মানব কল্যাণে অর্থনীতি

মো: মশিউর রহমান
Published : 19 August 2017, 05:43 AM
Updated : 19 August 2017, 05:43 AM

যে কোন ধরনের অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় সবধরনের কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। যেখানে মানব কল্যাণ নাই সেখানে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ থাকাই উত্তম। স্রষ্টা তার শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষ কে যেমন সৃষ্টি করেছেন তেমনি এক নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া রেখেছেন। সে ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় প্রথমেই রয়েছে সর্বশেষ আসমানি কিতাব হিসাবে আল-কুরআন (মানবতার জীবন বিধান এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী) যে গ্রন্থের নির্ভুলতা সম্পর্কে মানবতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, রয়েছে ফেরেস্তা অর্থাৎ কেরামিন ও কাতিবিন যাদের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয় (যা পুরটাই বিশ্বাস), মৃত্যু এবং মৃত্যুর পড়ে বেহেস্ত এবং জাহান্না্ম (যা পুরটাই বিশ্বাস)। এই ব্যবস্তাপনার কিছু অংশ বিশ্বাস এবং কিছু অংশ চোখে দেখা সত্য। যে সত্য মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভাবায় তা হল আল-কুরআন এবং মৃত্যু। যে জন্মেছে সে নিসন্দেহে মৃত্যুর সাধ গ্রহন করবে। যেহেতু এই নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া থেকে কোন মানুষই বের হতে পারবে না তাই মানবতার অকল্যাণ হয় এমন কোন কার্যকলাপই মানুষের কর্মের বিষয় হতে পারে না। একই কারনে অর্থনীতির বিষয়বস্তুও মানুষের কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সিমাবদ্ধ থাকা বাঞ্ছনীয়। মানবতার অকল্যাণ হয় এমন কোন বিষয় অর্থনীতির আলোচনার বিষয় হতে পারে না। এর পরেও যদি কেউ যদি মানবতার অকল্যাণমূলক বিষয়কে অর্থনীতির আলোচনার বিষয়ে পরিনত করে সে মূলত অন্যায়ের প্রতিনিদ্ধ করে।

মানব কল্যাণে অর্থনীতির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কয়েকটি ধারনা দেয়া হল –

আয় – প্রতিটি মানুষ জীবিকার জন্য আয়ের সন্ধান করবে এটা খুবই স্বাভাবিক তবে তার আয়ের উৎস হতে হবে মানব কল্যাণ। মানব কল্যাণ হয়না এমন কোন উৎস থেকে আয় করা যেমন বৈধ নয় তেমনিভাবে অর্থনীতির আলোচনার বিষয়ও নয়।

ভোগ – প্রতিটি মানুষের আয় থেকে ভোগ করার অধিকার থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অপচয় করা যেমন অন্যায় তেমনি কৃপণতা করে অর্থ সঞ্চয় করাও অন্যায়। ভোগ বাড়লে ব্যবসায় বাড়ে আবার অতিরিক্ত ভোগ মুদ্রাস্ফ্রিতির সৃষ্টি করে অন্যদিকে ভোক বন্ধ করলে মন্দার সৃষ্টি হয়। এসব কারনে প্রত্যেকের উচিৎ কাম্য মাত্রায় ভোগ করা। অর্থনীতিতে ভোগ নিয়ে উপরের নীতির আলকেই আলোচনা করতে হবে।

উৎপাদন – উৎপাদন বলতে উপযোগ বৃদ্ধিকে বুঝায়। বিলাস দ্রব্যের উৎপাদন কমিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে একজনের ভোগ অপেক্ষা যেমন দশজনের ভোগ বেশি হয় তেমনি ভাবে স্থায়ী উন্নয়নের জন্যও সহায়ক। তাই বেশি পরিমান উৎপাদনও হতে হবে সবার ভোগের উপযোগী পণ্য ও সেবা। মানবতার অকল্যাণ হয় এমন দ্রব্যের উৎপাদন বন্ধ রাখাই শ্রেয় যদিও অনেক বেশি আয়ের সুযোগ থাকে। অর্থনীতির আলোচনার ক্ষেত্রে এই নীতির অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য।

বিনিময় – বিনিময় হতে পারে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্র। বিনিময়ের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার দাম বৃদ্ধি পায় এবং যারা এই বিনিময়ের সাথে জরিত থাকে তাদের আয় বৃদ্ধি পায়। অবৈধ তথা মানবতার অকল্যাণ হয় এমন সব দ্রব্যের বিনিময় থেকে বিরত থাকতে হবে। একই ভাবে যে বস্তু দেখা যায় না কিংবা এখনও সৃষ্টি হয়নি ঐ সব বস্তুর বিনিময় থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়ও এই নীতির আলোকে হওয়া উচিৎ।

বণ্টন – উৎপাদিত সম্পতিকে সম্পর্কযুক্তও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেয়াকেই বলে বণ্টন। বণ্টনের ক্ষেত্রে সরাসরি উৎপাদনের সাথে যুক্ত না হয়েও তৃতীয় আরেকটি পক্ষ সংযুক্ত হয় তারা হল দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সম্পত্তির একটি অংশে এদের আধিকার থাকবে। যাকে আমরা অন্য ভাবে বলি সামাজিক দায়বদ্ধতা। সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করার মাঝে যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনি পালন না করার মাঝে অনেক অসুবিধাও আছে। অন্যতম অসুবিধা হল সম্পত্তি ও জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া। কারন মানুষ যখন খুদার্ত থাকে সে তখন খুব সহজেই অন্যের জন্য হুমকি হয়ে দ্বারায়। অর্থনীতির আলোচনার ক্ষেত্রে বণ্টনের এই নীতির অনুসরণ অবশ্য কর্তব্য।

নীতি ও অনৈতিকতার পার্থক্য করা সত্যিই একটি জটিল ও দুরহ কাজ। কারন একই দ্রব্য কারো জন্য বিলাস দ্রব্য আবার কারো জন্য প্রয়োজনীয়। এজন্য সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হল আল-কুরআনকে নীতি ও অনৈতিকতার পার্থক্য হিসাবে মেনে নেয়া যেহেতু এই গ্রন্থের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে আজও কোন দ্বিধা নাই।