অত্যাচারি সাংবাদিক স্বামীকে শাস্তি, তন্বীর জন্য শুভকামনা

মারজিয়া প্রভা
Published : 29 June 2015, 06:10 PM
Updated : 29 June 2015, 06:10 PM

তন্বীদের খুব প্রয়োজন এই সময়ে। আমি নাজনীন আখতার তন্বীর কথা বলছি। যে দেশের মেয়েরা এখনও "পতি ধর্ম, পতি পরম তপস্যা " মানে, স্বামীর হাজার দোষ মুখ বুঁজে সহ্য করে, স্বামীর হাতে মার খাওয়াটাকে মেনে নেওয়া কপাল বলে ধরে, তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে তন্বী স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে অত্যাচারী স্বামীকে পুলিশের হাতে সোর্পদ করলে। গাজি টিভির সাংবাদিক দম্পতি রফিকুল এবং তন্বীকে প্রথম দেখেছি পত্রিকার পাতায়, একমাত্র কন্যা চন্দ্রমুখীর মৃত্যুর পর শোকে মা তন্বী পাঁচতলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হন তিনি, দ্বিতীয় সন্তান নেবার কথা চিন্তা করে এই দম্পতি। কিন্তু সন্তান গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফেবুতে রফিকুলের উক্তি, সে সন্তান চায় না, শুধুমাত্র তন্বীর কথা ভেবেই এই সন্তান। সে সুখ খুঁজে পেয়েছে অন্য কোথাও।

ইয়েস! এই সেই কমিটমেন্ট ভাঙ্গা পরনারীতে আসক্ত স্বামী, যে দিনের পর দিন স্ত্রীর উপর চালায় শারীরিক নির্যাতন। সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে এই সেই নারী সব সহ্য করে যেত। খুব চেনা চিত্রই ছিল! কিন্তু পাল্টে গেল এক নিমিষে! সন্তান আলোর মুখ দেখল। রফিকুল ওদিকে বিয়ের বেড়াজাল না ভেঙ্গেই লিভ টুগেদার শুরু করল তার প্রেয়সির সঙ্গে। শুধু তাই না , এই লোক বিভিন্ন সময় স্ত্রীর কাছে টাকাও নিয়েছিল। তন্বীর শেষ সম্বল পূর্বাচল ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিলে, খেই হারিয়ে ফেলে তন্বী। দেওয়ালে পিট ঠেকে যায়। অতঃপর নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় মামলা এবং পুলিশের হাতকড়া পরে বৈধ স্ত্রীকে অত্যাচার করার ফলস্বরূপ। নাজনীনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন এতদিন চুপ করে ছিলেন ? পুরান সেই কথা সামাজিক মর্যাদা আর ছোট্ট শিশুর মুখ।

কী ভাবছেন ! এমন স্বামী অদ্ভুত! মোটেই না! আমাদের খুব চেনা কোন পরিবারে এমন স্বামী আছে! কেউ যদি অন্য নারীর প্রতি আসক্তই হয়, উচিত তার মিউচুয়াল ডিভোর্স দেওয়া। খোরপোষ দেবার ভয়ে এসব কাপুরুষ না ছাড়ে স্ত্রীকে, না ছাড়ে সুখকে। বউ পিটান তো এদের কাছে মামুলি ডালভাত! হয়ে আসছে তো বহুকাল ধরে! কিন্তু মেয়েদের তন্বী হতে হবে! যারা এখনও মার খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, তাদের শিক্ষা নিতে হবে তন্বীর কাছ থেকে। তন্বী একদিনে তন্বী হয়নি, বহু নির্যাতনের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আপনারও প্লিজ একটু ঘুরে দাঁড়ান সাহস করে, ওই কাপুরুষগুলোর মুখোশ খুলে দিন। একবার তন্বী হয়ে দেখুন, নারী-শক্তির স্ফুলিঙ্গ কতটা আগুন ছড়াতে পারে!

হাতে রুলি, পায়ে মল
মাথার ঘোমটা ছিড়ে ফেল নারী;
ভেঙ্গে ফেল ও শিকল
যে ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু
ওড়াও সে আবরণ,
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন
যত আভরণ"।