মাঙ্কি লাইক ব্যানানাস!!

মঞ্জুর মোর্শেদ
Published : 4 Dec 2012, 07:34 PM
Updated : 4 Dec 2012, 07:34 PM

দিনটিতে হরতাল ছিল বলে একটু রিলাক্সড ছিলাম । হঠাৎ করে একটা চ্যানেলে যেয়ে চোখ আটকাল । এমনিতেই টিভি দেখা হয় কম তারপরেও ভারতীয় চ্যানেল দেখা, লাস্ট অপশনগুলোর পরে কোন অপশন থাকলে সেটি হল এটা। কিন্তু আজ এনডি টিভি দেখলাম অনেকক্ষণ। ভারতে ৬ই ডিসেম্বর FDI (foreign direct investment) নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হবে। যদি এতে কংগ্রেস জেতে তাহলে তারা বলেই দিয়েছে আমেরিকান কোম্পানি গুলোকে চুক্তি অনুযায়ী রিটেল সেক্টরে ৫১% ইনভেস্ট করতে দেবে। এর মধ্যে ওয়াল মার্ট অন্যতম। এটা খুবই স্পষ্ট যে এতে করে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশীয় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি বিনিয়োগ কারিরা।

বিজেপির নেতা সুষমা সরাজ প্রায় ঘন্টা খানেক বক্তৃতা দিলেন । বেশ মজার কিছু তথ্য দিলেন । বছর ছয়েক আগে পেপসি কোম্পানি পাঞ্জাবে একটা ফ্যাক্টরি করতে এসে জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে ব্যাপক বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়। প্রোজেক্ট ভেস্তে যেতে দেখে পেপসি বলল আমরা শুধু পানীয় তৈরি করব না তোমাদের আলু চাষিদের আলু থেকে আলু কেনে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং টম্যাটো থেকে কেচাপ তৈরি করব । পরে যখন ফ্যাক্টরি চালু হল তখন বলল এ আলু এতই মিষ্টি যে এটা থেকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং টোম্যাটো এতই টক যে তা থেকে কেচাপ সম্ভব নয়। চোখের সামনে দিয়ে টন টন আলু শিপমেন্ট হতে থাকল। মানুষ জমি হারাল , চাষিরা বেকার হল। অর্থনীতির ভাষায় বিনিয়োগ হল , প্রবৃদ্ধি হল । কিন্তু সেটা কার ? পেপসির এবং কিছুটা সরকারের। সাধারন মানুষ এখানে অনুপস্থিত । কংগ্রেসের এমপিরা চিৎকার দিয়ে বলছিল এটা সুষমার স্টান্টবাজি । উনিও আমেরিকা তোষণে কম যান না । যাই হউক আপাত দৃষ্টিতে কংগ্রেস ২০ থেকে ২৫ ভোটে পিছিয়ে থাকলেও হয়ত বেরিয়ে আসতে পারবে এবং গন বিরধী চুক্তিটি করতে পারবে। এটা আমেরিকার কাছে ভারত সরকারের বাধ্যবাধকতা।

চীনের ভীতি ভারতের আজন্ম লালিত। আর একেই পুঁজি করে আমেরিকা, ইসরাইল ভারতের সাথে এখন একই সামরিক চুক্তিতে গাঁথা । আর আজই বিডি নিউজে দেখলাম ভারত সাউথ চায়না সীতে নেভির জাহাজ বলা যায় যুদ্ধ জাহাজই আনতে প্রস্তুত হয়েছে। কারন ভিয়েতনামের হয়ে তেল উত্তোলনের জন্য ভারতীয় কোম্পানি কাজ করছে, আর চীন সেই সিসমিক সার্ভে করতে বাধা দিয়েছে। তাই ভারতের এই প্রস্তুতি । আর এই ক্ষেত্রে চীনকে যুঝতে আমেরিকা তাদের জন্য একটা সাপোর্ট । আর এর জন্য ওয়াল মার্টকে ব্যবসা করতে দিয়ে যদি রিটেলারদের বারটাও বাজে তাতে কিচ্ছু যায় আসে না ।

ভারতের জন্য না হয় একটা সমীকরণ দাঁড় করান গেল। কিন্তু আমাদের সমস্যাটা কোথায় ? কেন আমরা এই সব উপনিবেশিক প্রভুদের দেখে পোষা কুকুরটির মত লেজ নাড়তে থাকি। আর তাই যদি না হয় কেন লন্ডনে হাউস অফ কমনস এ বসে সরকার আর বিরোধী দলের কিছু প্রতিনিধি সংলাপে বসবেন বলে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন , দেশে যতই মুখ চাওয়া চাওয়ি বন্ধ হউক। এই সব আত্মমর্যাদাহীন দেউলিয়া রাজনীতিবিদদের দিয়ে দেশেরই বা কি হবে।

এবার আসি শিরোনামটি নিয়ে । আমার স্কুল জীবনের এক বন্ধু দেশে একটা নাম করা ল্যাংগুয়েজ সেন্টার চালায় । শুরুর প্রথম কয়েক বছর সে সাদা চামড়ার টিচার কে দিয়ে চালিয়েছিল। আমি প্রথমে বলেছিলাম সে তো আক্ষরিক অর্থে কোন টিচার নয় কিন্তু তার পরেও কেন একে দিয়ে চালাবি। উত্তরে সে আমাকে বলল ডু ইয়ু নো মাঙ্কিস লাইক ব্যানানাস ।(এ জন্যই সাদা চামড়াদের নসিহত আমাদের এতই ভাল লাগে, আর কর্পোরেট পুঁজির সামনে তো শূয়েই পড়ি) অন্তত ব্যবসায়িক সার্থের দিক থেকে তার সেই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, স্টুডেন্ট কী শিখতে পেরেছে তাতে কার কি যায় আসে। এটাই মনে হয় কর্পোরেট কালচার বা মানসিকতার খুব ছোট একটা উদাহরন অর্থাৎ প্রফিট ই সব ।