পরিচয়
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
একদিন তরীখানা থেমেছিল এই ঘাটে লেগে
বসন্তের নূতন হাওয়ার বেগে।
তোমরা শুধায়েছিলে মোরে ডাকি,
"পরিচয় কোন আছে নাকি,
যাবে কোন খানে?"
আমি শুধু বলেছি "কে জানে!"
নদীতে লাগিলো দোলা, বাঁধনে পড়িল টান-
একা বসে গাহিলাম যৌবনের বেদনার গান।
সেই গান শুনি
কুসুমিত তরুতলে তরুণ তরুণী
তুলিল অশোক-
মোর হাতে দিয়ে তারা কহিল, "এ আমাদেরই লোক"।
আর কিছু নয়,
সে মোর প্রথম পরিচয়।।
তারপরে জোয়ারের বেলা
সাঙ্গ হল, সাঙ্গ হল তরঙ্গের খেলা;
কোকিলের ক্লান্ত গানে
বিস্মৃত দিনের কথা অকস্মাৎ যেন মনে আনে;
কনকচাঁপার দল পড়ে ঝুরে,
ভেসে যায় দূরে,
ফাল্গুনের উৎসব রাতির
নিমন্ত্রণ লিখন পাঁতির
ছিন্ন অংশ তারা
অর্থ হারা।।
ভাঁটার গভীর টানে
তরীখানা ভেসে যায় সমুদ্রের পানে।
নূতন কালের নবযাত্রী ছেলে মেয়ে
শুধাইছে দূর হতে চেয়ে,
"সন্ধ্যার তারার দিকে
বহিয়া চলেছে তরনী কে"?
সেতারেতে বাঁধিলাম তার;
গাহিলাম আরবার
"মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক,
আর কিছু নয়-
এই হোক শেষ পরিচয়"!