কাগজি মুদ্রার ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ হুমকি

মো. উজ্জ্বল
Published : 20 April 2016, 07:31 PM
Updated : 20 April 2016, 07:31 PM

মুদ্রার প্রচলন হওয়া পূর্বে মানুষ নিজেদের প্রয়োজন মিটানোর জন্য পশু শিকার ও প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন দ্রব্য সংগ্রহ করত।কিন্তু সব প্রয়োজন মিটানো সম্ভব হতোনা, কেউ পশু শিকারে দক্ষ হলেও অস্ত্র বানাতে পারত না, আবার অস্ত্র বানাতে পারলেও শিকার করতে পারত না মানে সবাই কাজ পারতো না। এই জন্য শুরু হয় পরস্পর সহযোগীতা, যে ভাল শিকার করতে পারতো তাকে অস্ত্র দেওয়া হতো বিনিময়ে সে পশু দিত।এই বিনিময় প্রথাকে "বার্টার সিস্টেম" ও বলা হয় যা খুব বেশি দিন ঠিকে নি , কারণ অস্ত্র দাতা কে যে পশু দেওয়া হতো তা দিয়ে সে সন্তুষ্ট হতো না শুরু হয় অসামঞ্জসতা দরকার হয় সাধরণ বিনিময় মাধ্যমের। বিনিময় প্রথার আরও কিছু সমস্যা ছিল মূল্য জমা বা স্থানান্তর করা যেত না। সাধারণ বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কালক্রমে প্রচলন হয় দুস্প্রাপ্য শামুক ,ঝিনুক ও বিভিন্ন ধরণের কড়ি । তার ও অনেক পর আসে সোনা ও রুপার মুদ্রা। ওজনে উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ করা হতো। যা "গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড" নামে পরিচিত ছিল। মানুষের কাছে যখন অনেক সোনা জমা হতো নিরাপত্তার জন্য তারা ঐ সময়ের স্বর্ণকার ও মহাজনদের কাছে জমা রাখত প্রমাণ হিসেবে পেত কাগজের রশিদ। স্থানান্তর ও বহন জনিত কারণে মানুষ ঐ রশিদ ব্যবহার শুরু করে যার বর্ধিত রুপ হচ্ছে কাগজি মুদ্রা। মূলত সুইডেনের "স্টকহোম" ব্যাংক প্রথম কাগজী মুদ্রাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। তারপর থেকে সাধারন বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে তার কারণ সহজে বহন যোগ্য,লেনদেনের সহজ মাধ্যম ও মূল্য মজুত করা যায়।শুধু সুবিধাই না চুরি ডাকাতির ভয় ও ছিল। আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য আধুনিক ব্যাংকগুলা বিভিন্ন ধরণের চেক প্রবর্তন করে।

হাজার বছরের বিবর্তনের ফলে যে কাগজের মুদ্রা আমরা ব্যবহার করছি তার ভবিষ্যৎ বর্তমানে হুমকির মুখে।সারা বিশ্বে উল্লেখযোগ্য পরিমান লেনদেন হয় অনলাইন প্রক্রিয়ায় মানে শুধুমাত্র কয়েকটি অংক স্থানান্তরের মাধ্যমে যেখানে কোন কাগজি মুদ্রার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সকল প্রকার লেনদেন সম্পন্ন করা যায় কাগজি মুদ্রার কোন প্রয়োজন নাই।

উন্নত বিশ্বে পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, বেশি ভাগ মানুষ অনলাইন লেনদেন করতে চায়। তার যথেষ্ট কারণ ও আছে যেমন একজন সপ্তহে ৭ দিন ও দিনে ২৪ ঘন্টা লেনদেন করতে পারে। যে কোন জায়গায় বসে লেনদেন সম্পর্ণ করা যায়। সম্প্রতি ইউ এস এ এর একটি গবেষণায় দেখাযায় যে, শতকরা ৭৫ জন লোক অনলাইন লেনদেন করতে আগ্রহী।

অপরদিকে, ইউএসএ আইডি কর্তৃক ২০১৫ সালে প্রকাশিত অন্য এক গবেষণায় দেখা যায় যে, অনলাইন লেনদেনের সংখ্যা ২০১৩ সালে ১০ মিলিয়ন থেকে ৭৭ মিলিয়নে পোঁছায়, ২ বছরে লেনদেন বৃদ্ধি পায় ৬৭ মিলিয়ন । যা থেকে এটাই পরিস্কার বুঝা যায় যে, কাগজী মুদ্রার ব্যবহার আগামী কয়েক বছরের মধ্য নাটকীয় ভাবে হ্রাস পাবে।এই প্রতিবেদনে আরও উঠে আসে যে, ৭৭ শতাংশ মানুষ তাদের বিল পরিশোধের জন্য অনলাইন কেই বেঁচে নেয় এবং স্কুলের বেতন প্রদান করতে ৬০ শতাংশ লোক অনলাইন পছন্দ করে।

অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ ও আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে যাচ্ছে, অধিক গ্রাহক ও মুনাফার আশায় তারা তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে যা মানুষ কে কাগজী মুদ্রার ব্যবহার থেকে মুখ ফিরিয়ে অনলাইনে লেনদেন করতে আহ্বান করছে।কিছু অসুবিধা যেমন হ্যাক বা সাইবার ঝুঁকি ছাড়া আন্যান্য সমস্যা না থাকার কারণে মানুষ বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে।

উল্লেখিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে এটাই আশঙ্কা হয় যে অদূর ভবিষ্যতে লেনদেনের ভিত্তি হিসেবে থাকবে মাত্র কিছু ডিজিট বা অংক যা স্থানান্তরের মাধ্যমে শেষ হবে আমাদের লেনদেন। কাগজি মুদ্রা। সে তো থাকবে ইতিহাস হয়ে, যে মানুষ এক সময় কাগজি মুদ্রা ব্যবহার করতো।