শখের বশে ছবি তুলতে শুরু করেছিলেন তিনি। তারপর হলে উঠলেন ক্যাম্পাসের জনপ্রিয় ফটোগ্রাফার।
ক্যাম্পাসের আলোকচিত্রী হয়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশে বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান নূরের সাথে আলাপে বসে জানলাম তার ছবির গল্প।
ছবি তোলার শখ ছিল বরাবরই। কিন্তু ক্যামেরা ছিল না। মাঝে মাঝেই বন্ধুদের ক্যামেরা নিয়েই ছবি তুলতেন আসাদুজ্জামান নূর।
তিনি বললেন, "২০১৭ সালে আমি ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনি, তখন থেকে আমার ফটোগ্রাফির যাত্রা শুরু।… ক্যামেরা হাতে পেয়ে আমি নিজের মত ছবি তোলা শুরু করলাম।"
সবুজ ঘেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ও প্রকৃতির ছবি তুলতে শুরু করেন আসাদুজ্জামান নূর। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ফেইসবুক গ্রুপে সেসব ছবি পোস্ট করতেন।
"ছবি তুলতাম আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের 'আমরাই জাহাঙ্গীরনগর' ও 'শুধুই জাহাঙ্গীরনগর' গ্রুপে পোস্ট করতাম", বললেন তিনি।
এরপর অনেক কাছ থেকেই প্রশংসা পেতে শুরু করেন। আর তাতে ছবি তোলার আগ্রহও বাড়তে থাকে আসাদুজ্জামানের।
আসাদুজ্জামান বলেন, "আমার নিজের চেয়ে অন্যদেরই আমার ছবির প্রতি আগ্রহ বেশি ছিল। আমার ফেইসবুকের বন্ধুরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের ভালোবাসাই আমাকে ছবি তুলতে, ফটোগ্রাফি করতে উৎসাহি করেছে।"
আলাপে আলাপে জানলাম আসাদুজ্জামানের কিছু মজার স্মৃতিও; ছবি তুলতে গিয়েই সে সব মজার স্মৃতি জমেছে তার ঝুলিতে।
আসাদুজ্জামান বললেন, "ক্যাম্পাসের বৃষ্টির ছবি তুলতে বের হয়েছিলাম। একটি কাপল ছবি তুলেছিলাম। গ্রুপে আপলোড দেওয়ার পর জানতে পারি তারা কাপল না। অন্য দিকে ছবিটি দেখে মেয়েটির রিলেশন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে! পরে আবার সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।"
ছবি তোলার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটিকে সব সময় 'উপযুক্ত' মনে হয় আসাদুজ্জামানের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, "আমার ফটোগ্রাফির পূর্ণতা দিয়েছে জাবি ক্যাম্পাস। বসন্তের শুরুতে কোকিলের ডাক, আর ফুলের সমারোহে সাজে ক্যাম্পাস; কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, কাঠগোলাপ….।
"পশু-পাখির অভয় অরণ্য বলা যায় জাবিকে। শেয়াল, টিয়া, হলদে পা হরিয়াল, কাঠবিড়ালি সব কিছুর দেখা মিলবে এই ক্যাম্পসে।"
আসাদুজ্জামান নূরের ছবি দেখে যারা উৎসাহ দেন, তারা 'অনুপ্রেরণা' বলে জানালেন তিনি।
"একবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গ্রুপে ছয়টি ছবি পোষ্ট করেছিলাম। সেই ছবিগুলোতে ক্যাম্পাসের অনেক বড় ভাই-আপু, বন্ধু-বান্ধবী, ক্যাম্পাসের জুনিয়র কমেন্টে ছবির প্রশংসা করেছিল। অনেক সিনিয়র-জুনিয়র আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল। বিশেষ করে যে সব বড় ভাই-আপুরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন তারা ক্যাম্পাসে আসলে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। এরকম ভালোলাগার অনেক গল্প আছে", বললেন আসাদুজ্জামান।
এরমধ্যে তিনি অংশ নিয়েছেন ক্যাম্পাসের ফটোগ্রাফিক সোসাইটিতে। ফটোগ্রাফি নিয়ে 'অনেক বড়' হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, "এখন ছাত্র আছি, বেকারও। বিভিন্ন সময় ছবি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হয়, ছবি সিলেকশন হয়, অর্থাভাবে কিংবা সময়ের অভাবে অংশগ্রহণ করা হয় না। কোনো একটা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর ঐ দিকে মনোযোগ দেব।"
নিজের স্বপ্নে কথা জানিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, "আমি সাধারণত পাখি, ফুল, সাপ, শিয়াল, কচ্ছপ, প্রকৃতির ছবি তুলতে পছন্দ করি। সাথে বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাস নিয়ে ভিডিও তৈরি করি; যেটা প্রায় সবাই পছন্দ করে, বিশেষ করে যারা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকেন। আর এগুলো নিয়েই আমি যেতে চাই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।"