্তাহ আগে বীরাঙ্গনাদের ব্যাপারে শুনেছি। উপজেলা পরিষদ আগামী ২৬শে মার্চ উপলক্ষে তাদেরকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা ও আর্থিক সাহায্য দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।