লিমন, রাষ্ট্র, সরকার নাকি তৃতীয় পক্ষ

ভালবাসার দেয়াল
Published : 24 August 2012, 12:50 PM
Updated : 24 August 2012, 12:50 PM

বিশ্বের যে কোন চলচ্চিত্রের নায়কের সাথে ভিলেনের মারামারিতে দেখা যায় সাধারণত, নায়ক এর শরীরের কোন অংশে আঘাত থাকলে ভিলেন সে জায়গাটিতেই বেশি মারতে থাকে। এ এক স্বাভাবিক দৃশ্য। ছবি উপভোগ করতে থাকা দর্শক-গন তখন ভিলেনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নায়ক যেন তাকে তুমুল তুলোধোনা করে, সে প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করতে থাকে। আমাদের লিমন অথবা লিমনের পা হারানোর ঘটনাটি 'নায়ক', ভিলেন হয়ে গিয়েছে র‍্যাব কেউ কেউ বলে থাকেন রাষ্ট্র অথবা সরকার, আর দর্শক-গন হচ্ছি আমরা সাধারণ নাগরিক। এর মাঝে বলে নেই, ছবি হিট করার সহজ সূত্র হচ্ছে দর্শকপ্রিয়তা অবশ্যই। এক পায়ে ভর করে চলা লিমনের জনপ্রিয়তা তো তুঙ্গেই।

ঈদের ছুটিতে সারা দেশ যখন ছুটি কাটাচ্ছে, মিডিয়ায় নেই তেমন একটা সংবাদ, ঠিক সে সময়টাতেই লিমন এবং তার পরিবারের উপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ খোদ ঈদের দিন! বিষয়টা যখনই শুনেছি এবং দেখেছি গণমাধ্যমে, আমার কাছে প্রথমেই অনেক অনেক অবাক লেগেছে! আর মনে প্রশ্ন জেগেছে- এ কি করে সম্ভব!!! কিন্তু তা ঘটেছে। এরপরের আরও হাস্যকর ব্যাপার হল র‌্যাব এর সোর্স পরিচয়দানকারী ইব্রাহিম হাওলাদার এর শ্যালককে হত্যা করা হয়েছে এবং সে হত্যাকাণ্ডের আসামী করা হয়েছে লিমনকে!! ফলাফল ছবি আবারও হিট। আর আমরা আমজনতা আবারও নতুন করে শঙ্কায় ভুগি এবং ভুগছি। এ ছবির প্রযোজক অথবা পরিচালক কে কে তা অবশ্য চিহ্নিত করবে আমাদের কাছে সরকার, বলতে পারি অবশ্যই র‌্যাব।

এ দেশে বসবাস করা আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বর্তমানে আমি আতংকে আছি, শঙ্কা কাজ করে মনে, ভয়ে আছি কখন না জানি কি হয়ে যায়! এ দেশে একমাত্র ইলিয়াস আলী ছাড়া গাড়ি আছে এমন কয়জন গুম অথবা অপহরণ অথবা হত্যা করা হয়েছে, তার সঠিক হিসেব আমার জানা নেই। তবে আনুমানিক ধারনা করি- সাধারণ মানুষই বেশি গুম হয়েছে, অপহরণ হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যাদের বেশিরভাগেরই গাড়ি নেই এবং ব্যক্তিগত অথবা সরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় ছিল না, সেই সব সাধারনরাই বেশি বিপদে পড়ছে! তারা রাস্তা দিয়ে হাটে, পাবলিক যানবাহনে চলাফেরা করে অথবা করতে বাধ্য হয়, আর তাদেরকেই ভিকটিম করে অপরাধীরা। অথচ সাধারণেরই নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গিকার সবচেয়ে বেশি আমাদের সরকার অথবা রাষ্ট্রের। কিন্তু তা হয় না। এলিট শ্রেণীর মানুষরা এ দেশে নিরাপদ।

ঈদের গুটি কয়েকদিন আগে ব্যক্তিগত কাজে ঢাকা জেলারই অন্তর্গত একটি থানায় গিয়েছিলাম। ডিউটিরত অফিসারের সামনে বসা কালীন সে আধা ঘণ্টার পুরোটা সময়ই দেখেছি ভিভিআইপিদের প্রোটোকল এর দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে ব্যস্ত! সামনে ঈদ, স্যারদের যেন সময় নষ্ট না হয়। আমি সাধারণ নাগরিক একটি সমস্যা নিয়ে গিয়েছি আগে তা শুনবে কিনা সে নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। আগে এলিট ব্যক্তিরা যে রাস্তা দিয়ে যাবে তার প্রটোকল সময় নির্ধারণ করতেই ব্যস্ত। আমার বিরক্তি উনি বুঝতে পেরে প্রায় ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সময়টাতে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল- কি করবো বলেন, আগে উনাদের কথা শুনতে হয়!

শুরু করেছিলাম লিমনকে দিয়ে এখন এসে পড়লাম নিজের গল্প নিয়ে। মানুষ যখন কোন দুর্ঘটনা দেখে অথবা উপলব্ধি করে আগে নিজেকেই সেখানে একবার হলেও কল্পনা করে নেয়। এ মানুষের স্বাভাবিক মানসিক ভাবনার একটা সূত্র। লিমনের উপর আক্রমণ, নিজেকে লিমন ভাবতেই আগে তাড়া দেয় নিজস্ব ভাবনা থেকে। রাষ্ট্র অথবা সরকার অথবা দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ তা বুঝতে পারেন কিনা আমার জানা নেই। তবে এ ঘটনাগুলো যারা ঘটায় অথবা এর পেছনের নেপথ্যের কারিগররা জানে অবশ্যই জানে- কোথায় আঘাত করলে কি হবে অথবা এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে! তারা তা ঘটায় এবং নগ্ন হাসিতে উল্লাস করে বলেই মনে হয়। আর আমার রাষ্ট্র, আমার সরকার, আমার নিরাপত্তা বাহিনী হয়ে যায় সবার কাছে আতংকের, নির্ভরশীল-হীন, আস্থাহীন একটি অধ্যায়।

আবার এও ভাবনায় চলে আসে- বাংলাদেশ রাষ্ট্র হঠাৎ করে এই সময়ে কেন লিমনের প্রতিপক্ষ হবে, তা জানতে ইচ্ছে করে? রাষ্ট্র অথবা সরকার কি এর প্রতিক্রিয়ার ভবিষ্যৎ বুঝতে পারেন না!!! নাকি তৃতীয় কোণ পক্ষ লিমন এবং রাষ্ট্রকে নিয়ে নতুন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে অথবা করার চেষ্টা করছে। লিমনের মতন একটি সেনসিটিভ ইস্যু নিয়ে খেলার মতন নির্বুদ্ধিতা বাংলাদেশ রাষ্ট্রর অথবা সরকারের না থাকারই কথা বলেই মনে হয়। সরকার অথবা রাষ্ট্র কি এতটাই বোকা, লিমন যে একটি মৌচাক এবং এর সাথে অনেক মৌমাছি আছে। ঢিল ছুড়লে যে কামড় খেতে হবে। এতটাই বোকা আমাদের সরকার অথবা রাষ্ট্র, সে কামড় অথবা জ্বালাতনের মধ্যে ইচ্ছে করে তাড়া পড়বে!!!!!!!!!!

লিমন, রাষ্ট্র, সরকারকে নিয়ে খেলতে থাকা নেপথ্যের পরিচালক, প্রযোজকদের না চিহ্নিত করা গেলে। এরকম ঘটনা আরও ঘটতে থাকবে। একজন র‍্যাব এর সোর্স পরিচয়দানকারী ব্যক্তির যদি ক্ষমতা থাকে হত্যা মামলা করার। এর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার অভিযোগ লিমনের কাছ থেকে পুলিশ নেয়নি কেন, সে প্রশ্নে অবাক হয়ে যাই। সরকার যেহেতু সাধারণ ভাবনায় চাইবে না এ ঘটনা নিয়ে মাতামাতি হোক। কারা তাহলে এ খেলা খেলছে, তা বের করাই এখন সরকারের গুরু দায়িত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ইব্রাহিম এর মতন একজন সোর্স পরিচয়দানকারীর যদি জয় হয়, তাহলে কি ধরে নিবো এ সরকার অথবা রাষ্ট্রের অথবা শক্তিশালী নিরাপত্তা বাহীনির চেয়েও শক্তিশালী কেউ বিচরন করছে এ দেশটায়!!!

সাধু সাবধান!!!!