শিক্ষকতাঃ পেশা নাকি ব্রত? (পর্ব-১)

মাসুম আহম্মেদ
Published : 12 August 2012, 02:55 PM
Updated : 12 August 2012, 02:55 PM

শিক্ষকতা আসলে কি, পেশা না ব্রত? আজ এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা আমাদের বিবেকবানদের দায় বলে আমি মনে করি। কেননা আমরা সবাই এ পর্যায়ে আসতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের সাথ ে পরিচিত হয়েছি এবং যা কিছু আমাদের আজকের প্রতিষ্ঠা বা অর্জন তার মধ্যে বিগত দিনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও আমাদের নৈতিক মানবিক শিক্ষায় শিক্ষকদের ভুমিকা আমাদের জীবনে কমবেশি প্রভাবিত। আমার ব্যক্তিগত জীবনের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি- ১৯৮৮ সালের একটি টিউটরিয়াল ক্লাস শেষে আমার শিক্ষক মরহুম আব্দুল জলিল স্যার আমাকে একা ডেকে ব্যক্তিগত জীবনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চাইলেন এবং আমি অকপটে আমার ঢাকা ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কলকাতায় লাগেজ ব্যবসা এবং অপ-রাজনীতিতে ভুমিকা/অংশগ্রহণের সবকিছুই স্যারকে জানালাম। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে লাগেজ ব্যবসার কারণে আমাদের দেশের পোশাক শিল্পে জড়িতদের এবং দেশের কি কি ক্ষতি তার একটি ব্যাখা দিলেন, যা শুনে সেই ৮৮ সালেই লাগেজ ব্যবসা ছেড়ে দিলাম অথচ সেই সময়ে মাসে ৩ বার ৩ দেশে গেলে আসলে সব খরচ বাদে গড়ে ৩০ হাজার টাকা লাভ হত। সেটা করেছিলাম- সেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, নীতি-আদর্শের প্রতি আমার আনুগত্য এসেছিল বলেই। এমনকি তৎকালে ছাত্র রাজনীতির অপ-অংশের নেতৃত্ব দিয়েছি ১৯৯৬ সালের ২রা এপ্রিল বিকাল ৪-৫০ মি পর্যন্ত কিন্তু বাংলাদেশের কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তালিকায় বা অনুসন্ধানে একটি (সামাজিক অপরাধের বা ব্যক্তিগত অর্জনের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি বা বাড়ি, দোকান, সরকারী জায়গা দখল, নিজের ভোগের উদ্দেশ্যে কোন প্রকার অনিয়ম/প্রভাব বিস্তার) জি ডি পর্যন্ত আমাকে অপছন্দকারিও দেখাতে পারবে না যদিও ৬টি রাজনৈতিক মামলা আদালতে দাঁড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি, এতেও আমার পারিবারিক সদস্যদের (বিশেষত দাদা এবং বাবা) অবদান ছাড়াও তৎকালীন হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল মনসুর (মুসা )স্যারের ভুমিকা উল্লেখ করার মত।

আর আজকের দিনে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকের নিজেরই নাই কোন নৈতিকতা, নীতি আর মূল্যবোধের বালাই; এর অন্যতম কারণ আজকের শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে কেউ গ্রহণ করে না এবং উপায় নাই-দের টাকা উপার্জনের মাধ্যম মাত্র হিসেবে মনে করে। তাছাড়া শিক্ষকতায় জড়িতদের একটি বড় অংশ জীবনের প্রাথমিক দিকে অভাব-দারিদ্রতাকে মোকাবেলায় সংক্ষুব্ধ এবং পারিবারিক শিক্ষার অভাবী। উদাহরণ চাইলে ঢাকা শহরের নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডের কিছু তুলে ধরতে পারি এবং আমার আগামী লেখায় ইডেন কলেজের কতিপয় মহিলা শিক্ষকের কর্মকাণ্ড লিখব। কেননা আমি মনে করি- শিক্ষকতা কোন চাকুরী নয় এটা শিক্ষা দেয়ার মানসিকতা সম্পন্ন ব্রত। তারাই কেবল মানুষ গড়ার কারিগর, তাদের সম্মান মর্যাদা কতিপয় নামধারীর কারণে ধ্বংস হতে পারে না। তাই আজকের মত শেষ করছি; আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্ব লিখব।

-মাসুম আহম্মেদ
তারিখঃ ০৮/৮/'১২