বাংলাদেশ হোক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ

মেফতাউল ইসলাম
Published : 5 Oct 2012, 05:15 AM
Updated : 5 Oct 2012, 05:15 AM

জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে পরিচিত। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ একত্রে বসবাস করে। সকলেই এখানে যে যার ইচ্ছামত ধর্মচর্চা ও পালন করতে পারে। এমনকি মুসলমানেরা হিন্দুদের দূর্গা পূজার সময় হিন্দুদের তৈরি বিভিন্ন উপাদেয় খাবার খায় এবং হিন্দুরাও ঈদের সময় মুসলমানের আতিথ্য গ্রহণ করে। তাছাড়া খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরাও এখানে যথেষ্ঠ স্বাধীনতা ভোগ করে। বাংলাদেশের এ অসাম্প্রদায়িক চেতনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জন্য মডেলস্বরূপ। কেননা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন প্রভৃতি দেশের চেয়ে আমাদের দেশে সকল ধর্মের মানুষ শতভাগ সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী কর্তৃক কক্সবাজারের রামু, উখিয়া ও টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বৌদ্ধ ও হিন্দুদের মঠ ও মন্দিরে আক্রমণ এবং তাদের বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুণ্ঠনের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জমিনে সাম্প্রদায়িক উগ্রতার বীজ রোপিত হয়েছে। যা কখনই শুভ লক্ষণ নয়।

উত্তম কুমার বড়–য়া নামক এক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর ফেইসবুক হতে কুরআন অবমাননকর একটি ছবি প্রকাশের পর এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার সূত্রপাত হয়। বেশ কিছুদিন হতেই মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে 'ইনোসেন্স অব মুসলিমস' নামক একটি বিতর্কিত চলচ্চিত্রের জন্য আন্দোলন হয়ে আসছিল। বাংলাদেশেও এই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিবাদে বিভিন্ন মিছিল সমাবেশ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন বিতর্কিত ছবি তৈরির নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশের রামুতে কুরআন অবমাননার ছবি প্রকাশিত হওয়ায় বৌদ্ধ মঠগুলোতে আক্রমণের ঘটনা ঘটল। সুতরাং এখানে যে কোন না কোন মহল ফন্দি করে এসব ঘটনার পেছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে তা হলফ করে বলা যায়।

ইসলাম হল সার্বজনীন জীবনব্যবস্থা এতে কোন সন্দেহ নেই। ইসলাম মানবতার ধর্ম। ইসলামে অন্যান্য ধর্মগুলোকে স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশনা রয়েছে। মহানবী (সঃ) নিজে উল্লেখ করেছেন তোমরা অন্যের ধর্মের প্রতি অযাচিত হস্তক্ষেপ করোনা এবং প্রত্যেককেই তার নিজের ধর্ম পালনের সুযোগ করে দাও। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে সকল ধর্মের মানুষের সহাবস্থান নিশ্চিত করা হয়। সুতরাং বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ইসলামের অনুসারী হওয়ায় তাদের ইসলামের অন্তর্নিহিত বাণীগুলো অনুধাবণ করা উচিৎ। মনে রাখতে হবে কারও পরিকল্পিত ফাঁদে পা দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করা যাবেনা।

মুসলমানদের দ্বারা রামু, উখিয়া এবং পটিয়ায় যে অযাচিত কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়, ইসলামও এ পন্থাকে সমর্থন করেনা। কোরআন অবমাননা করার উদ্দেশ্যে উত্তম কুমার বড়–য়া কাজটি করে থাকলে তার বিচারের জন্য প্রশাসন ছিল, আদালত ছিল, বাংলাদেশ সরকার ছিল। কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব কখনই জনগনের নয়। আর জনগণ যদি এভাবে নিজেরাই কোন অপরাধের বিনিময়ে শাস্তিস্বরূপ ধ্বংসযজ্ঞ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের স্বয়ং আল্লাহও পছন্দ করেন না।

সুতরাং রামু, উখিয়া এবং পটিয়ার এ ঘটনায় কাদের হাত রয়েছে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে। ইসলামের নামে যারা অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ইসলামের স্বচ্ছ ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করতে তৎপর তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। অনেকে দাবি করছেন এ হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে। এই আশঙ্কাকে কখনই উড়িয়ে দেয়া যায়না। কেননা তারা মিয়ানমারে বৌদ্ধদের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে তাদের উপর প্রতিশোধকল্পে এ হামলা চালাতে অনেকটাই উৎসাহীর ভূমিকা পালন করতে পারে। সুতরাং তারা এ অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য কতটুকু দায়ি তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। এ ঘটনায় সরকারি দল, বিরোধী দল, কোন ইসলামপন্থী দলের লোক অথবা যে কোন লোকই জড়িত থাক না কেন তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। নতুবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ধারা বাংলাদেশে বহমান তা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।