সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষের জন্য উত্তম পেশা হল ব্যবসা। ব্যবসা শব্দটি যত ছোটই হউক না কেন এর বিশালতা অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। সাধারণ ভাবে ধরে নেয়া হয় ব্যবসায়ী অনেক স্বাধীন। ব্যবসায়ী কারো কর্মচারী নয়, অন্যের নির্দেশ মানতে বাধ্যও নয়। তাহলে কিসের পরাধীনতা?
সত্যি, ব্যবসায়ী অনেক স্বাধীন। তবে তাকে হতে হয় দায়িত্বশীল। কারণ অদৃশ্য হাত তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ অদৃশ্য হাত হল চাহিদা ও যোগান (ক্রেতা–বিক্রেতা)। এটা এতই শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক যে একজন ধনী ব্যবসায়ী রাস্তার ফকিরও হয়ে যেতে পারে অপরদিকে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনেক বেশি ধনীও হতে পারে। অবাক করার মত এক নিয়ন্ত্রক। তাই স্বাধীন কিন্তু দায়িত্বশীল হতে হয় ব্যবসায়ীকে। এখন দেখা যাক কি কৌশল একজন স্বাধীন ব্যবসায়ীকে সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত করে।
প্রথমত, পণ্য ও সেবা ঠিক করতে হবে। অনেকেই বেশি লাভ কিংবা সম্মানের উদ্দেশ্য এমন সব ব্যবসায় মনোযোগ দেয় যার উপর তার ভাল দখল (জানা) নাই। এটা ভুল ব্যবসায়ী পরিকিল্পনা। একটি ছোট পণ্যেরও রয়াছে আন্তর্জাতিক বাজার। তাই যে পণ্য কিংবা সেবা সম্পর্কে ভাল জানা আছে এমনসব পণ্য বা সেবার ব্যবসায় করাই উত্তম পরিকল্পনা।
দ্বিতীয়ত, যে পরিবেশে ব্যবসায় শুরু করতে চান সে পরিবেশ অর্থাৎ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানুষের চাহিদা সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিতে হবে। মনে রাখতে হবে বাজারে প্রচুর তথ্য পাওয়া যাবে আর মধ্য থেকে বাছাই করে নিতে হবে কোন কোন তথ্য সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজন আর কোনটি প্রয়োজন নয়। এ কাজে প্রয়োজনে গবেষকদের সাহায্যও নেয়া যেতে পারে।
তৃতীয়ত, সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে। এই সম্পর্ক সৃষ্টির ক্ষেত্রে এমনভাবে পণ্য বা সেবার অফার সাজাতে হবে যাতে করে ক্রেতার অন্তরে জায়গা করে নেয়া যায়। ক্রেতার অন্তরে কোন পণ্য বা সেবা তখনই জায়গা পায় যখন সে তার প্রত্যাশার সমান বা বেশি তৃপ্তি পান। এজন্য সমস্ত মানুষের জন্য একই মানের পণ্য বা সেবা ডিজাইন না করে সম্ভাব্য ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ভাগ করে নিতে হবে এবং টার্গেট ক্রেতা ঠিক করে তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবার সরাবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
চতুর্থত, পণ্য, সেবা এবং কোম্পানির জন্য বিশেষ রং, সাইন, সিম্বল ঠিক করতে হবে যাতে করে সবাই দেখার সাথেই চিনতে পারে। অনেকেই একে বলে ব্রান্ডিং।
পঞ্চমত, বাজারে পণ্য বা সেবার অফার নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
এখানে উপরের আলোচনার আলোকে পণ্য বা সেবার বৈশিষ্ট্য ঠিক করে নিতে হবে এবং দাম ঠিক করতে হবে। মনে রাখতে হবে দামের ক্ষেত্রে টার্গেট ক্রেতা, তাদের চাহিদা, প্রতিযোগীদের দাম এবং সামাজিক দায়বদ্ধতাকে। এই সবগুলো চিন্তা মাথায় রেখেই একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ দাম ঠিক করতে হবে।
ষষ্ঠত, যে ভ্যালু (পণ্য ও সেবা) মানুষের মনে সৃষ্টি করা হয়েছে তা এখন তাদের মাঝে সরাবরাহ করতে হবে। সরাবরাহ করার ক্ষেত্রে এমনভাবে খুচরা বিক্রেতা ঠিক করতে হবে যাতে করে ব্যবসায়ী তার নিজের কৌশল কিংবা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।
সপ্তম পর্যায় এসে নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে হবে।
সবক্ষেত্রে চারটি সাধারণ নীতি মেনে চলতে হবে। আর তা হলঃ ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সেবা, প্রতিযোগিতাপূর্ণ দাম, দ্রুততম সময়ে সরবরাহ এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা।
এভাবেই একজন স্বাধীন ব্যবসায়ী সফল ব্যবসায়ীতে পরিণত হতে পারে।
মোঃ মশিউর রহমান, ব্যাংকার।