তাপমাত্রা করোনাভাইরাসে কোনো প্রভাব ফেলছে কি?

নাদিম মাহমুদনাদিম মাহমুদ
Published : 10 Jan 2012, 07:03 PM
Updated : 3 April 2020, 10:37 AM

আজকের এই মানব সভ্যতা দাঁড়াতে সময় লেগেছে কয়েক হাজার কোটি বছর কিংবা তারও বেশি। মানুষের এই সভ্যতামুখী হতে গিয়ে পোহাতে হয়েছে নানার প্রতিকূল পরিবেশ। কখনো এসেছে খরা, বন্যা, ঝড় আবার কখনো এসেছে ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ। আর এইসব উতরিয়ে মানব সভ্যতা যখন স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছে ঠিক তখন ভয়ংকর 'করোনাভাইরাস' চোখ রাঙানি দিচ্ছে। লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আক্রান্তদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

মানুষ এ এক অন্য রকম পৃথিবী দেখতে চলেছে। চীনের উহান শহর থেকে শুরু হয়ে এই ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ২০৬টি দেশের ভূখণ্ডে আবাসন গেড়েছে। ভয়ানক আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সবাই। অপ্রতিরোধ্য গতিতে যখন করোনাভাইরাস কিছু দেশে থাবা বসিয়ে মানুষের স্নায়ুবিক উত্তেজনা যেমন বাড়িয়েছে তেমন আগামী পৃথিবীর অর্থনীতি যে মুষড়ে পড়বে তা নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানরা হচ্ছেন শঙ্কিত। যুগে যুগে মহামারী বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রাণসংহারের কারণ হলেও এবারের এই মহামারী এক দেশ থেকে আর এক দেশে ছড়িয়ে পড়ার গতিতে স্তম্ভিত সবাই।

গত ২ মার্চ একটি ইংরেজি দৈনিকে বাংলাদেশ কীভাবে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত রয়েছে সেই বিষয়ে একটি লেখা তুলেছিলাম। সেখানে বলার চেষ্টা করেছিলাম যে, কম তাপমাত্রায় করোনাভাইরাসের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি আর উষ্ণ পরিবেশে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভবনা কম । সেসময় বিষয়টি কেবল আমার হাইপোথিসিস বা ধারণামূলক ছিল। (সূত্র-১)

এই লেখা আসার পর তাপমাত্রার বিষয়টি নিয়ে দেশের ভেতরে ও বাহিরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হয়। তাপমাত্রা ও আদ্রতা করোনাভাইরাস ছড়াতে সত্যিই কোনো প্রভাব ফেলে কী তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন ছিল। গত ১৯ মার্চ ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কাসেম বুখারী ও ইউসুফ জামিল নামের দুই গবেষক করোনাভাইরাসের মহামারী গ্রীষ্মে কমে আসবে কি না তা নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখেছেন (সূত্র-২)। যদিও এই গবেষণার বিভিন্ন ধাপ নিয়ে অনেক গবেষকের সন্দেহ রয়েছে। তবে তাপমাত্রার সাথে করোনাভাইরাসের এপিডমোলজির যে সম্পর্ক রয়েছে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। অনেকেই বলাবলি করতে শুরু করেছে, করোনাভাইরাস পক্ষপাতমূলক আচরণ'করছে। গরম প্রধান দেশগুলোতে শীত প্রধান দেশগুলোর চেয়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার তুলনামূলক কম হওয়ার কারণ নিয়ে চলছে নানান কথাবার্তা। কেন শীত প্রধান দেশগুলোতে এত প্রাণসংহার? আমাদের দেশের তাপমাত্রা সত্যিই আমাদের দেশকে 'এক্সট্রা বেনিফিট' দেবে কি? আর সেটা কেনই বা দেবে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছি। আর সেই জায়গা থেকে এই লেখার অবতারণা।

ডব্লিউএইচও'র হিসেব মতে ১ এপ্রিল মালয়েশিয়ায় ২৭৬৬, ইন্দোনেশিয়ায় ১৫২৮ , ভারতে ১৬৩৬, নেপালে ৪, ভুটানে ৫, মিয়ানমারে ১৫, বাংলাদেশে ৫৪, ভিয়েতনামে ২০৭, কাতারে ৭২১, কুয়েতে ২৮৯, সৌদি আরবে ১৫৬৩ জন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এসব দেশের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

অন্যদিকে ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যাদের কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজারের ঘরে। ফলে প্রশ্নটা আসা স্বাভাবিক, যে এশিয়া অঞ্চলের গরম প্রধান দেশগুলোতে সেই সময় সার্স ভাইরাসের আউটব্রেক বা প্রাদুভার্ব তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি কেন?

SARS-CoV-1 এবং SARS-CoV-2 মিল কতটুকু?

যেকোনো ভাইরাসে মূলত ডিএনএ (ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড) অথবা আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক এসিড) জিনোম থাকে আর এই জিনোমকে ঘিরে রাখে ক্যাপসিড নামের এক প্রোটিন। এদের বাহিরে লিপিড বা চর্বির একটি ঝিল্লী বা মেমব্রেন থাকে। আর SARS-CoV-2 গঠনগতভাবে স্পাইক (S) প্রোটিন, নিউক্লিওক্যাপসিড (N), মেমব্রেন বা ঝিল্লি (M) এবং এনভেলভ (E) প্রোটিন নিয়ে গঠিত।

২০০৩ সালের দিকে চীনের গুয়াংডু থেকে ছড়িয়ে পড়া Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS) বা SARS-CoV-1 এর সাথে ২০১৯ শেষের দিকে সেই চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া SARS-CoV-2 এর মিল কতটুকু তা ইতোমধ্যে গবেষকরা বের করেছেন। বেটাকরোনাভাইরাসের অর্ন্তগত এই দুই ভাইরাসের জিনোম রহস্যে অন্তত ৮০ শতাংশই মিল রয়েছে (সূত্র-৩)। উভয় ভাইরাস কোষে প্রবেশের জন্য গ্রাহক হিসেবে Angiotensin converting enzyme 2 (ACE2) কে ব্যবহার করে।

SARS-CoV-2 ভাইরাস (সৃষ্ট রোগকে COVID-19 বলে) মূলত জুনেটিক ভাইরাস, যা এক প্রাণী থেকে আর এক প্রাণীর দেহে সঞ্চারিত হয়। তবে ডব্লিউএইচও মনে করছে, এটি মূলত এক মানুষ থেকে আর এক মানুষের স্পর্শে এলে আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি, কাশি কিংবা কথাবার্তার মাধ্যমে ভাইরাসের ড্রপলেট বা ছ্বটা মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়।

আর ভাইরাসের কণা বাতাসে তাদের অস্তিত্ব রাখতে হলে পরিবেশের বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে। ভাইরাসের কার্যকারিতা প্রকাশকারী স্পাইক মূলত বাতাসের আর্দ্রতা, তাপমাত্রা এবং কিসের সাথে মিশতেছে তার উপর নির্ভর করে এটি কতটা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় হবে।

আদ্রতা ও তাপমাত্রার সাথে ভাইরাস ছড়ানোর সম্পর্ক কী?

২০০৩ সালে সার্সের প্রাণহানীর প্রায় ৮ বছর পর হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডব্লিউ এইচ সেতো'র নেতৃত্বে একটি গবেষণাপত্র বের হয়। 'অ্যাডভ্যান্সেস ইন ভাইরোলজি' নামে প্রকাশিত ওই গবেষণায় সার্স ভাইরাস কিভাবে তাপমাত্রা ও আদ্রতার উপর নির্ভর করে 'বিস্তার' লাভ করে তার বেশ কিছু প্রমাণ তুলে ধরেছেন। (সূত্র-৪)

সার্স ভাইরাসে সেই সময় বেশি আক্রান্ত হয়েছিল চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান। সেই তুলনায় মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়ায় আক্রান্তদের সংখ্যা একবারে কম ছিল। এই গবেষকদল তাদের পরীক্ষাগারে সার্স ভাইরাসকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আপেক্ষিক আদ্রতায় (আরএইচ) ২২ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেখে দেন, যাতে পাঁচদিন পর্যন্ত ভাইরাসের সংক্রমণশীলতা ছিল। আর এই তাপমাত্রা সাধারণত বিভিন্ন দেশের শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে থাকার কারণে, যেসব দেশ বেশি শীততাপের উপর নির্ভরশীল সেখানে ভাইরাসটি ব্যাপকহারে বিস্তারের সম্ভবনা তৈরি করে।

অন্যদিকে উচ্চ আদ্রতায় (৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ) এবং ২৮ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ভাইরাসের সংখ্যা কমে গিয়ে এর কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বাতাসে আর্দ্রতা যখন ৯৫ শতাংশ তখন ২৮ বা ৩৩ ডিগ্রির চেয়ে বেশি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ভাইরাসের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছে। মূলত এই পরিবেশে ২৪ ঘন্টার পর ভাইরাসের বিস্তার দেখা যায় না। তবে ৫৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এই ভাইরাস সম্পূর্ণরুপে নির্মূল হয়।

নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় দেখতে পান যে, বাতাসের আদ্রতা ২০ শতাংশ মানে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংক্রমণশীল ভাইরাস ২৮ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এবং তাদের সংক্রমণশীলতা ছড়াতে পারে। আবার ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাতাসের আর্দ্রতা যখন ৫০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছে তখন ৩ দিন পর স্টেইনলেস স্টিলে ভাইরাসের পরবর্তী আর বিস্তার দেখা যায় না। তাদের ফলাফলও বলছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাস দ্রুত অকার্যকর হয়ে পড়ে। (সূত্র-৫)

২০০৩ সালের সার্স-এর পর ডব্লিউএইচও তাদের এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে যে, সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় ভাইরাসের সংক্রমণশীলতা ১ থেকে ২ দিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। সেটি মূত্র কিংবা মলেও। ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ২১ দিন পর সার্স ভাইরাসের সংখ্যা কমে। (সূত্র-৬)

অনেক গবেষকই মনে করছেন, শ্বসনতন্ত্রের ভাইরাস বা রেসপাইরেটরি সিক্রিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) সংক্রমণশীলতার সাথে জলবায়ুর উপাদানের সম্পর্কে ভাইরাস মৃদু, যুবক ও বৃদ্ধ কিংবা শিশুর সংক্রমণ নির্ভর করে। (আগ্রহীরা দেখতে পারেন Thompson et al. 2003; Thompson et al. 2006)। ১৯৮৬ সালে Arundel and Sterling তাদের এক গবেষণায় দাবি করেন যে, আপেক্ষিক আদ্রতায় ভাইরাসজনিত ছোঁয়াছে রোগ বিস্তারে কিছুটা প্রভাব ফেলে। যদিও অধিকাংশ সায়েন্টিফিক আর্টিকেলগুলো বলছে যে তাপমাত্রা, আদ্রতার সাথে ভাইরাসের বাঁচা-মরার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের মলিকুলার কৌশল কি তা ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞানীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। (সূত্র-৭)। এছাড়া আরএনএ ভাইরাস ডিএনএ ভাইরাসের চেয়ে কম স্থিতিশীল। আর কম উচ্চ তাপমাত্রায় এই আরএনএ ভাইরাস কম সময়ের মধ্যে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। (সূত্র-৮)

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস নিয়ে কাজ করা বিট্রিশ বিজ্ঞানী Robert Edgar Hope-Simpson-এর মতে, সূর্যের বিকরণে আমাদের চামড়ায় সৃষ্ট ভিটামিন-ডি, শীতকালে অভাব দেখা দেয় যার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা দূর্বল হয় বটে। ভিটামিন ডি যদি সক্রিয় থাকে তাহলে আমাদের ইনফ্যামেরেটরিতে সৃষ্ট সাইটোকাইনের মাত্রাকে কমিয়ে দেয় এবং মাক্রোফাজকে বেশি কার্যকরী করে তোলে। ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। (সূত্র-৯-১১)। আর এই ভিটামিন-ডি পেতে হলে সূর্যালোক খুবই জরুরি। তাছাড়া সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সূর্যালোক প্রাপ্তি আমাদের শরীরে এক ধরনের ধনাত্বক সুবিধা পাচ্ছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। এইসব গবেষণার তথ্য-উপাত্ত থেকে আমরা বলতে পারি, ভাইরাসের বিস্তারের জন্য তাপমাত্রা ও আদ্রতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

যদিও সিংহভাগ গবেষণা মূলত আগের সার্স, মার্স বা অন্য কোনো ভাইরাসের। যদিও গঠনগত ও জীনগতভাবে নব্য করোনাভাইরাসের সাথে SARS-CoV-1 ব্যাপক মিল রয়েছে। যে কারণে, আগের গবেষণার ফলগুলো বর্তমান SARS-CoV-২ ক্ষেত্রে মিল থাকার সম্ভবনা রয়েছে। যদিও ২০০৩-এর সার্স ভাইরাসের তাপমাত্রার সাথে সম্পর্ক উম্মোচনের জন্য গবেষকদের অন্তত ৫-৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, তবে যেভাবে SARS-CoV-২ গবেষণায় গবেষকরা এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে শিগগির হয়তো আমরা এই ভাইরাসের বিস্তারের রহস্য উম্মোচন করতে পারব।

দেশের গড় তাপমাত্রা যদি ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আপেক্ষিক আদ্রতা ৬০ শতাংশ হওয়ার পরও আমাদের দেশে করোনাভাইরাস বিস্তার করছে কেন? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া কঠিন। আমরা মনে করছি, এখন পর্যন্ত যতজন আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের সিংহভাগই ক্লোজ কন্ট্যাক্ট হচ্ছে, যারা এই ভাইরাসটি দেশের বাহিরে থেকে বহন করে এনেছে। ফলে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের দ্বারা অন্যরা আক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাস বিস্তারে মানুষ ছাড়াও তাদের নিত্যব্যবহৃত জিনিসপত্রও কিছুটা দায়ী থাকলেও থাকতে পারে। কারণ, কম তাপমাত্রায় ভাইরাসের সংক্রমণশীলতার স্থিতিকাল কিছুটা বেশি। (সূত্র-১২)

নিশ্চিত করে না বললেও এ কথা অনস্বাকীর্য যে আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের থাবা তেমন একটা বড় হবে না শুধুমাত্র অঞ্চলভিত্তিক আবহাওয়ার কারণে। শুধু বাংলাদেশই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার এই উষ্ণ দেশগুলোতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ইউরোপ বা আমেরিকার মত প্রভাব ফেলার সম্ভবনা কম। আমরা যে হোম কোয়ারেন্টিন শুরু করেছি, এটি বস্তুত ভাইরাসের জুনেটিক বিস্তারে যথেষ্ট অন্তরায়। আদ্রতা ও তাপমাত্রার সাথে যদি এই ভাইরাসের আউটব্রেকের সম্পর্ক তৈরি না থাকত, তাহলে নিশ্চিত করে বলা যেত, ইউরোপ বা আমেরিকার চেয়ে খারাপ অবস্থা তৈরি হতো আমাদের দেশে। দূর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থা কিংবা শনাক্তকরণের অভাবে লাশের পর লাশ মিছিল ধরত। আক্রান্তদের সংখ্যা সব দেশগুলো থেকে ছাড়িয়ে যেত।

কিন্তু তা হচ্ছে না। ধীর গতিতে এই ভাইরাসটি আমাদের দেশে সংক্রমণ তৈরি করছে, তা মূলত প্রবাসীদের দ্বারা বাহিত কিংবা তাদের পরোক্ষ সংস্পর্শে ছড়িয়েছে। আর সবার প্রচেষ্ঠায় এই ভাইরাসে প্রাণহানী আমাদের এখন পর্যন্ত অন্যন্য দেশের তুলনায় নগণ্য। সম্ভবত আমরা এই যাত্রায় প্রকৃতির বিশাল আর্শীবাদে রক্ষা পাব, কিন্তু আগামীর বিশ্ব যে নতুন যুদ্ধের সম্মুখীন হবে তার লড়াই করার শক্তি আমাদের থাকতে হবে। করোনাভাইরাস আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে, আমাদের কোন কোন দূর্বলতা 'মধ্যম আয়ের' দেশ গড়ার অন্তরায়। আশা করবো, সরকার আগামী চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি গবেষণায় মনোনিবেশ করে।

তথ্যসূত্র

১. How has Bangladesh remained immune to COVID-19?

২. Will Coronavirus Pandemic Diminish by Summer?

৩. Structure of the SARS-CoV-2 spike receptor-binding domain bound to the ACE2 receptor

৪.The Effects of Temperature and Relative Humidity on the Viability of the SARS Coronavirus

৫. Effects of Air Temperature and Relative Humidity on Coronavirus Survival on Surfaces

৬.First data on stability and resistance of SARS coronavirus compiled by members of WHO laboratory network

৭. Indirect health effects of relative humidity in indoor environments

৮. Epidemic influenza and vitamin D

৯. https://www.orf.od.nih.gov/TechnicalResources/Bioenvironmental/Documents/FINALPUBLISHEDPaperonHUMIDITYandViruses509.pdf

১০.Environmental Engineers and Scientists Have Important Roles to Play in Stemming Outbreaks and Pandemics Caused by Enveloped Viruses

১১. Stability of Porcine Epidemic Diarrhea Virus on Fomite Materials at Different Temperatures

১২.Coronavirus disease (COVID-19) Pandemic