ময়মনসিংহে আগুনরঙা পলাশ-শিমুল ফুলের ঝিলিক কমছে

মনোনেশ দাসমনোনেশ দাস
Published : 7 March 2017, 05:44 PM
Updated : 7 March 2017, 05:44 PM


ময়মনসিংহে জেলার সর্বত্র মার্চ এলেই প্রকৃতির কুঞ্জবনে ঝিলিক দিতো আগুনরঙা ফুলকারি সুষমায় । চির চেনা শিমুল, পলাশ ফুলে ভ্রমরের নিরন্তর ওড়াউড়ি বসন্তবাহারের অসামান্য ফুলকারি সুষমায় ছেয়ে থাকতো মধুমাস ।ফুলের রঙের সাহচর্যে মনও কখন যেন রাঙা হয়ে উঠত। ফাগুনবিলাসী মন তখন উদাস বাউল। ফাগে আর রঙের মাতনে সেজে উঠতে চাইতো মন ।

সেই পলাশ আর শিমুল ফুল এখন আর চোখে পড়েনা। জেলার গ্রাম-গঞ্জ এমনকি শহরের আনাচে – কানাচে চিরচেনা প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পলাশ , শিমুল গাছ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই ফুলদ্বয়কে সম্বোধন করা হতো অগ্নিশিখা। পলাশ, শিমুলের দামাল আগুনরঙা উপস্থিতি এলোমেলো করে দিতো ফাগুনঋদ্ধ মন। 'রং রসিয়া' আবেগে ভরাট হতো মার্চ মাস। এই মধুমাস যতণ থাকত, মনে আর বনে তখন ফাগুয়ার রৌণক ছড়াতো ।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে এই ফুলদুটি বিলুপ্তি হওয়ার কারণ নির্বিচারে ধ্বংস ও ইট ভাটায় জ্বালানি হিসাবে এর কাঠ ব্যবহার। তাছাড়া নেই নতুন করে এগাছদুটি সৃজনের উদ্যোগ । টিকে থাকা অবশিষ্ট গাছগুলিরও হচ্ছে না যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণ ।

জানা যায়, শিমুল পলাশ বসন্তের প্রতীক। রঙভরা বসন্তে শিমুল পলাশের বিশাল দখলদারিত্ব। শিমুল পলাশ ফুটলেই বোঝা যায় ফাগুনে বনে আগুন লেগেছে।

তাছাড়া ফাল্গুন মাসে একটা জৈবিক উপযোগিতা আছে, এমনই মনে করেন পরিবেশবিদরা। প্রকৃতির ঋতুচক্রে এই সময় শীতঋতু শেষ হয়ে বসন্তঋতুর আগমন ঘটে। জলবায়ু ও আবহাওয়ার রদবদল ঘটে। শীতের পাতাঝরা গাছের ডালে ডালে নতুন কচি পাতা, মুকুল আসে। আকস্মিক ঋতু পরিবর্তনের জন্য মানবশরীর ভারসাম্যে অভ্যস্ত হওয়ার আগেই জ্বর, সর্দি, কাশি, গা ব্যথা, গলা খুসখুস-জনিত ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে থাকে।

তখন পলাশ শিমুল আয়ুর্বেদিক তথা ভেষজ এই গাছের কুসুম, গুল্ম থেকে সনাতনী প্রথায় রস নিংড়ে গায়ে লেপন করলে ভাল ফল পাওয়া যেতো। এক সময় এগুলো ব্যবহৃত হতো মহামারি বসন্তরোগের প্রতিরোধক হিসাবে।

নতুন করে পলাশ শিমুল গাছ রোপনের মাধ্যমে প্রজাতি রা এবং জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবশিষ্ট গাছগুলি সংরণের দাবি পরিবেশবাদী ও প্রকৃতি প্রেমিদের ।