চাপাতি সিনড্রোম – নিলয়দা, ধর্ম যখন তোমার শত্রু

মারজিয়া প্রভা
Published : 7 August 2015, 05:26 PM
Updated : 7 August 2015, 05:26 PM

নিলয়'দার ফেসবুকে ফলোয়ার হয়ে তার পোস্ট পড়তাম। কয়েকদিন আগে পড়লাম, জিডি করতে গিয়েছিল থানায়। এই থানা বলতে লাগল, আমাদের থানার আন্ডারে না, ওই থানায় যান, ওই থানা ঘুরে যেতে বলল ওই ওই থানায়। জিডি কেউ নিল না। পুলিশ পরামর্শ দিল, দেশ থেকে চলে যেতে। এই ঘটনার পর আজকে ঘরে ঢুকে নারায়ে তাকবীর বলে হত্যা করল নিলয়দাকে।

চাপাতি দিয়ে হত্যা হচ্ছে একটা স্টাইল। আল কায়েদার স্টাইল। আনসারুল্লাহ বাহিনির স্টাইল। যেমন আগেকার যুগে ঠগিদের স্টাইল ছিল গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারবে। সেইরকম কিছু। আল কায়েদা হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে "যদি তোমাদের বাক স্বাধীনতা কোনও সীমানা না মানতে প্রস্তুত থাকে তবে তোমাদের হৃদয় যেন আমাদের চাপাতির স্বাধীনতার জন্য উন্মুক্ত থাকে"।
মানে ধর্ম নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না ? আমার মুখ বন্ধ ! আমার ধর্ম থাকতেই হবে। ধর্ম ছাড়া যদি আমি থাকি, আমি কোন মানুষ না। তখন আমাকে চাপাতির জন্য রেডি থাকতে হবে। আমি স্বাধীনসত্তা, কিন্তু আমার ব্যাকস্বাধীনতা নেই! চমৎকার ইকুয়েশন বটে!

ধর্মীয় উগ্রবাদিতার বীজ পুঁতে দেওয়া আছে, ধর্মান্ধ মানুষের বিশ্বাসে। Charles Kimbel এর জগৎবিখ্যাত বই "When religion becomes evil" এ বলা হয়েছে পাঁচ পাঁচটি কারণে এই ধর্মীয় উগ্রবাদিতার সৃষ্টি। Absolute Truth claims, Blind Obedience. Establishing The Ideal Time, The End Justifies Any means and Declaring holy war এই হচ্ছে সেই পাঁচটি কারণ।

একটা মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস না করতেই পারে। ধর্ম তার নাই থাকতে পারে। তাই বলে কোপ আসবে তার উপর? কোন সমাজ ধর্মীয় অন্ধতা এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে সেই সমাজ অসভ্য থেকে সভ্য হয় না। অন্ধকার থেকে আলোতে আসে না। গ্যালিলিও যখন পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে বলেছিল, তখন সে ওল্ড টেস্টামেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। এরও আগে এই মতবাদ প্রচারের জন্য জিওনার্দো ব্রুনোকে পুড়িয়ে মেরে ফেলে রোমবাসীরা, বাইবেলের বিরুদ্ধে কথা কিনা?

শেষ পর্যন্ত ধর্মান্ধতার পতন তো ঘটল, বিজ্ঞান এগিয়ে গেল। এইভাবে যুগে যুগে ধর্মান্ধের পতন ঘটে সভ্যতা এগিয়ে যায়, বিজ্ঞান এগিয়ে যায়, মানবতার জয় হয়! আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে ইসলাম ধর্ম এখন ট্যাবু হয়ে গেছে। মানুষকে মারা হচ্ছে , আনসারউল্লাহ বাহিনির মতো জঙ্গি গড়ে উঠছে এই ধর্মের মতবাদকে কেন্দ্র করে। পাশের দেশে ভারতে ইস্কনের মতো ফ্রড সংগঠন গড়ে উঠছে হিন্দু ধর্মের মতবাদ নিয়ে, অপরদিকে জেসাস ভর করে আছে আমেরিকার ধর্মান্ধদেরকে। আমাদের দেশের মুক্তমনারা ইসলামবিরোধী লেখা লিখে তাই। অন্যান্য দেশের মুক্তমনারা লেখে তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে। লেখা কিন্তু থেমে নেই । চলছে। ওদিকে চলছে মুণ্ডুপাতও। লেখার জবাব লেখা দিয়ে না হয়ে হচ্ছে চাপাতি দিয়ে। এটাই কি বড় স্যাটেয়ার না ?

সবচেয়ে কষ্ট লাগে, আমাদের দেশের অনেক মানুষেরা আইএসের কাজ সমর্থন করে না, হত্যাকে সমর্থন করে না। কিন্তু যখন ব্লগার খুন হয়, তখন উঠে পড়ে লাগে না না, ব্লগার তো কোন ইসলামবিরোধী কথা লেখেনি, তাকে মারা হল কেন? মানে কি, ইসলামবিরোধী কথা লিখলেই হত্যা করা জায়েজ হয়ে যায় !

নিলয়দার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর, পাশবিক উল্লাস দেখলাম কমেন্টে " তোরা এভাবেই মরবি" টাইপ। দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি, অভিজিৎদা, বাবু ভাই, অনন্তদার মৃত্যুর পর থেকে। এখন এই বিষয়টা সামান্য হয়ে গেছে, অনুভূতিহীন হয়ে গিয়েছে।

ইসলাম শান্তি ধর্ম বলে অনেক মতবাদ আসবে জানি! এরা সহি ধর্ম পালন করছে না এই টাইপ কথা আসা অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে ! কিন্তু বলুন তো ধর্ম কে পুঁজি করে, ধর্মীয় মতবাদ প্রচার করে যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে এরা, ইসলামের কি রূপটা প্রতিষ্ঠিত করছে এরা? অন্য ধর্মের লোকের কাছেই বা ইসলাম কি রুপে দেখা দিচ্ছে?

চুপ থেকে ডিফিট করার মানে নেই। কলম কখনই বন্ধ হবে না ।