ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বাংলাভাষা ও বাংলাদেশ উপহার

মেহেদী হাসান
Published : 22 Feb 2017, 07:19 PM
Updated : 22 Feb 2017, 07:19 PM

বেশির ভাগ ভাষাসৈনিকদের নামের তালিকা দেখুন, তারা সেই সময়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুসহ তৎকালীন মুসলীম ছাত্রলীগ নেতাদের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ছিল ১৯৪৮ সালে মুসলীম ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে আসা। যখন নব্য পাকিস্তানের শাসকেরা বাংলাকে মেনে নিতে পারছিল না, তখন দেশপ্রেমিক ছাত্ররা মুসলীম ছাত্রলীগ থেকে একযোগে বেড়িয়ে এসে ছাত্রলীগ গঠন করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হবার মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় এমন ঘটনা।

ছাত্রলীগ গঠন হয়েছিল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে। ১৯৪৮ সাল থেকেই ভাষার দাবিতে সংগ্রাম তীব্রতর হতে থাকে, চলতে থাকে আন্দোলন। ঠিক তার দেড় বছর পর ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পলাশী দিবসে আওয়ামী লীগ গঠন হয় বাংলা ভূখন্ডের স্বাধীনতার মূল লক্ষ নিয়ে। এটিও ছিল বঙ্গবন্ধুসহ সে সময়ে নেতাদের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। আসলেই, রাজনৈতিক দূরদর্শীতা যাদের রয়েছে তারা কোনদিন ভুল করেন না। যারা ভুল করেন তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না।

পলাশী দিবসে আওয়ামী লীগ গঠন এজন্য হয়েছিল যে নেতারা হাতে হাত দিয়ে শপথ নিলেন আমরা ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা হারিয়েছি, তাই এই দিনে এই দলের গঠন করলাম যাতে এই দল 'আওয়ামী মুসলীম লীগের' দ্বারা বাংলাকে স্বাধীনতার সূর্য উপহার দিতে পারি ।

ঠিক তাই হল, ১৯৫২ ছাত্রলীগ নেতাদের সহ আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হল, যাতে ভাষার দাবিতে রাজপথে না নামতে পারে, আর রাজপথে ১৪৪ ধারা জারি করা হল । কিন্তু ছাত্ররা মাথা নোয়াবার নয়, ছাত্রলীগ যেহেতু ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছিল তাই সেই সকল নেতারা জেলখানা থেকেই রাজপথে নামার নির্দেশনা দিলেন। ১৯৫২ সালে সেই ঐতিহাসিক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে গেল, গুলিতে লুটিয়ে পরলো ছাত্ররা ।

১৯৫৩ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট বিপুল আসনে বিজয়ী হল। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের জোড়ালো দাবির মুখে পাকিস্তান তাদের সংবিধান রচনা করতে এবং বাংলাকে দ্বিতীয় রাস্ট্রভাষা অধিকার দিতে বাধ্য হয়।

এভাবে ক্রমান্বয়ে, বিভিন্ন স্বাধিকার আন্দোলন, ছোট-বড় আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও তা প্রতিষ্ঠার লক্ষে আন্দোলন, ১৯৬৭ গণঅভ্যুত্থান ও আইয়ুব খান নামক সামরিক জান্তার পতন, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সম্মিলিত লক্ষ্যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা বাঙালিকে উপহার দিতে সক্ষম হয় ।