গনতন্ত্র স্বৈরাচার এরশাদ

সামিম
Published : 28 June 2012, 10:42 AM
Updated : 28 June 2012, 10:42 AM

আমার ছোট বেলার খুব প্রিয় একটা গানের কলি ছিল " বার লক্ষ তেত্রিশ কোটি রইল মা তোর বেটা বেটি, তাদের নিয়ে ঘর করিস মা ওদের করি করিস দাসি"। গানের চেয়ে তখন রাক্ষস খোক্ষস এর গল্প বেশী ভাল লাগত কিন্তু তার পরও সুর, তাল, লয় এসব কিছু না বুঝলেও এই গানটা সবসময় আমাকে শিহরিত করত। পরে জেনেছি ক্ষুদিরাম নামের এক যুবক বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে যেয়ে ফাঁসির মঞ্চে দাড়িয়ে এই গানটি গেয়েছিল। এর অনেক অনেক দিন পর আরেকটি গানের কলি আমার সমস্ত সত্ত্বাকে আন্দোলিত করেছে ১৯৮৮ ইং সনের প্রবল বন্যায় সাড়া দেশ যখন পানিতে ডুবেছিল তখন তৎকালিন রাষ্ট্রপ্রধান দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত অসহায় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এদশের যুব সমাজকে একত্রিত করতে গেয়ে ছিলেন " তোমাদের পাশে এসে/ বিপদের সাথি হতে আজকের চেষ্টা আমার/ তোমাদের সাথে নিয়ে/ সব ব্যাথা ভুলে গিয়ে আমিও যে হব একাকার"। আমি তখন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী । ১৯৮৫ সারা দেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। আমার আপন বড় ভাই ব্যাক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী চাঁদপুর সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কিন্তু ছাত্র রাজনীতির সাথে তেমন একটা সম্পর্ক নেই। তাহার ক্লাশ মেট এলাকার প্রভাবশালী একটি পরিবারের সন্তান জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত তার হাত ধরে আমরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মিছিল করতে যেতাম, ১০/১২ জনের খন্ড মিছিল, কোন একটা গলির মুখে আমরা বিক্ষিপ্ত ভাবি দাড়িয়ে থাকতাম এবং সুযোগ মত একজন রাস্তায় নেমে জ্বালো জ্বালো বলতেই চারিদিক থেকে আমরা একত্রিত হয়ে আগুন জ্বালো বলে দৌড়িয়ে মিছিল করতাম পুলিশ বা আর্মি তাড়া করলে বিভিন্ন গলিতে ঢুকে যেতাম। যেহেতু আমি তখন স্কুলের ছাত্র তাই পুলিশ ধরলেও আমি মিছিল করি নাই বললে তারা ছেড়ে দিত। ১৯৮৬ ইং সনে কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ি। কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আমার সেই রাজনৈতিক বড় ভাই ভিপি নির্বাচিত হন। আমি দেখেছি ছাত্র সংসদের টাকা কিভাবে লুট পাট হয়। দুই বছরের মাথায় আমি ছাত্র রাজনীতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হই। আমার নাম শোনেনি এমন লোক চাঁদপুরে খুব কমই পাওয়া যাবে। আমাকে অনেকে দেখেনি কিন্তু আমার নাম সবাই শুনেছে। মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে ঘুম পাড়ানোর জন্য আমার নাম উচ্চারন করত।

কিন্তু আমার এসব ভাল লাগে নি, তথাকথিত গনতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতারা আমাকে একজন নামকরা সন্ত্রাসী বানিয়ে ছেড়েছে। ১৯৯০ ইং সনের উত্তাল আন্দোলনে আমি রাজপথে থেকেছি গনতন্ত্রের রুপ দেখব বলে। একজন সন্ত্রাসী ছাত্রনেতা হয়ে অবৈধ পথে টাকা রোজগারের অনেক সুযোগ থাকলেও আমি সত্যিকারের একজন রাজনৈতিক নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি, রাজনৈতিক ইতিহাস পড়েছি, বিশ্লেষন করেছি নিজের মেধা দিয়ে, চেষ্টা করেছি সন্ত্রাসের পথ থেকে সরে নিয়মতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য। একজন সার্বক্ষনিক রাজনৈতিক নেতা না হলেও আমি সন্ত্রাসকে আমার জীবন থেকে বিদায় করতে পেরেছি যদিও এর জন্য আমাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। এটা করতে পেরেছি সাবেক রাষ্ট্র প্রধান পল্লীবন্ধু এরশাদের আদর্শকে যখন ১৯৯৩ সনে ধারন করি তার পর থেকে।

লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ যখন বলেন এরশাদ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে আমি খুজতে থাকি কোন ক্ষেত্রে এরশাদ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে? এরশাদের প্রবর্তিত উপজেলা পদ্ধতি ২০ বছর পর বতৃমান সরকার পুনরায় চালু করেছে এত কি মনে হয় না এই ক্ষেত্রে এরশাদ ২০ বছর এগিয়ে ছিলেন। এমনি ভাবে এরশাদের সকল কর্মকাণ্ড তুলনা করলে দেখা যাবে স্বাধীনতার পর বাঙ্গালীর স্বর্ণ সময় ছিল এরশাদের শাসনামল এরশাদের শাসন আমলে যদি যমুনা সেতুর সারচার্জ আদায় না করে তহবিল সংগ্রহ করা নাহত তাহলে স্বপ্নের সেতু স্বপ্নেই থাকত বাস্তবে হত না, বুড়িগঙ্গা সেতু মেঘনা ব্রিজ, গোমতী ব্রিজ আর কত বলব বলেন। ১৯৯১ ইং সনে যে গনতান্ত্রিক সরকার আসলো তাদের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ ই সনে যে গনআন্দোলন হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল, জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সে দিন মানুষ গন কারফিউ ঘোষনা করে সরকারের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছিল সে সরকারকে কি বলবেন। বিচারপতি সাত্তার যখন রেডিও টেলিভিশনে জাতির উদ্দ্যেশ্যে ভাষন দিয়ে বলেছে আমার মন্ত্রী পরিষদ দুর্নীতিবাজ এদের দিয়ে দেশ চলানো যাবে না তখন জাতীর সেই ক্রান্তিলগ্নে এরশাদ ক্ষমতা গ্রহন করেন পক্ষান্তরে অনেক রক্তপাত, ষড়যন্ত্র, হত্যা খুনের মধ্য দিয়ে জিয়া ক্ষমতা দখল করলেও তাকে আপনারা স্বৈরাচার বা সামরিক শাসক বলেন না কেন? কারন জিয়ার শাসনামলে এদেশের কোন উন্নতি হয় নি তাই বিদেশী প্রভু রাষ্ট্র যন্ত্রের কোন মাথা ব্যাথা ছিল না, জিয়ার সময়ে নির্বাচনে কতটি দল অংশ গ্রহন করেছিল ভেবে দেখবেন কি? অথচ জিয়াকে বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা বলেন।

আসলে আপনারা যারা এয়ারকন্ডিশন রুমে থাকে দামি গাড়ীতে চড়েন তারা গনমানুষের কাছাকাছি যেতে পারছেন না তাই তাদের মনের কথাও বুঝবেন না। একটা সস্তা সেন্টিমেন্টর লেখা লিখে প্রভুদের কাছ থেকে টাকা কামনোই আপনাদের কাজ ধিক আপনাদের বুদ্ধি বৃত্তিকে, ধিক আপনাদের অপসাংবাদিকতাকে।