ধর্মানুভূতি ফ্যাক্ট- ব্লগার হত্যার বিচার আসলেই কি সরকার চায়?

মারজিয়া প্রভা
Published : 11 August 2015, 06:46 PM
Updated : 11 August 2015, 06:46 PM

রাজনের মৃত্যুর খুনি বের হতে সময় লাগল দুইদিন। আসামী মিজানকে সৌদি আরবে গিয়ে আটকান হল । আর আমার সোনার দেশের ছেলেরা, এই বাংলায় চাপাতি নিয়ে ঘুরে ঘুরে নারায়ে তাকবীর বলে মাতম করছে, কল্লা ফেলাচ্ছে ব্লগারদের , অথচ তাদের কে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ ওগোঅভিজিৎদার মামলা আটকে আছে। তদন্তের অগ্রগতির কথা ফাউ ফাউ। অভিজিৎদার স্ত্রী বন্যা নিজ মুখে বলেছেন পুলিশের কাছে কোন অগ্রগতির সংবাদই তিনি পায় নি !

নিলয়দার হত্যার পর আল কায়েদার ভারতীয় শাখা আনসার বাহিনি স্বীকার করল খুনের। তার পরেও চোখে ঠুলি পরে আছে সকলে ? গতকাল আইজিপি আজকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সেই একই বাক্যলাপ " অনুভুতিতে লাগে এমন কিছু লিখবেন না"। ধর্মের অনুভূতির মত মুক্তিযুদ্ধের অনুভুতিও তো আছে। এই দেশে মিলিয়ন খানেক লোক বাঁশেরকেল্লা নামক জামাতি ইসলামের পেজের লাইকার। যেখানে রাজাকারদের এই স্বাধীন দেশে মাতম করা হয়, ইতিহাস বিকৃতি করা হয় ? আমাদের অনুভুতিতে লাগে ? কই তখন কোথায় থাকে এই কথা, অনুভুতিতে লাগে এমন কিছু লিখবেন না টাইপ। ছাত্রলীগ সংঘর্ষ করে, মায়ের পেটের ভিতরে থাকা বাচ্চাকে আহত করে, তা নিয়ে যখন আপনাদের বিকার থাকেনা, আমাদের অনুভুতিতে লাগে বৈকি। তখন আপনারা কেন নীরব থাকেন ?

দেশের মানুষ স্বাধীন, বাকস্বাধীন মানুষগুলোর মুখের কথা কেড়ে নিতে চায় ? সারা বিশ্বে নাস্তিকরা আছে, আগেও ছিল, এখনও আছে। তারা বিভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধেই লিখে। ধর্ম যারা প্রচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই লিখে। যারা নাস্তিক, যাদের কোন ধর্মবিশ্বাসই নেই, তারা অন্য ধর্মকে সম্মান প্রদর্শন করে লেখা লিখবে এটা কিভাব সম্ভব ? বাকস্বাধীনতা তো এটাই, অন্য অনেক লোকের পছন্দ নাই থাকতে পারে আমার কথা, আমি লিখব, আমি বলব। সবার পছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলতে গেলে তো আমার বাকস্বাধীনতা থাকল কই ?

দেশের অধিকাংশ হাই প্রোফাইল মানুষ চায় না ব্লগার হত্যার বিচার হোক, তারা সুন্দর করে ব্লগার হত্যাকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। এই লোকগুলো সংখ্যায় হয়ত বেশী। সরকার তাই চুপচাপ সেফ সাইডে থাকছে। হত্যার বিচার করলে যদি নাস্তিক ট্যাগ খেতে হয় ? আইজি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি সীমা লঙ্ঘন না করতে বলেছে ! অথচ তিনি জানেন না, এই দেশে যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃতি করা হয়, তখন তার প্রতিবাদ করলেই হয়ে যায় ধর্মানুভুতি। নারীর ধর্ষণের বিচার চাইতে চাইলে হয়ে যায় ধর্মানুভুতি। নারী নেতৃত্ব ধর্মানুভুতি, পহেলা বৈশাখ উদযাপন ধর্মানুভুতি! এখন কোন কিছুর প্রতিবাদ করতে গেলেই যদি ধর্মানুভুতি তে লাগে তাহলে তো মুখ বন্ধ করাই শ্রেয় !

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং আইনজীবী আপনি যা বলেছেন, তা হচ্ছে ফ্রিডম অফ স্পিচ কেড়ে নেওয়ার কথা। আমাদের জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন "The Bangladeshi authorities must not only continue to strongly condemn these horrendous acts against freedom of expression, but should also ensure that their words are followed by more effective efforts to ensure greater accountability and prevent this kind of violence"।

কিন্তু তারা কি জানে, এই সরকার ভয়ে আছে নিচের পপুলারিটি হারানর ভয়ে । যার কারণে একের পর একের নিরীহ ব্লগাররা হত্যা হচ্ছে, কোন বিকার নাই। বরং তারা নিরাপত্তা চাইতে গেলে পুলিশ জিডি নেওয়া বাদ দিতে দেশ ছাড়তে বলে! বাহ! দারুণ!

আচ্ছা, সরকার কি বুঝছে এটা ৭৫ এর পুনারাবৃত্তি হতে পারে ? শাহবাগ গণজাগরণ থেকে শুরু হওয়া এই ব্লগার হত্যা কি বুঝাচ্ছে ? শুধুই কি নাস্তিকবাদ রোধ ! নাকি এই দেশকে শুধু ইসলামের বধ্যভুমি করে তুলার প্রয়াস, যেখানে অন্য ধর্মের লোকেরা মার খাবে, মূর্তি পুড়বে ! তাহলে, সরকারের পতন অনিবার্য! ইসলামী রাষ্ট্র বানাতে গেলে, সরকারকেও তো কোপ দিতে হবে বৈকি!

এরপরও কি সরকার চোখ বন্ধ করে " সীমা লঙ্ঘনের" বাণী গাইবে ?