শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে পৌঁছাক ‘মুজিব গ্রাফিক নভেল’

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত
Published : 26 Jan 2012, 05:32 AM
Updated : 21 July 2020, 05:08 PM

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত চার কোটি ২৭ লাখ ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই পেয়েছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরের বছর (২০১০ সাল) থেকে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে পাঠ্যসূচির প্রতিটি বই বিনামূল্যে প্রদানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশে অনেক সরকারি সিদ্ধান্ত সময়মতো বাস্তবায়ন হয় না, এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে যথাযথ ও সুচারুভাবে এবং পরের এক দশকেও ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতি বছর পয়লা জানুয়ারি পাঠ্যবই বিতরণ রীতিমতো উৎসবে পরিণত হয়েছে। তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে, হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানেরাও এখন বিদ্যালয়ে যেতে পারে। তারা বছরের প্রথম দিন ঝকঝকে নতুন বই হাতে হাসিমুখে বাড়ি ফেরে।

বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে, সেটা নিয়ে দ্বিমত নেই। চলতি বছরে ২০ লাখ ৪০ হাজার ছাত্রছাত্রী মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এদের মধ্যে পাস করেছে প্রায় ১৭ লাখ। বিশ্বের অনেক দেশে যে এত লোকই নেই!

পাঠ্যসূচিতে বাংলা, ইংরেজি, অংক- এসব বাধ্যতামূলক বিষয় থাকে। এর বাইরেও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। সমসাময়িক বিশ্বে পরিবেশের ওপর গুরুত্ব বাড়ছে। এছাড়াও বিজ্ঞানের বিষয় থাকে। শিশু-কিশোরদের ইতিহাস জানাতে হয়, ভূগোলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। ধর্মীয় গ্রন্থ ও আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মনেতাদের জীবনও পড়ানো হয়।

পাঠ্যবইয়ের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের বিবিধ বিষয়ে আগ্রহ থাকে। তারা গল্প-উপন্যাস-কবিতা পড়ে। কার্টুন বিশেষভাবে শিশুদের আকৃষ্ট করে। এটা হচ্ছে তাদের কাছে খুব পছন্দের ফরমেট। সচ্ছল অনেক পরিবারে শিশু-কিশোরদের পড়ার টেবিলে দেখি প্রচুর কার্টুন-বই। টেলিভিশনে কার্টুন খুবই জনপ্রিয়। রূপকথার চরিত্র যেমন শিশু-কিশোরদের মনে গেঁথে যায়, তেমনি স্পাইডারম্যানের মতো দুঃসাহসী চরিত্রও তাদের কাছে আইডল হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের যেভাবে দেখতে চায়, অন্যদের কাছে তুলে ধরতে চায়- স্পাইডারম্যান বা টিনটিনে তার ছায়া দেখে। চাচা চৌধুরীর মতো উইট কার না পছন্দ!

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে 'মুজিব গ্রাফিক নভেল' আমাকে মুগ্ধ করে। তিনি কেবল আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক নন, নানাভাবেই তিনি অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। প্রকৃত অর্থেই আদর্শ পুরুষ, প্রাতঃস্মরণীয়। তাকে নিয়ে শত শত বই রচনা হয়েছে। তাঁর বেড়ে ওঠা, এ ভূখণ্ডের বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি, বার বার কারাজীবন ভোগ এবং অন্যভাবে নির্যাতিত হয়েও ন্যায় ও সত্যের পথে অটল থাকা- এ সব প্রতিটি শিশুর জন্যই আদর্শ জীবনপাঠ। তিনি সুবক্তা ছিলেন। কথায় ছিল জাদু। অনুপ্রাণিত করায় তাঁর জুড়ি ছিল না। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' কী অবিনাশী উচ্চারণ! 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না'- তাঁর এ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ঘোষণা বাঙালির সবচেয়ে সাহসী উচ্চারণ হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর আহ্বানে দলে দলে মুক্তিসেনা যার যা আছে তাই নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর-রাজাকারদের পর্যুদস্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রণাঙ্গনে।

কেন এ সব উপজীব্য করে এখনও কার্টুন বই, কমিকস কিংবা টিভি সিরিয়াল নির্মিত হয়নি, সে প্রশ্ন অনেকের মতো আমারও। তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৫ বছর। এর মধ্যে ৪৬৮২ দিন বা ১৩ বছরের মতো ছিলেন কারাগারে। তাঁর সক্রিয় রাজনৈতিক জীবন ছিল ২৫ বছরের মতো। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি সময় কেটেছে কারাগারে! তার কারাজীবনের নানা ঘটনার বর্ণনা রয়েছে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' ও 'কারাগারের রোজনামচা' গ্রন্থে। দ্বিতীয় গ্রন্থটির অনেক ঘটনাকেও কিন্তু শিশুদের উপযোগী গ্রাফিকস্-এ তুলে ধরা যায়। যে সময়ে এ গ্রন্থ দুটি রচনা করেছেন (১৯৬৭-৬৮), তখন তার ফাঁসির দণ্ড হওয়ার প্রচণ্ড শঙ্কা। অথচ তিনি ধীরস্থির ও সংকল্পবদ্ধ, অকুতোভয়। বাংলাদেশের মানুষের ওপর তাঁর অগাধ আস্থা- তারা আন্দোলন করে তাকে ও অন্যায়ভাবে আটক রাখা অন্য বন্দিদের মুক্ত করে নেবেই। এমন আইডল শিশু-কিশোরদের কাছ নানা মাধ্যমেই তুলে ধরার আরও উদ্যোগ চাই। নিঃসন্দেহে, নতুন প্রজন্মের কাঙ্ক্ষিত মাধ্যমের ওপরের দিকে থাকবে কার্টুন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা যে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম তার অন্যতম স্লোগান ছিল- 'এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে'। কারফিউয়ের বাধা উপেক্ষা করে এক রাতে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয় 'জয় বাংলা' ও 'জয় বঙ্গবন্ধু'-এর সঙ্গে এ স্লোগান। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের মধ্য থেকে ঘরে ঘরে যেন মুজিব গড়ে ওঠে সে জন্য চাই এ মহান নেতার জীবন ও কর্ম যথাযথভাবে তুলে ধরা। বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থের কিছু অংশ নিয়ে 'মুজিব গ্রাফিক নভেল' প্রকাশকে আমরা এ ক্ষেত্রে একটি চমৎকার সূচনা ধরে নিতে পারি। এর আয়োজকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে এটা প্রস্তুত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবনের কত দিক সম্পর্কেই না শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের রয়েছে। আবার উপদেশ বাণী হিসেবেও অনেক কিছু গ্রহণ করা যায়। তিনি শীতের সময় একজন দরিদ্র মানুষকে নিজের গায়ের চাদর খুলে দিয়েছেন কিংবা ঘরের গোলার চাল বাবা-মাকে না জানিয়ে বিলিয়ে দিয়েছেন- এমন মহৎপ্রাণ হিসেবেই আমাদের শিশুরা গড়ে উঠক, এটাই তো কাম্য। আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় 'আমি লেখাপড়া ছেড়ে দুর্ভিক্ষপীড়িতদের সেবার ঝাঁপ দিলাম। লঙ্গরখানা থেকে দিনে একবার খাবার দেওয়া হতে থাকল।'

শৈশবে বঙ্গবন্ধুর খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। পিতা শেখ লুৎফর রহমানের দলের বিরুদ্ধে ফুটবল খেলার আগে তাঁর সাহসী উচ্চারণ- 'আব্বা, আপনি জানেন ভয় আমরা পাই না', বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে এমনভাবেই আমরা গড়ে তুলব। শিশুতোষ গ্রাফিক নভেলে উপদেশমূলক একটি বাক্য রয়েছে এভাবে- প্রধান শিক্ষক কিশোর শেখ মুজিবকে উপদেশ দিচ্ছেন, 'বাবার কাছে হার মানো। বাপের কাছে হার মানলে মান যায় না কখনো।' বাংলাদেশের কোন বাবা-মা চাইবেন না যে এমন উপদেশ বাণী তাদের সন্তানের মর্মে গেঁথে থাকুক?

বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক শিশু-কিশোররা পড়ছে। এ মহান নেতার জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে অনেক বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। আরও বই প্রকাশ হবে। 'মুজিব গ্রাফিক নভেল' শিশুদের কাছে নন্দিত হয়েছে। বিষয়বস্তু ও উপস্থাপনা চিত্তাকর্ষক। এর প্রথম খণ্ড প্রকাশ হয় ২০১৫সালে। ইতিমধ্যে বাংলায় সাত খণ্ড ও ইংরেজিতে তিন খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। জাপানের ভাষায় একাধিক খণ্ড অনুদিত হয়েছে। বাংলায় সর্বমোট ১০টি খণ্ড হবে। বিশেষ ধরনের এই প্রকাশনা প্রতিটি শিশু-কিশোরের হাতে পৌঁছে দেওয়ার আয়োজন কি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় করতে পারে না?

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা কম হয়নি। আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতির কথা নতুন প্রজন্ম যেন না জানে, সে জন্য কতই না অপচেষ্টা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ৪ অগাস্ট বিচারপতি সায়েম ও মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান একটি সামরিক বিধি জারি করেছিলেন এভাবে- 'জীবিত বা মৃত কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করিয়া কোনো প্রকার ব্যক্তি পূজার উদ্রেক ও বা মাহাত্ম্য প্রচার হয়, এমন কাজ নিষিদ্ধ থাকিবে।' এ ধরনের সামরিক বিধি জারির স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দেওয়া, মুছে দেওয়া। সংবাদপত্রে তখন নির্দেশ যায়- শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু লেখা চলবে না। ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ-এর অন্যতম ডিজাইনার স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম এক সাক্ষৎকারে বলেছেন- "আশির দশকে তার বিদ্যালয় জীবনে যে সব পাঠ্যবই ছিল তাতে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ছিল না, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীদের কথা ছিল না।"

বঙ্গবন্ধু দুঃখী মানুষের মুক্তির জন্য, এ ভূখণ্ডের স্বাধীনতার জন্য কী অপরিসীম আত্মত্যাগ করেছেন তার বিবরণ রয়েছে তাঁর নিজের লেখায়, গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে। ১৯৫৩ সালের মে মাসের একটি ঘটনা এখানে উল্লেখ করা যায়। ১৩ মে (১৯৫৩) ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগে পোস্ট অফিস থেকে '৭১ রাধিকা মোহন বসাক লেন' ঠিকানার সহিদ নামের এক ব্যক্তির লেখা একটি চিঠি হস্তগত করে। যার- প্রাপক- ভাবি, সি/ও, মৌলভী মুসা মিঞা, টুঙ্গিপাড়া শেখ বাড়ি, পাটগাতি, ফরিদপুর। চিঠিতে ৫ মে, ১৯৫৩ তারিখ দেওয়া ছিল। চিঠিটি গোয়েন্দারা আটকে রাখেনি, তবে কপি রেখে দিয়েছিল। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তৃতীয় খণ্ডে এ চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে ২৩৪ পৃষ্ঠায়। গোয়েন্দা বিভাগের অনুমান, এই ভাবি হচ্ছেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। চিঠিতে লেখা হয়, 'ভাবি, একটু আগেই ভাইজান এসে সংবাদ দিল যে কামালের একটি ছোট ভাই হয়েছে। … ভাইজান এখুনি বেরিয়ে গেলেন পাবনা ট্যুরে, ২ দিন পরে ফিরে আসবেন। সেখান থেকে এসে ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের ইলেকসন-এর জন্য ফরিদপুর যাবেন। ফরিদপুর থেকে ২/১ দিন পর ঢাকায় ফিরে একদিন পর মৌলানা ভাষানীকে নিয়ে আপনাদের বাড়ী যাবেন বেড়াতে অবশ্য ২ দিনের জন্য। মৌলানা ভাষানী ২ দিন আপনাদের বাড়ী বিশ্রাম নেবেন। সুতরাং আপনি সেইমত প্রস্তুত হয়ে থাকবেন। মৌলানা সাহেবের সঙ্গে হয়ত ২/৪ জন অন্য অতিথিও থাকতে পারে। ইতি- সহিদ।
পূনঃ : ভাইজান একখানা চিঠি যাবার বেলায় লিখে দিয়ে গেল, সঙ্গে পাঠালাম।

ভাইজান অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর চিঠিটি নিম্নরূপ :
স্নেহের রেণু। আজ খবর পেলাম তোমার একটি ছেলে হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ।… খুব ব্যস্ত, একটু পরে ট্রেনে উঠব।… ইতি তোমার মুজিব।

বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় সন্তান শেখ জামালের জন্মের পর এ চিঠিটি লেখা, তাতে সন্দেহ নেই। প্রিয়তম স্ত্রী, সদ্য জন্ম নেওয়া পুত্র সন্তান- সংবাদ পেয়ে তাদের দেখতে কে না তাৎক্ষণিক ছুটে যায়! কিন্তু ৫ মে শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীসহ পাবনায় রয়েছেন, সেটা আমরা এই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ২২৪ পৃষ্ঠাতেই পাই।

মাত্র কয়েকদিন আগে সন্তান জন্ম দেওয়া স্ত্রীর কাছে অনুরোধ করা হয়েছে, দলের সভাপতি গোপালগঞ্জের বাড়িতে ২/৪ জন অতিথি নিয়ে ২ দিন থাকবেন। তিনি যেন সেই মত প্রস্তুত থাকেন। বার্তা স্পষ্ট- থাকা-খাওয়া-যত্নে যেন ত্রুটি না হয়। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা জীবনের যে কোনো কঠিন সময়েও, কর্তব্যে অটল, সর্ব গুণে গুণান্বিত! তাঁর ওপরে ভরসা রাখা যায়। জাতির পিতার এমন অতুলন আত্মত্যাগের কথা আমাদের শিশু-কিশোরদের জানানোর জন্য সবচেয়ে ভাল মাধ্যমের একটি হতে পারে 'মুজিব গ্রাফিক নভেলের' মতো অনেক অনেক প্রকাশনা।

কেবল পাঠ্যবইয়ে নয়, জাতির পিতার জীবনের এ ধরনের ঘটনাগুলো শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরার বহুবিধ আয়োজন হবে, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে, এটাই প্রত্যাশা। এই কাজে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা এগিয়ে আসুক, এটাই কাম্য।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ থাকবে নতুন শিক্ষাবর্ষে (২০২১) প্রাথমিক পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে সব পাঠ্যবই কেনা হবে তার সঙ্গে মুজিব গ্রাফিক নভেল সিরিজের ১০টি প্রকাশনা যেন বিশেষ উপহার হিসেবে যুক্ত করা হয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল ছাত্রছাত্রীকেও এ তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে। অন্য কোনো গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুকে শিশুদের জন্য এমন সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এতে অর্থ প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে সেটা হবে যথার্থ মানবিক ও লাভজনক বিনিয়োগ। শিশু-কিশোররা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহৎ আদর্শে বেড়ে ওঠার যথার্থ শিক্ষা-উপকরণ পাবে।

সামাজিক গণমাধ্যমে দেখেছি, বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য ১৫০ কোটি টাকার বই কেনার আয়োজনে কেন মুজিব গ্রাফিক নভেল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেজন্য কেউ কেউ উষ্মা প্রকাশ করেছেন। আপত্তি যাদের, সে তালিকায় খ্যাতিমান কবি স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মলেন্দু গুণও রয়েছে। তিনি বলেছেন, মোট ৪০ টি বইয়ের ১০টিই এ সিরিজের। এতে অন্য লেখকরা বঞ্চিত হবে। তিনিসহ আরও কারও কারও ধারণা, যে সব বই নির্বাচিত হয়েছে কিংবা হবে তার সবগুলো মানসম্পন্ন নয়। এমনটি হয়ে থাকলে তার প্রতিকার হওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল গ্রন্থগুলোই বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য সংগ্রহ করতে হবে। এ কেনাকাটিতে ব্যবসায়িক মনোভাব প্রাধান্য পাওয়া উচিত নয়। যারা প্রকাশক কিংবা লেখক, তাদের কাছে একটি আবেদন থাকবে- জাতির পিতাকে শিশুদের কাছে তুলে ধরার অনন্য আয়োজনে আপনারা আর্থিক লাভকে গুরুত্ব দেবেন না। এমনকি 'লোকসান দিয়েও' বঙ্গবন্ধুর ওপর নিজের সেরা রচনা ও প্রকাশনা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে দিতে একদল এগিয়ে আসতে পারে। এভাবেও কিন্তু জাতির জনকের জন্মশতবর্ষে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সম্ভব।