ধর্মে আঘাত দেওয়াটা কী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?

মারজিয়া প্রভা
Published : 8 April 2016, 12:36 PM
Updated : 8 April 2016, 12:36 PM

যতদূর জানি, এই লেখা আপনার চোখে পড়বে না।  পড়লে ভাল হতো, তাহলে আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর পেতাম।  সামাদ নামে যে যুবকটিকে কুচি কুচি করে কেটে হত্যা করা হল, হত্যার পরে আল্লাহু আকবর বলে দৌড়ে পালান ছেলেগুলোকে ধরতে পারলো না পুলিশ।  "আল্লাহ আকবর" বললে হত্যা কি জায়েজ হয়ে যায়? আপনি কখনও এই প্রসঙ্গে আসেন না কেন? আপনাকে যখন এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলা হয়, সর্বদা আপনি আমতা করে বলেন, কোন ধর্মেই বা বিশ্বাসে আঘাত দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য না!

ধর্মে বা বিশ্বাসে আঘাত দেওয়াটা ঠিক কী বলবেন আমাকে?

আমাদের ছোটবেলার একটা গল্প বলি।  আমরা বাচ্চারা খেলছিলাম স্কুলে।  টিফিনের সময়।  টিফিনের ৪০টা মিনিট জুড়ে, একে অন্যের গায়ে ধুলা লাগিয়ে ক্লাসে আসি। ধর্ম ক্লাস শুরু হল।  আমি জানতে পারলাম, আমার পাশের মেয়েটা, যার বেণি ধরে টানা হেঁচড়া করা হল, সে হিন্দু! আমার সামনের মেয়েটা, যার সঙ্গে বউছি খেলায় দমে পেড়ে উঠিনি সে খ্রিস্টান।  আমাদের ঐ ক্লাসটাতে আলাদা করে দিল।  আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ ঐ ক্লাসে বসেছিলাম, মন পড়ে রয়েছিল ঐ দুই প্রিয় বান্ধবীর কাছে।  সেদিন আমার আঘাত লেগেছিল মনে, ওটা কি ধর্মের আঘাত বলবেন?

আপনি ধর্মের বিরুদ্ধে লেখার জন্য যদি গ্রন্থ বন্ধ করতে চান, তাহলে সবার প্রথম বন্ধ করতে হবে ধর্মগ্রন্থকে! যারা একে অপরের সঙ্গে বিরোধী।  সনাতন ধর্মের কালচার আর বিশ্বাসের প্রতি আঘাত হানে ইসলাম, খ্রিস্ট ধর্ম।  বৌদ্ধকে প্রতিহত করে হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস।  এক ধর্মে পৌত্তলিকতা আছে তো আরেক ধর্মে নেই! এক ধর্মে ঈশ্বর আলাদা সত্ত্বা বলা হয়েছে আরেক ধর্মে ঈশ্বরের বিভিন্ন ফর্ম মানুষ!

বিশ্বে হাজার হাজার ধর্ম, হাজার হাজার বিশ্বাস।  একটার সঙ্গে আরেকটার মিল নেই।  খোদ ইসলাম ধর্মেই কতভাগ! সুন্নি, শিয়া, আহলে হক! এদের মধ্যেও নীতিগত কত তফাৎ! এক নীতি আরেক নীতিকে আঘাত করে? অথচ এরা সবাই মুসলমানই কিন্তু! তখনও তো ধর্মে আঘাত লাগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কেন শুধু অবিশ্বাসী বা অজ্ঞেয়বাদীকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়া করান! তারাও তো তাদের নিজেদের মত নীতিতে রয়েছে! এত হাজার হাজার বিরুদ্ধ নীতি নিয়ে সমস্যা নাই, শুধু নাস্তিক্যবাদ নিয়ে আপনাদের সমস্যা কেন?
একটা বিশ্বাস সেট করা আছে, যেটাকে আদর্শ ধরে বাকি সবগুলা ছেঁটে ফেলতে হবে! কিন্তু যে বিশ্বাস থেকে কাজগুলো করছেন, আর দশটা বিশ্বাস ওরকমই শত বছর ধরে মানুষের মনে চলে আসছে।  আপনি ওগুলোকে ছেঁটে ফেলতে চাইলে, সেটাও তো ধর্মে আঘাত দেওয়াই বলে!

যদি ধর্মে আঘাত দেওয়ার মূল হয় শাস্তি বা খুন করা! তবে একজন খ্রিস্ট খুন করবে হিন্দুকে, একজন মুসলমান খ্রিস্টকে, হিন্দু মুসলমানকে! ব্লগার বাদ দিন! সাধারণ প্র্যাকটিসিং বা নন প্র্যাকটিসিং মানুষের মধ্যেই হত্যা শুরু হয়ে যাবে।  বাহ সব হত্যা জায়েজ হয়ে গেল!

আজ একটা বিশ্বাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্য সব বিশ্বাসকে আঘাত বলছেন! আপনার বিশ্বাস যে ভাইরাস না, বিষ না, তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত!

দেশটা সব ধর্মের।  রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না থাকলেও মুসলমান মুসলমান থাকত, হিন্দু হিন্দুই, নাস্তিক নাস্তিকই।