
দেশ সময় সব বদলে যাচ্ছে, মানুষ গতি চায়, সব দ্রুত করতে চায়। ঘোড়া করে উটে করে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাবার কাল পার হয়ে, প্লেনে উঠেছে, আরো দ্রুত আরো দ্রুত যেতে হবে। কয়লার ট্রেনের স্থলে এসেছে ইলেকট্রিক ট্রেন, যে ট্রেন ছিল এক সময় বিস্ময় সে বিস্ময় আজ আশ্চর্যে পরিণত হয়েছে। একটা চিঠি লিখে পনেরোদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে উত্তর পাবার, পত্র মিতালীর যুগ শেষ। এখন হাতের লিখা কবে জাদুঘরে যাবে আমরা সেই অপেক্ষা করছি। নিজেদের নিজেরা বাহবা দিচ্ছি এমন উন্নতির সূত্রে।
এমন একটা সময় ছিল মানুষ ব্যাংক নামক জায়গায প্রবেশ করতে ভয পেত, বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে জুতো খুলে ঢুকেছে গ্রাহকরা তেমন সময় ও এদেশের জনতা দেখেছে। বর্তমানে এক একজনের তিন চার ব্যাংকে একাউন্ট। একাউন্ট খুলবার ঝক্বি এখন ব্যাংকারদের, গ্রাহকদের কোন দায় নেই।
সাদাসিধে একাউন্টের জায়গায় এসেছে মোবাইল ব্যাংকিং। আপনার মোবাইল নম্বরের পেছনে একটি “০” জুড়ে দিয়ে একাউন্ট হয়ে যাচ্ছে। তড়িৎ গতিতে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা সবই করছি কিন্তু একটা জিনিস চালু করবার আগে যে ধরনের সাবধানতা নেয়া দরকার, যে কোন বিষয়ের যে ট্রায়াল এন্ড এরর বেসিসে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া সে বিষয়টা আমরা কেন যেন এড়িয়ে যাই। বাজারে নতুন আইটেম নিয়ে ঢুকি, প্রথম এসেছি বাজারে এ সুবিধা নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে চটজলদি মুনাফা নিয়ে নেই প্রথম হিসেবে, ঘটনা ঘটতে শুরু করে যখন তখন বলি “ক” ব্যাংক তো করেছে তাহলে আমি “খ” ব্যাংক করলে সমস্যা কি?
পরম শত্রুকেও হাসিমুখে সহায়তা করার বদনাম আছে আমার, পছন্দ করে না এমন একজন আমার সামনে বসা। সে সবসময়ের “আমি কি হনুরে” টাইপ মুখ নিয়ে বসা না, বসা অনেকটা জলে পড়া মানুষের মতো। ভয়াবহ ব্যস্ততার মাঝেও জিজ্ঞেস করি ‘কি হয়েছে তোমার?”
– আপা, আমার ০১৭৪৫৭৮৮২৬৬ নম্বরে একটা মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট ছিল “ড” ব্যাংকে। আজকে তিনদিন ধরে আমার সিমটা বন্ধ। ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার জমা ১৮২৩৯ টাকা গতকাল কে যেন তুলে নিয়েছে। আমার বেতনের পুরো টাকাটাই আপা চলে গেছে।
তোমার নামে এই সিমটা রেজিস্ট্রি করা?
– না।
তাহলে এটাতে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট কেন খুলেছো?
– আপা আমি কী এত বুঝি!
আমি উক্ত মোবাইল কোম্পানিতে খবর নেই। যেদিন থেকে সিম বন্ধ সেদিনই কেউ সিম তুলেছে।
তোমার গোপন পিন কিভাবে কেউ জানলো?
– আপা গার্ডের চাকুরী করি, আমার দু একজন কলিগের সামনে পিন টিপে ব্যালেন্স দেখেছি একাউন্টের।
তোমার জন্য আসলে “ড’ ব্যাংক এবং মোবাইল অপারেটর কিছুই করবে না, কারণ সিমটা তোমার নামে না।
গরীব, দিনে বারো ঘণ্টা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে ডিউটি করে বেতন পাওয়া একজন ভগ্ন মানুষ আমার সামনে বসে থাকে, আমি “খসড়া জিডি” লিখি, সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করি, বন্ধুকে ফোন করি। জানি জিডি নেবে না, তবু লিখি মানুষটাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে।
ব্যাংকার হিসেবে নিজেকে অপরাধি লাগে, মোবাইলের রেজিস্ট্রেশনের প্রমাণপত্র ছাড়া “ড” ব্যাংক কেন মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলে দিল এ মানুষটাকে, আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে।
আমাদের ত্রুটিপূর্ণ দ্রুত গতির প্রক্রিয়াগুলো কিভাবে প্রান্তিক মানুষগুলোকে শুষে নেয় তার প্রমাণ দেখি আরো একবার। নিজেকে বারবার বুঝাই আমি ব্যাংকার, আমি মানুষ অনেক পরে। আমি বেনিয়াদের হাত শক্ত করার ঘুঁটিমাত্র, সাধারণের জন্যে যে ভালোবাসা তা আমার গোপনে লালন করাই কর্তব্য।
সুকান্ত কুমার সাহা বলেছেনঃ
এর দায় ডাচ বাংলা ব্যাংক ও মোবাইল কোম্পানিকে নিতে হবে কারণ তারা উপযাজক হয়ে এই একাউন্ট খুলতে মানুষকে প্রলুব্দ করেছে এবং সেখান থেকে ব্যাপক মুনাফা করছে। এখন গ্রাহকদের বিপদ দেখে- তাদের পিছটান দেওয়াটা একটা অপরাধ। বাংলাদেশ বলেই তা সম্ভব হচ্ছে- আমেরিকা বা ইউরোপ হলে ব্যাংক ও মোবাইল কোম্পানিকে একটাকার জন্য মিলিয়ন টাকা জরিমানা দিতে হত! সাথে বাঁশ! ধন্যবাদ !!!
মেঘ বলেছেনঃ
লিখাটি যারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। এখানে আমার পয়েন্ট কিন্তু একটাই “সিম”টির মালিকানার কাগজটি নিলেই সিমটি মোবাইল ব্যাংকিং এাংউন্ট খুলতে চা্ওয়া গ্রাহকের কি না তা যাচাই হয়ে যায়। রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোবাইল সিমের বিপরীতে সেবাটি না দিলে ভবিষ্যতের সকল জটিলতা এড়ানো যাবে সহজেই। কোন ব্যাংককে হেয় করার কোন উদ্দেশ্য আমার নেই, আমরা কেন ত্রুটিপূর্ণ সেবা নিয়ে মার্কেটে চলে আসি আমার প্রশ্ন সেখানে।সবাইকে আবারো ধন্যবাদ।