মিথোজীবিতা

মঞ্জুর মোর্শেদ
Published : 4 March 2013, 07:41 AM
Updated : 4 March 2013, 07:41 AM

ইংরেজিতে যাকে বলে সিমবায়োসিস । পারস্পরিক সম্পর্ক – যার দ্বারা দুটো প্রাণীই উপকৃত হয় , এবং সামগ্রিক কল্যাণ ও এর মধ্যে নিহিত থাকে । আমাদের অন্ত্রে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো অন্ত্রের সুরক্ষা থেকে শুরু করে , কিছু মূল্যবান ভিটামিনও তৈরি করে যেগুলো শরীরের ব্যাপক কাজে আসে । লম্বা সময় অ্যান্টিবায়োটিক খেলে বা ডাইরিয়ার সময়ে এই ভাল অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া গুলো কমে যায় বা বেরিয়ে আসে । সেই জন্য মাঝে মাঝে বা ডাইরিয়ার পরে ইয়োগার্ড বা টক দই , বিভিন্ন রকম আচার খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয় । নিয়মিতই যে কোন ডায়েটিশিয়ানরা আজ এ পরামর্শ দেন। কাউকে পুষ্টি জ্ঞান দেয়া আমার এ লিখাটির উদ্দেশ্য নয় ।কিছু সম্পর্কের প্রকৃতি বিশ্লেষন এ মুহুর্তে খুব দরকার মনে করছি ।

৫ই ফেব্রুয়ারি কিছু তরুণের জমায়েত , সংক্ষুব্ধ মিছিল , যেটা অতি দ্রুত সাধারন মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হল । মানুষ আসতে থাকল শাহবাগে , এদের গায়ে কোন সিল ছাপ্পর ছিল না । এদের ক্ষোভ ছিল এ সরকারের বিরুদ্ধে , এ সরকারের আঁতাত করা রায়ের বিরুদ্ধে । যে কোন প্রাপ্ত বয়স্কই বুঝতে পেরেছিল সরকার এ বিচারকে নিয়ে টালবাহানা করছে , জামাত কে আলাদা রেখে , বিএনপি কে কোণঠাসা করাই তার আসল লক্ষ্য । শাহবাগের জমায়েত এটা বুঝত এবং জানত সে জন্য মুল আন্দোলনে সরকার বা তার ছাত্র সংগঠনটির সংশ্রব এড়িয় যাওয়া হচ্ছিল বিভিন্ন ভাবেই ।
সে জন্যই ৫ তারিখে শুরু হওয়া আন্দোলনে ৭ তারিখেই মাহবুবুল আলম হানিফের উপস্থিতি জনগন মেনে নেয় নি , বোতল ছুঁড়ে মেরেছিল । এর আগের দিন সাজেদা চৌধুরী কোন কথা না বলেই ফেরত এসেছিলেন । ১০ তারিখে তোফায়েল আহমেদ যখন ছাত্রলীগের নেতা বেষ্টিত হয়ে বক্তব্য দিতে এসেছিলেন তিনিও পারেন নি , বক্তব্য দিতে না দেয়ায় ছাত্রলীগের কর্মিরা লাকি আখতারের উপর হামলা করেছিল । বরাবরই সরকারি দলের নেতা কর্মিদের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য তো হয়ই নি বরং একটা অস্বস্তির ব্যাপার ছিল । এমনকি ২১ শে ফেব্রুয়ারির মহা সমাবেশেও ছাত্রলীগ নেতা সোহাগের বক্তব্যে মঞ্চের সামনে বসে থাকা বেশ কিছু তরুন দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে , ছাত্র নেতাটির অপরাধ ছিল উনি বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারন করেছিলেন । যেটা অনেক মিডিয়াই কাভার করেনি ।

যাই হউক এ গুলো হয়ত বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা , সংশয়বাদীরা বরাবরের মতই বলবেন আন্দোলনের চাবি সবসময়ে সরকারের হাতেই ছিল । যদি তাদের কথাই সঠিক হয় , তাহলে আমি বলব সরকার যতটা না শাহবাগ কে ব্যাবহার করেছে , শাহবাগ সরকার কে ব্যাবহার করেছে তার চাইতে বেশি । সাইদির রায় এবং জামাতের রাজনীতিকে খাদের কিনারায় আনা সম্ভব হয়েছে এই পারস্পরিক মিথোজীবিতার ফলে । বিচার কার্জ , সার্বিক কর্ম পদ্ধতি নিয়ে কথা হতেই পারে , সেটাই সুস্থতা ।

এবার আসি প্রধান বিরোধী দলটির কথায় । দলটি এবং তার ছাত্র সংগঠন টি শুরুতেই একে সরকারি সমর্থন পুষ্ট বলে আখ্যায়িত করেছে । নানা ভাবে এই যৌক্তিক আন্দোলনটিকে নেতিবাচক অভিধায় অভিযুক্ত করেছে । ওনারা কি ভেবেছিলেন যে সবকিছু ঠিক ঠাক করে তরুনরা পল্টনের অফিসে যেয়ে বলবেন , এবার আসুন আমাদের সাথে , আপনাদের অপেক্ষায় আমরা , আপনারা না আসলে এ আন্দোলন সফল হবে না । বরাবরের মতই ক্রিম খাওয়া লোকগুলো যারা আন্দোলনের নাম শুনলেই ভিমরি খায় , সরকারের চরম ব্যার্থতাকেও পুঁজি করে রাস্তায় নামতে পারে না , এদের নিয়ে সিঙ্গাপুর ফেরত ম্যাডাম যখন জামাতের স্বঘোষিত আমীরের ভুমিকায় (তথ্য মন্ত্রীর কথায়) হরতাল , বিক্ষোভের ডাক দেন , তখন হাসিই পায় ।

শাহবাগ সরকার মিথোজীবিতায় ইতিহাসের দায় মেটানো সম্ভব হলে তাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই । গন জাগরন মঞ্চ রাজনৈতিক হিসাব কষতে থাকা সরকারটিকে রুপ পাল্টাতে সাহায্য করছে । এটা শুভ । আর অশুভের তিলক কপালে নিয়ে বিএনপি হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দূরে।