রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা

মাসুম আহম্মেদ
Published : 3 Jan 2013, 06:17 PM
Updated : 3 Jan 2013, 06:17 PM

আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতি আজ দুর্বৃত্তদের দখলে, যা একদিনে হয়নি. '৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসকদের ক্ষমতা কে স্থায়ী করতে রাজনৈতিক পতিত, দুর্নীতিবাজ আমলা, কালোবাজারি ব্যবসায়ী এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব শুরু যা আজ তাদেরই দখলী সম্পত্তিতে পরিণত। রাজনীতি আজ আর ভাল মানুষের কাজ নয়; এমনকি ভাল মানুষ আজ সমাজচ্যুতও। বাম দলগুলোতে কিছু ভাল মানুষের রাজনৈতিক অবস্থান দেখা গেলেও বড় দলগুলোতে তার বিপরীত অবস্থান দেখা যায়। '৭৫ এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের পরে ক্ষমতার সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান, প্রখ্যাত রাজাকার শাহ্‌ আজিজ সহ রাজনৈতিক পতিতদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অংশীদার করে, যা থেকেই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের যাত্রা শুরু হয়ে আজকে রাজনীতি এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দুর্বৃত্তদের দখলে কবলিত। সেই থেকে 'অর্জনই যোগ্যতা' ধারণাটি প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করেছে। আজ নীতির স্থান দখল করে নিয়েছে দুর্নীতি। এমনকি সামরিক স্বৈরাচার '৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখলের পরে ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে অবশিষ্ট রাজনৈতিক পতিত এবং দুর্নীতিবাজ আমলা, কালোবাজারী ব্যবসায়ী সহ দেশের নষ্ট-ভ্রষ্টদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করে, যার ফলে নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম নেয়। যার পরিণতি আমরা ১৯৯০ এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনে দেখতে পাই। সেদিন জনগণ একটি লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে 'স্বৈরাচার খেদাও' আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল কিন্তু কি ঘটেছে জনগণের ভাগ্যে? আদৌ কি জন-আকাংখা বা জন-প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে? হয়নি বরং দেখা যাচ্ছে- গণতান্ত্রিক খোলসে নব্য স্বৈরাচার ভর করেছে আর যুক্ত হয়েছে আত্মীয়তা এবং আঞ্চলিকতা।

'৯০ সালে আন্দোলনের পরে দেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সত্যি কিন্তু স্বৈরাচারের নীতি পরিবর্তন হয়নি, যা হয়েছে তা হল- গণতন্ত্রের আবরণে বিগত ২২ বৎসরে পালাবদলের গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার সরকার বাস্তবায়ন করে চলছে। স্বৈরাচার আমলে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পিএসসি তে যোগ্য ,দক্ষ ,সৎ মেধাবীদের স্থান ছিল যা আজ নেই। এমনকি আত্মীয়, আঞ্চলিক বা দলীয় ক্যাডারদের ভাগ্য বদলে আজ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর যথেচ্ছা ব্যবহারে দুর্নীতি প্রতিটি স্তরে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে- রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠানে নগদ ঘুষ ছাড়া কোন সেবাই জনগণের ভাগ্যে জোটে না। কি ভাবে এর বিস্তার এবং প্রতিকারের পথ নিয়ে যারা ভাববেন, জাতির অভিভাবক বুদ্ধিজীবীগণও আজ দলীয় ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী হয়ে গেছেন। তাই এখন জনগণের সচেতনতা এবং প্রতিরোধে এগিয়ে আসা ছাড়া বিকল্প নেই। আজ এমন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে নাগরিক তার যোগ্যতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগের সুযোগ পায় ঘুষ ছাড়া! এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও আজ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে আক্রান্ত; কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বীজ বপন করে দিচ্ছে যা একটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের। রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদন করা কিন্তু আজ সবকিছুই বিপরীত। একসময় রাজনীতি করতেন সমাজের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সৎ ব্যক্তিরা; আজ রাজনীতি করে চোর বাটপার, জালিয়াত,নারী ও শিশু পাচারকারী, জালটাকা প্রস্তুতকারীগণ। উদাহরণ চান? কয়টি দেব? বর্তমান আওয়ামীলীগ ও বিএনপির চলমান কমিটির নেতৃবৃন্দের উপর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেই আমার বক্তব্য প্রমানিত হবে। শুধু রাজনীতি এদের ভাগ্য এবং অবস্থান বদলের নিয়ামক অন্যকিছু বা তাঁদের যোগ্যতা নয়। আজ সমাজ রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতিবাজ, অসৎদের জয়জয়কার; সৎ-যোগ্যরা আজ পিছনের সারিতে যা আমাদের মানবিক মুল্যবোধ অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোর পদায়ন ও হচ্ছে দলীয়, আঞ্চলিক ও আত্মিয়তার মাপকাঠিতে। যার ফলে দুর্নীতি-জালিয়াতি গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের ন্যায্য অধিকার। শেয়ার বাজার লুট, হলমার্কের সোনালী ব্যাংক লুট, ডেসটিনির উত্থান রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্যদের পদায়নের ফলেই সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও আজকাল প্রায়ই আমরা জাতীয় পত্রিকার খবরে দেখছি দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা প্রশ্ন ফাঁসের চক্রের প্রধান; শিক্ষকেরাও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত হচ্ছে! নৈতিকতার এই অবক্ষয়ের কারণ কি? দলীয় আঞ্চলিক আত্মীয়তার মাপকাঠিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে পদায়ন এর অন্যতম কারণ নয় কি? তাহলে সাধারণ নাগরিক যাবে কোথায়? স্বাধীনতা আমরা চেয়েছিলাম! কেন চেয়েছিলাম? পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকদের বৈরী বা বৈষম্য মূলক আচরণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য, নয় কি? কিন্তু আজ আমরা কি তা পেয়েছি! না পেয়ে থাকলে কেন পাইনি? তা আজ আমাদের অনুসন্ধান ও প্রতিকারের পথ খুঁজতে হবে। আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি না হবার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে জাতীয় নেতৃত্বের অভাব এবং বিবেকবান বুদ্ধিজীবীদের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ এবং কু শিক্ষিতদের বৈষয়িক সীমাহীন লোভ। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বৎসরের মাথায় আমরা জাতীয় নেতা শূন্য হয়েছি যা আজও পূর্ণ হয়নি, এমনকি জাতির অভিভাবক বুদ্ধিজীবীগন আজ নিজেদের বিবেক বিক্রি করে কথা বলেন- সামান্য স্বার্থ এক খানা প্লট বা রাষ্ট্রীয় কোন পদ পদবীর বিনিময়ে, যা একটি দেউলিয়া জাতির উদাহরণ মাত্র। বুদ্ধিজীবীদের পক্ষপাতী আচরণ আমাদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তি ক্রমেই বাড়িয়ে চলছে এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি তাঁদের পক্ষাবলম্বী বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয় পদে পদায়ন করছে পক্ষ অবলম্বনের মাত্রা বিবেচনায়। তাই আজ সত্য কথা সাহসের সাথে বলার কেউ থাকছেন না। শুধু তাই নয়- জাতীয় সংকটেও সার্বজনীন বক্তব্য দেন না আমাদের অভিভাবক তুল্য বুদ্ধিজীবীগণ। তাই আজ আমাদের ভাবতে হবে- আমরা কি দ্বি-দলীয় ক্ষমতার রাজনীতির বলয়েই ঘুরতে থাকব! নাকি স্বাধীনতার লক্ষ্য," জনগণের গণতন্ত্র, যেখানে যোগ্যতাই হবে সকল নাগরিকের অধিকারের মানদণ্ড, উত্তরাধিকার, আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা, ধর্মীয় বা দলীয় পরিচয় নয় " সে পথ খুজব ? তাই আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই- আজ ঐক্যবদ্ধতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।