রাজা তুমি নতজানু: সস্তা জনপ্রিয়তার দোষে দুষ্ট

মঞ্জুর মোর্শেদ
Published : 9 April 2016, 04:24 AM
Updated : 9 April 2016, 04:24 AM

একটি তরুণীর মর্মান্তিক মৃত্যু, যেকোন বিবেকবান মানুষের মন কে নাড়া দিয়েছে, মানুষ যেখানে একাত্ম হয়ে রাস্তায় নেমে বিচার চেয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র হাটছে উল্টো পথে। সহজে মুখ খুলছে না। স্পর্শকাতর নামক শব্দের আড়ালে নিজেই মুখ লুকাচ্ছে। ক্যান্টনমেন্টের মতো সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকতে গেলে চেকপোস্টে নাম এন্ট্রি করাতে হয়। এটা কে না জানে। ওইদিন রাত সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে কারা সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকেছিলো, সেটা জানতে ওই সময়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তা কে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? এর কিছুই কি কখনো জানা যাবে?

প্রথম ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেতে দু'সপ্তাহ লেগেছে। টু ফিঙ্গার টেস্টের রিপোর্ট (যেটা নিশ্চিত কোন পরীক্ষা নয়) পেতে এতদিন লাগলো। হাইমেন এ যদি পোস্টেরিয়র টিয়ার হয় তাহলে ধর্ষণ আর এন্টারিয়র টিয়ার হলে ধর্ষণ নয় এটা তো তাৎক্ষণিক জানার ব্যাপার। সেটা জানাতে এতদিন কেন লাগলো? তার মানে রিপোর্ট টাকে পলিটিসাইজড করতে সময় লেগেছে। মানলাম ধর্ষণ হয়নি। তাহলে হত্যা। এখন বলা হচ্ছে শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই। আর মেয়েটির বাবা বলেছেন মাথা পেছন দিক থেকে থেতলানো ছিল। তাহলে কি কিছুই হয় নি? তাহলে মেয়েটি মরল কিভাবে? খুন বলতেও দ্বিধা, তাতে আবার আর্মি নামক যন্ত্রটির বিপক্ষে যাওয়া হয়। এত হিসেব-নিকেশ কেন হচ্ছে? জনসমর্থন নেই বলে? যে জায়গায় মৃতদেহ টি পড়ে ছিল তার চারদিক পরিষ্কার করে মাটি পর্যন্ত খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ আচরণটি কি যে কারো মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করবে না? আর এরকম একটা পজিটিভ মানসিকতার মেয়ে, টিউশনি করে বাড়ি ফিরছিল, তার আত্মহত্যা মেনে নিলে নিজেকে সাইকোপ্যাথের চাইতেও বড় কিছু ভাবতে হবে।

তাহলে বলতেই হবে রাষ্ট্র তুমি নতজানু। কার কাছে? উর্দি পরা এস্টাব্লিশমেন্টের কাছে?

রিজার্ভের টাকা চুরি? ফিলিপাইনে কি হচ্ছে সবই জানা যাচ্ছে। আর আমাদের এখানে তদন্তের কোন কিছুই কি আমরা জানতে পারবো? ব্যাংকিং খাতে সীমাহীন দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাংকটির ইমেজে যে ধস নেমেছে সেটা পুনরুদ্ধার কি কোন ভাবে সম্ভব?

জনগণকে আস্থায় না এনে, বিশ্বাস বা ইমেজ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা না করে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে সস্তা জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে চারটি স্থানে পুলিশ বসিয়ে ট্যানারি তে চামড়া সাপ্লাই বন্ধ করা। জুলাই বা এবছরের শেষে ট্যানারি গুলো এমনিতেই সাভারে চলে যাবার কথা। এখনো যেখানে কিছু (প্রায় ৩৫%) কাজ বাকি সেটা শেষের ত্বরিৎ ব্যবস্থা না নিয়ে এধরণের লোক দেখানো তৎপরতার মানে কি? এতে করে হয়ত কিছু মানুষ আপাত খুশি হবে, বেশ কিছু বাইরের অর্ডার হয়ত ক্যানসেল হবে, গরুর মাংসের দাম হয়ত বাড়বে, তাতে কি? কিছু তৎপরতা তো দেখানো যাচ্ছে।

আর একটি সস্তা জনপ্রিয় কাজ হচ্ছে হুটহাট করে ধানমন্ডি সহ কিছু আবাসিক এলাকায় ছোট খাট ব্যবসায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলা (যদিও আইফেল টাওয়ারের মতো বিজিএমইএ ভবন দাঁড়িয়ে থেকে ঢাকা বাসীকে কটাক্ষ করে যাবে আজীবন)। এতে করে বেশ কিছু লোকের জীবিকার সমস্যা হলেও কিছু বাহবা পাওয়া যাচ্ছে নিশ্চিত। আর সবচেয়ে বড় কথা নিজের তৎপরতা তো দেখানো যাচ্ছে (ভেঙে ফেলা কিছু দোকান ইতিমধ্যেই একই স্থানে আবার কাজ শুরু করেছে)।

নগরবাসীর বাঙালিয়ানা প্রকাশের একটাই উৎসব কে আপনি করেছেন সংকুচিত। চরম তাপদাহে মানুষের বিকেলের স্বস্তিদায়ক বেরিয়ে পড়া কে বাধা দিয়ে কিছু পুরুষ নামক জন্তুর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। জন্তু গুলোকে খাঁচায় না পুরে বিবেক কে বললেন ঘরে বন্দি থাকতে। কি দারুণ আচরণ!

এ ব্যাপারে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধুটি হচ্ছে বিএনপি। সেও এস্টাব্লিশমেন্টের পক্ষে। সেও তনু হত্যা নিয়ে কিছুই বলে নি, গভর্নরের পদত্যাগ ছাড়া আর কোন চাপ আপনার উপর দেয় নি। এ মুহূর্তে বিএনপি আপনার সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। আপনারা গলা জড়াজড়ি করুন আর মাঝে মাঝে চোর-পুলিশ খেলুন। আর আমরা বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপ দেই।