মানিকগঞ্জে বায়োচার প্রকল্পে লাভবান চাষীরা

মো: শাহিন রেজা
Published : 26 April 2019, 01:26 PM
Updated : 26 April 2019, 01:26 PM

ভূগোল ও পরিবেশের ছাত্র হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রশিক্ষণে  অংশ নিই নতুন কিছু জানার উদ্দেশ্যে। আমার সঙ্গে এই প্রশিক্ষণে আরো ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা।

দিনব্যাপী আয়নুন নিশাত স্যার, শারমিন নাহার নিপা ম্যাডাম, রউফা খানম ম্যাডাম আমাদের ক্লাইমেট চেঞ্জ সায়েন্স, ইমপ্যাক্ট, এডাপটেশন, মিটিগেশন, ডেটা ম্যানেজমেন্টের উপর লেকচার দিলেন। আমরা জানতে পারলাম, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকারের প্রাকৃতিক দূর্যোগ সংগঠিত হচ্ছে।

ক্লাসের পর জানা গেল ফিল্ড ওয়ার্ক আমাদের যেতে হবে মানিকগঞ্জ। আমাদের টিম লিডার ছিলেন শারমিন নাহার নিপা ম্যাডাম।

আমরা সকাল ৮:৩০টায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সকালের নাস্তা করে ১১টায় সিসিডিবি মানিকগঞ্জে পৌঁছালাম। সিসিডিবির এক কর্মকর্তা তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের কিছু ধারণা দিল। নিপা ম্যাডাম আমাদের সারাদিনের কর্মসূচি বুঝিয়ে দিলেন।

প্রথমে আমরা রওনা হলাম ঘিওর উপজেলায় একটি কৃষিক্ষেত পরিদশর্নে। সেখানে সিসিডিবি উদ্ভাবিত বীজ (চাষীর হাসি) এবং শুকনো বীজতলা পরিদর্শন করলাম। জলবায়ূ পরিবর্তন সহনশীল পলিথিন আবৃত ধানের শুকনা বীজতলা তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিলেন ম্যাম ও এক চাষি।

চাষীরা আমাদের জানালেন, বর্ষায় যেন পানিতে তলিয়ে না যায় এমন জাতের ধান চাষ করছেন তারা। অতি কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বীজ অঙ্কুরোদগমে ব্যাঘাত করে কিন্তু শুকনা বীজতলার ফলে কুয়াশাতে কোনো সমস্যা হয় না তাদের।

কৃষিক্ষেত পরিদর্শনের পর আমরা আবার রওনা হলাম সিসিডিবির উদ্দেশ্যে। দুপুরের খাবার খেয়ে শিবালয়ের চশচিড়ায় সিসিডিবির বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম দেখলাম। এর মধ্যে কেঁচো সার তৈরির প্রক্রিয়া ও কৌশল, সিসিডিবির নতুন প্রযুক্তির আখা (কৃষিবান্ধব চুলা) ও বায়োচার উৎপাদন পদ্ধতি অন্যতম। পরে বায়োচার উৎপাদন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বায়োচার সিসিডিবির একটি নতুন প্রজেক্ট। এটি ব্যবহার করে মাটি থেকে হারিয়ে যাওয়া জৈব শক্তি ফিরিয়ে আনা যায়। আখা ব্যবহার করে বায়োচার উৎপাদন করা হয়।

প্রজেক্টের ম্যানেজার কৃষ্ণ কুমার সিংহ বলেন- মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি ছাড়াও বায়োচার ব্যবহার জনগণের জীবনযাত্রার মান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও কার্বন নিঃসরণে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

বায়োচার মাটির অম্ল দূর করতে সাহায্য করে, মাটিতে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে মাটিতে অবস্থানকারি বিভিন্ন অণুজীবকে সক্রিয় করে। পরবর্তিতে আমরা দূর্গারাণী দাসের বাড়িতে আখা জ্বালিয়ে বায়োচার তৈরির পদ্ধতি পরিদর্শন করি।

বায়োচার মূলত মৃত্তিকা সংশোধক হিসাবে ব্যবহার করা হয় এবং এটি কাঠ কয়লার মত দেখতে। এটি কৃষি উৎপাদন বাড়ায়, জলবায়ূ পরিবর্তন প্রশমনে ও মাটির বহনযোগ্য রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে।

সিসিডিবির উদ্যোগে ৩৭ জন গৃহিনী আখা ব্যবহাররের মাধ্যমে রান্নার পাশাপাশি বায়োচার উৎপাদন করছে। বায়োচার প্রজেক্টের সাথে সম্পৃক্ত কৃষকদের সাথে কথা বলে জানতে পারি ৭০ জন কৃষক ও কৃষাণী এই বায়োচার ব্যবহার করে কম খরচে সবজি ও ফসল উৎপাদন করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।

এরপর ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরার পালা আমাদের। ঢাকায় ফিরে মাঠকর্ম নিয়ে নিজেরা বিস্তারিত আলোচনা করে রিপোর্ট তৈরি করে জমা দেই।  সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের প্রশিক্ষণ।