জাবিতে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি কতটুকু যৌক্তিক?

মেফতাউল ইসলাম
Published : 11 Sept 2012, 07:14 AM
Updated : 11 Sept 2012, 07:14 AM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলে, ঢাকা হতে অদূরে অবস্থিত হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীরই আশা থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হবেন। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অস্থিরতা শিক্ষার্থীদের মনে বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে ধীরে ধীরে বিরূপ মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর বিশ্ববিদ্যালটিতে নতুন নির্বাচিত ভিসি আসলেও তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন বলে অনেকেই বিরাগভাজন হয়েছেন। আবার নবনির্বাচিত ভিসি নিজেও বিশ্ববিদ্যালটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে খুব বেশি বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারছেননা। যার ফলে নবনির্বাচিত ভিসি নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন। আবার কেউ কেউ ভাবছেন জাবিতে এত প্রবীণ ও বিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী থাকতেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় হতে ভিসি নিয়োগ দেওয়া কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ফলে অনেক কাজের ক্ষেত্রেই তিনি শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের তোপের সম্মুখীন হচ্ছেন। যেমন ১০ সেপ্টেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় মাননীয় ভিসি মহোদয় ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই সভাকক্ষ ত্যাগ করেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ ¯স্নাতক (সম্মান) শ্রেনীর ভর্তি পরীক্ষার ফরমের মূল্য ব্যপক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে যেটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সাথে সাথে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডাক দিয়েছে কঠোর আন্দোলনের। প্রতিটি অনুষদে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও কলা ও মানবিকী অনুষদের ভর্তি ফরমের মূল্য লাগাম ছাড়া। পাশাপাশি এ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। অন্যান্য অনুষদ গুলোতে ইউনিট ভিত্তিক পরীক্ষা হলেও এবছর থেকে এ অনুষদের অধীনে থাকা ৯টি বিষয়ের পরীক্ষা হবে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে(বিষয়ভিত্তিক)। এ বছর সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ, জীব বিজ্ঞান অনুষদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ভর্তি আবেদনের মূল্য ৩৩০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৪০০ টাকা এবং ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ- জেইউ), ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) ও আইন অনুষদের আবেদনের মূল্য ২৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে কলা ও মানবিকী অনুষদের ৯ টি বিষয়ে আবেদনের জন্য ২০০ টাকা করে ১৮০০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকেন, কিন্তু এভাবে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করলে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিটের ভর্তি ফরম ১৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হলে অনেক মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীই ওই ইউনিটের ফরম তোলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। আর অভিনবহারে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের পথ উন্মুক্ত করতে পারে।

যাহোক, এবার কোন যুক্তির আলোকে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হল তা এখনও আমাদের নিকট অজানা। শুধু কয়েকটি প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ফরমের উদ্বৃত্ত মূল্য নিয়ে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করা হবে না শিক্ষকদের নিজ পকেটে সেই অর্থ যাবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করার জন্য সরকার রয়েছেন, সেখানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদেরকে ফাঁদে ফেলে কেন এই অর্থ আদায়ের মানসিকতা? ঢাকা, জগন্নাথের মত বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি না করে চলতে পারে তাহলে কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হল? জাহাঙ্গীরনগরের অর্থনৈতিক অবস্থা কি জগন্নাথের চেয়েও খারাপ?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান ভিসি যদি সুষ্ঠুভাবে তার মেয়াদ শেষ করতে চান তাহলে তার উচিৎ হবে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত করা। কারো কুপরামর্শে কোন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন দুর্নাম রটনা করবে তেমনি তার আগামীর পথকে বন্ধুর করে তুলতে পারে। কেননা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের রক্তে মিশে আছে অযৌক্তিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বহু আন্দোলনের নজির। এই বিশ্ববিদ্যালয় এতটাই প্রগতিশীল যে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরিখে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন করা একধরনের বোকামি।
সবশেষে বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবিবেচনাপ্রসূত ভাবে যে ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। অন্তত এদেশের হাজার হাজার গরীর মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হলেও এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিৎ। পরিবর্তিত জীবনমানের নিরিখে ভর্তি ফরমের মূল্য একটু বাড়ানো হলেও তা যেন জুলুম পর্যায়ে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানবতার বিবেক। তাই বিবেককে বিসর্জন দিয়ে শুধু অর্থলোভে কারও উপর শোষণ চালান হবে জাতির সাথে প্রতারণা করার শামিল।