কালিয়াগ্রামের ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার এবং নিশ্চুপ এলিট প্রগতিশীলরা!

মেহেদী হাসান
Published : 10 May 2017, 01:40 PM
Updated : 10 May 2017, 01:40 PM

টাঙ্গাইলে ঘাটাইল থানার কালিয়াগ্রাম গ্রামের চান মাহমুদের ছেলে জাকারিয়া নামের এক ছেলেশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রথম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিশুটিকে রবিবার সন্ধ্যায় একই গ্রামের সাঈদ আলীর ছেলে শামছুল আলম নানা প্রলোভন দেখিয়ে বাড়ির পাশের ধানক্ষেতে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। নিজ সন্তানের চিৎকার শুনে মা এগিয়ে গেলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে কালিহাতী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

ঐ সময়ে কর্মরত চিকিৎসকের সামনে ৫ বছর ২ মাস বয়স্ক শিশুটি নিজ মুখে ঘটনার বিবরণ দেয়। এবং ছেলেটির শরীর পরীক্ষা করে চিকিৎসক ঘটনার সত্যতার প্রমাণ পান। কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের ঘটনা সম্বন্ধে কালিহাতী থানা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে। পুলিশ এসে জানায়, ঘটনাটি যেহেতু ঘাটাইল থানার আওতার মধ্যে ঘটেছে ফলে এই ব্যাপারে তাদের কিছু করার নেই। ঠিক ঐসময়েই গ্রামের মাতাব্বররা ধর্ষিত শিশুর পিতাকে ফোন করে চলে আসতে বলে। তারা তাকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে তারা নিজেরা বসে ঘটনাটার ফায়সালা করে দিবে। গ্রাম্য মাতাব্বররা সবসময় চায় সকল ধরনের নির্যাতনের ঘটনা সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে আপোষ-মীমাংসা করে ফেলতে।

যাতে করে তারা নিজেরাও দোষী পক্ষের নিকট থেকে- আপোষরফা না হলে জেল খাটতে হবে এই ভয় দেখিয়ে- কিছু টাকা পয়সা হাতিয়ে নিতে পারে। এই গ্রাম্য মাতাব্বরদের প্রায় সকলেই সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এরা এভাবে উপার্জন করা টাকার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে, বিলাসবহুল জীবন-যাপন করে এবং এই টাকার সাহায্যে আরো নানা ধরনের নষ্টামির সাথে যুক্ত হয়- জুয়া খেলে, পতিতা ভাড়া করে, মাদক সেবন করে। এতে তাদের আরেকটা লাভ হল- ভোটের রাজনীতিতে এই ধর্ষক, নির্যাতনকারী ও অত্যাচারী পক্ষকে কাছে পাওয়া। মাতাব্বরদের মাত্র কিছু টাকা দেওয়ার বিনিময়ে তারা জেল খাটা এবং নানা ধরনের আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পায় বলে দোষী পক্ষ সারাজীবন ধরে এই মাতাব্বরদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। এবং সামান্য কিছু টাকায় কিনে ফেলা যায় এমন মাতাব্বররা তাদের যে কোন অপকর্মে পাশে থাকবে এই আশ্বাসে তারা তাদের চেয়ে অসহায় মানুষদের উপর আরো বেশি করে নানা ধরনের নির্যাতন, অত্যাচার চালানোর আশকারা লাভ করে। এরা যত বেশি অপরাধ করে মাতাব্বররা অপরাধীদের তাদের প্রতি আরো বেশি কৃতজ্ঞতায় আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। নানা ধরনের অপরাধের উপর ভিত্তি করে এই মাতাব্বর শ্রেণী গ্রাম্য সমাজে দাঁড়িয়ে থাকে। অপরাধ না থাকলে তাদের মোড়লগিরি বহাল থাকে না। তারা চায় নানা ধরনের মারামারির ঘটনা, অত্যাচার, নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ সংগঠিত হোক। এগুলো ছাড়া তারা অচল, তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তির কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। থানা কর্তৃপক্ষ মামলা নিতে নানা ধরনের টালবাহানা করে । কারন মামলা না হয়ে আপোষ-মীমাংসা হলে গ্রাম্য মাতাব্বরদের সাথে সাথে টাকা-পয়সার কিছু ভাগ-বাটোয়ারা তাদের ভাগ্যেও জোটে এবং একই সাথে সুযোগ পায় কিছুটা মাতাব্বরী দেখানোরও। যা হোক, শেষ পর্যন্ত মাতাব্বররা আপসরফার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়। আজকে সকালে মেয়ের বাবা ঘাটাইল থানায় গিয়ে শিশু ধর্ষণের মামলা দায়ের করে।

আমরা এলাকাবাসী অবিলম্বে নরপশু এই শিশু ধর্ষককে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি। আরেকটা কথা না বললেই নয়। শহুরে এলিট প্রগতিশীলরা গ্রাম্য শিশু-নারীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলা থেকে বরাবরই বিরত থাকে। শহুরে মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারের নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হলেই কেবল তাদের মন পোড়ে। আর গ্রামের লোকদের তারা মানুষ নয় বরঞ্চ নিম্ন শ্রেণীর জীব মনে করে। ফলে তাদের উপর কোন নির্যাতন, অত্যাচার, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি সঙ্ঘটিত হলে তাদের কিছুই যায় আসে না। এই ধরনের ব্যাপারে মুখ না খুলে তারা এমনকি চক্ষু লজ্জাও বোধ করে না। তবে গ্রাম অঞ্চলে বিশাল ধরনের কোন দুর্যোগ যদি ঘটে যেখানে গণমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি থাকে কেবল সেই সমস্ত জায়গাতেই তারা এগিয়ে যায় এবং অনেক কষ্টার্জিত মলিন মুখ ক্যামেরার সামনে প্রদর্শন করে। এবং শহরে ফিরে এসে শুধুমাত্র বিশেষ দু-একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো বক্তব্য দেয় এবং সরকারের কাছে নানা কিছু প্রার্থনা করতে থাকে, ধর্মান্ধ ব্যক্তিরা যেমন প্রার্থনা করে ঈশ্বরের কাছে।

বৈষম্য সর্বত্র। যারা প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে, টেলিভিশন চ্যানেলের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে বৈষম্যের বিরুদ্ধে জোর গলায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের গভীরে মাছের ঝাঁকের বৈষম্যরা ঘুরে বেড়ায়। গ্রাম অঞ্চলে ঘটা অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে বের হয়ে আসা এরকম দু-একটা ঘটনার প্রতি হোয়াইট কলার প্রগতিশীলদের অবিরাম উদাসীনতা তাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা বৈষম্যগুলোকে যাদের দেখার চোখ আছে এরকম দু-একজনের সামনে উন্মোচিত করে দেয়।