রাষ্ট্রের কাছে কে বেশি মূল্যবান একজন জীবনানন্দ নাকি আলী কেনান?

মাসুদ সজীব
Published : 31 May 2015, 06:49 AM
Updated : 31 May 2015, 06:49 AM

মহাকাশে কি ঘটছে তা কখনো জানা হয় না, কোন ধুমকেতু জ্বলে নিভে যায়, কোন নক্ষত্র ঝরে গিয়ে আরেক নক্ষত্র তার স্থান দখল করে নেয় তার খোঁজ পৃথিবী নামক ছোট গ্রহে বসে সবার পক্ষে রাখা সম্ভব না। মহাজগতের অন্যতম ক্ষুদ্র গ্রহের প্রায় অদৃশ্য মানচিত্রের অন্ধকারে ডুবে থাকা এই ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলে বসে মহাজাগতিক খোঁজ খবর কেউ রাখে না। জাগতিক হিসেব নিকেষে জীবন চলে এখানে, জগতের নিয়মের বাইরে গেলেই এখানে তলিয়ে যেতে হয় ঘৃনার ডাষ্টবিনে, ব্যর্থতার অাস্তাকূলে। যেমন নক্ষত্রের খোঁজ রাখতে গিয়ে ডুবে গিয়েছিলেন জীবনানন্দ জাগতিক ব্যর্থতার অতলে। জীবনানন্দ হয়ে উঠা হয়নি কখনো, তাই খোঁজ রাখা হয় না কিছুই, ডুবে থাকি তুচ্ছতায়, ক্ষুদ্রতায় কিংবা বলা যায় জাগতিক সাফল্য চেষ্টায়..! তবু সবখানে ব্যর্থতার বিষাদে ডুবে যাওয়া আমি, এইখানেও রাখতে পারিনি সফলতার ছাপ। জাগতিক ব্যর্থতায় তাই মাঝে মাঝে নিথর হয়ে যাই, দীর্ঘশ্বাসের কোমল স্রোতহীন ধানসিঁড়ি নদীর মতো মাঝে মাঝে ভেসে যাই কলমী লতা হয়ে কখনো বা উড়ে যাই সোনালি ডানার চিল হয়ে..!

কিন্তু এই জাগতিক জগতে ধুমকেতুর মতই দেখছি কিছু মানুষের উত্থান, যাদের বড় হয়ে ওঠা বেশ বিস্ময়কর লাগে। যার যোগ্যতা ছিলো না পাড়ার মোড়ে দোকানদার হওয়ার, তাকেই দেখি আজ নগরের বড় কবিদের দলে, বখে যাওয়ার পর যার জীবন ঠিকানা হওয়ার কথা ছিলো বন্দী চার দেয়ালে, তাকেই দেখি মুক্ত সমাজের শ্রেষ্ঠ অধিপতি হিসেবে। এধার-ওধার করে চলতো যে জন তাকেই দেখি আজ সমাজের সবচেয়ে উঁচু তলার বিশিষ্ট পরিজন। এদের কিংবা এদের মতো আরো কিছু ধুমকেতুর উত্থান আমার কাছে বিস্ময়কর লাগে। মহাকাশের প্রসারতা যতটা বিস্ময়কর হয়ে আসে, এদের উত্থানও ততটা বিস্ময় নিয়ে আসে..!

নগর থেকে গ্রামে চারিদিকে অসততার জয়জয়কার..চারিদিকে জাগতিক সাফল্যে চেষ্টারতদের জয়োৎসব। এটা যদি ও নতুন নয়, চিরকালই এমন হয়ে এসেছে এই বঙ্গে, এই ভূখন্ডে। তাই বিস্ময়কর হলেও এদের উত্থানে দু:খবোধ হয় না। কিন্তু এদের মুখে যখন নীতি কথা শুনি, এদের মুখে যখন ধর্ম, মানবতা আর দেশপ্রেমের বুলি শুনি তখন বেদনায় নীল হই, কষ্টে কাতর হই। অসৎ আয়ে বড় হয়ে, অসৎ পথে থেকে যারা সততার বুলি উড়ায়, অসততার স্বর্গে ডুবে থেকে যারা বিচারক হয় ন্যায়-অন্যায়ের আর সমাজে যখন তারাই সম্মানিত হয়, তখন নিজেকে ভীষন ব্যর্থ মনে হয়। এই ব্যর্থতা কখনো কখনো বড় বেশি অভিমানি করে তুলে, হতাশায় নিমজ্জিত করে দেয়। মাঝে মাঝে ভাবি এমন পচন ধরা সমাজে নষ্টদের উৎসবের মাঝে কি তলিয়ে যাবে বাংলাদেশ? নাকি দিনে দিনে নষ্ট আর অসৎদের পূর্ণ ভূমি হয়ে ওঠবে? এত নষ্টের মিছিলে, জাগতিক মোহকে পেছনে ফেলে কেউ কি হয়ে উঠতে চাইবে জীবনানন্দ, লেখবে ধূসর পান্ডলিপি, কুঁড়ি বছর পর কিংবা অবসরের গান? এই সমাজ আর রাষ্ট্র জীবন কালেই কি তাঁকে দেবে তাঁর পাবে প্রাপ্য সম্মান..? নাকি এই রাষ্ট্রের কাছে একজন জীবনানন্দ থেকে দামী থাকবে দলীয় কোরাসকারী আর ধর্ম ব্যবসায়ী আলী কেনান?