চীনের নজর বাংলাদেশে

মাসুদ মিয়াজী
Published : 18 May 2018, 03:47 PM
Updated : 18 May 2018, 03:47 PM

সাম্প্রতিক সময়ে চীন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান মজবুত করতে জোরালোভাবে কাজ করছে। চীন এরকম পদক্ষেপে ঠিক এমন সময়ে বেগবান হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে অনেকটা আন্তর্জাতিক পরিসরে সীমিত করার চেষ্টা করছে। চীনের এমন উদ্যোগ অনেক রাষ্ট্রের জন্য আতঙ্কের কারণ হলেও কিছু দেশের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে চীনের কয়েক বছরের কর্মতৎপরতা এবং বর্তমান সময়ের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করলে আমরাও বোধহয় আশান্বিত হতে পারি।

২০১৬ সালে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং বাংলাদেশে আগমন করে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা বলে গেছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের ঐ সফর বাংলাদেশ ও ব্যাপক উৎসাহ এবং গুরুত্বের সাথে উদযাপন করেছে। চীনের সাথে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশীদার হতে বঙ্গদেশের মানুষেরও আগ্রহ কম নয়। আর চীন থেকে গত কয়েক বছরে বিনিয়োগ চুক্তির অপার স্রোতের মতই আসছে বলে জানিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী নেতা। যদিও তিনি পরক্ষণে বলেছেন কেবল সবই সম্ভাবনা, বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

কয়েকদিন আগের কথা, আমাদের শেয়ার বাজারে চীন এবং ভারতের বিনিয়োগ নিয়ে বহু জল্পনার তৈরী হয়েছিল। অনেকেই ক্ষতির আশংকা করছেন এমন বিদেশী বিনিয়োগে আবার কেউ কেউ আশান্বিত হচ্ছেন। আমার ক্ষুদ্রতর জানাশোনায় মনে হচ্ছে এমন কৌশলগত বিনিয়োগ আমাদের শেয়ার বাজারের জন্য খারাপ নয় বরং শুভ কিছুই হবে। কারণ এর ফলে বাজার ত্বরান্বিত হবে, নতুন নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আাসবে। ভালো কোম্পানি বিনিয়োগ করলে বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। আর যেহেতু তারা লাভের জন্যই বিনিয়োগ করছে ফলে তাদের মধ্যে এখান থেকে লাভ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকবে, এতে করে বাজারের ভালো অবস্থার পাশাপাশি ডিএসইরও আয় হবে।

শেষ পর্যন্ত জানা গেল চীনই ২৫ শতাংশ মালিকানার মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ পেয়েছেন, ভারত নয়। চীনের চেয়ে ভারতের বিনিয়োগের আর্থিক পরিমাণ কম ছিল। চীন ৯০০ কোটি বিনিয়োগ করবে, ভারতের প্রস্তাবে ৩০০ কোটির মত ছিল, যদিও সমান ২৫ শতাংশ মালিকানার কথা দু পক্ষই বলেছিল। তবে ডিএসই আরও অনেক হিসাব কষার পরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চীন বাংলাদেশে অবকাঠামোগত, তথ্য-প্রযুক্তিসহ অনেক ক্ষেত্রে কাজ করে চলছে। বড় বড় কিছু প্রজেক্ট চলমান রয়েছে তাদের। কর্ণফুলী নদীতে টানেল নির্মানে, পদ্মা সেতু প্রকল্প, আইটি খাতে তাদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। ২০ শতাংশ মালিকানা নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের। গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে আগ্রহের কথা বহু আগেই জানিয়েছে। আর রোড এন্ড বেল্ট ইনিশিয়েটিভের অন্যতম অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে নিয়ে তো পরিকল্পনা আছেই।

কথা হচ্ছে চীনের সাথে এত সব কিছুতে ভারতও নিশ্চয় খুশি নন। আর চীন তো চাচ্ছেই দক্ষিণ এশিয়ায় তার আধিপত্য বাড়াতে। পাকিস্তানের সাথে ইকনোমিক করিডোর, শ্রীলংকায় সমুদ্রবন্দর, মালদ্বীপের বন্দরে বিনিয়োগ, নেপালে বড় অংকের বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে ও ব্যাপক বিনিয়োগ করছে চীন। প্রকৃতপক্ষে ভারতমহাসাগর ও মালাক্কা প্রণালী ঘিরে চীনের যে রপ্তানি বাণিজ্যের জোন রয়েছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র বা শত্রু পক্ষ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই নতুন বেল্ট তৈরী করছে তারা।

চীন রাষ্ট্রের এমনসব বাণিজ্য পরিকল্পনা আমাদের জন্য প্রতিবেশী হিসেবে সুযোগ নিয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশের বড় বাজার, কম শ্রম মূল্য, সহজলভ্য শ্রমিক, কর সুবিধা এবং সর্বোপরি এখান থেকে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে পড়া চীনের জন্য সহজ বলে তারাও আগ্রহী। তবে খেয়াল রাখতে হবে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সফট কর্নার তদারকির অভাবে কখনো কখনো হার্ড কর্নারেও রূপান্তর হতে পারে। সময় এখন সবদিক ব্যালেন্স করে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার।