বিজয়ের গানে উদ্ভাসিত নতুন বাংলাদেশ

মো: ফজলুল করিম
Published : 15 Dec 2017, 12:27 PM
Updated : 15 Dec 2017, 12:27 PM

স্বাধীনতা উত্তর জন্মের কারণে পরাধীনতার মানে আমি কোনদিন বুঝিনি। দেখিনি বেদনাতুর আকাশে কেমন নিঃসহ যন্ত্রণার মেঘ জমেছিল পাকিস্তানিদের পৈশাচিক হামলায়। তবে বুঝেছি আমার ভাই-বোনের রক্ত আর ইজ্জতে এসেছে স্বাধীনতার জয়। জেনেছি আমি নতুন শপথে উঠেছে লাল সূর্য।

আজ যখন মুক্ত গলায় অবাধে বলে যাই বুঝতে পারি মা মাটি আর বাতাসের আপন গন্ধ। জানালার ফাঁকে নরম বাতাসে যখন বিজয়ের পতাকা উড়ে তখন খুঁজি আমার আমি'র গান। বিশ্ব মানচিত্রে এই পতাকা জায়গা করবার বদৌলতেই যে এই আমি, আমার ঠিকানা বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পতাকা মুড়ানো সুখে ভাসি আপন ঠিকানায়। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকবার অধিকারের সাথে একটি পতাকার আলোতেই যে আমার আনন্দ।

এ বছর বিজয়ের আনন্দ পেয়েছে অন্য মাত্রা। জাতি হিসেবে কলংকের ভার বয়ে যাবার নিষ্ঠুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে দেশ। স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলা পেয়েছে মুক্তির এক ভিন্ন স্বাদ। রূপান্তর ঘটেছে অন্য এক বাংলাদেশের যার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধে আপামর জনসাধারণের ত্যাগ-তিতীক্ষা, রক্ত আর ইজ্জতের দাম আমরা কতটুকু দিতে পেরেছি এ প্রশ্ন বরাবরই বিচার করার দাবি রাখে। কেমন চেয়েছিলেন তারা, আর কেমন চলেছে দেশ।

এ কথা সত্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার ফলে বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বিপর্যয় মোকাবিলা করেছে। বাংলাদেশ গনতন্ত্রের কক্ষপথ থেকে নির্বাসিত হয়েছে বহু বছর। রাজাকাররা সমাজে হয়েছে প্রতিষ্ঠিত। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেখান থেকে চলে গেছে বহুদূরে।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির মাধ্যমে নাগরিক অধিকার রক্ষার শপথ নিয়েই তো বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। বিজয়ের সুর বেজেছিল অন্যরকম মুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। সেখানে আমরা এখনও পৌঁছতে পেরেছি কিনা তা একটি বড় প্রশ্ন।

আমাদের জনগনের নাগরিক অধিকার আমরা কি নিশ্চিত করতে পেরেছি? ক্ষুধা, স্বাস্থ্য আর আবাসন সমস্যা আমরা এখনও দূর করতে পারিনি। আমাদের শিশুদের এখনও ডাস্টবিনের ময়লা কুড়ে জীবন বাচাঁতে হয়। আমরা কি সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছি? শিশু শ্রম বন্ধ করতে পারিনি এখনও। আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষের হাহাকারে ভারী আকাশের কান্না কিন্তু আমরা এখনও থামাতে পারিনি। আমাদের ধনী হয়েছে আরও ধনী, আর গরীব যাচ্ছে আস্তাকুড়ে। আমাদের এগিয়ে যাবার শ্লোগান তাই হোঁচট খায় যৌক্তিক নানা প্রশ্নে।

যতই প্রশ্ন থাকুক, আমরা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। বিশ্বে নানা ঝুঁকি থাকা সত্বেও আমাদের অর্থনীতি ভাল করছে। আমাদের গার্মেন্টস বিশ্ব বাজারে সমাদৃত। ক্রিকেটে পরিচয় পেয়েছে বাংলাদেশ যদিও ফুটবলসহ অন্যান্য খেলাধুলার মান ক্রমেই নিচে নামছে। আমাদের মানব সম্পদের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বিশ্ব বাজারে। আমাদের তরুনদের জয়গানে আলোকিত হচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ নিয়ে আমরা তরুণরা অনেক আশাবাদী। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের বাংলাদেশ সত্যি সত্যি একদিন সোনার বাংলা হবে। নতুন প্রজন্ম আজ জেগে উঠেছে। স্বপ্ন তাই বাংলার বুকে। আর খুব দূরে নয় যেদিন বাংলাদেশ চলে আসবে সামনের কাতারে। সগৌরবে উচ্চারিত হবে বাংলা মায়ের নাম।

লেখক:

ড. মো: ফজলুল করিম
শিক্ষক ও গবেষক
কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

এবং

সহযোগী অধ্যাপক
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
টাঙ্গাইল, বাংলাদেশ।