ভালো মানুষদের রাজনীতিতে আসতে হবে

মো: ফজলুল করিম
Published : 6 Feb 2018, 02:58 AM
Updated : 6 Feb 2018, 02:58 AM

একটি বিষয় আমরা সবসময় বলি, ভালো মানুষের জন্য রাজনীতি নয়। কিন্তু এ কথা সত্যি, রাজনীতি ছাড়া একটি দেশের সরকারে ভালো মানুষ আসা সম্ভব নয়। একটি ভালো সরকার গঠন করতে হলে দক্ষ নেতৃত্ব গুণের পাশাপাশি মানবিক মানুষ প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যেভাবে রাজনীতিকে খারাপ মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছি তাতে ভালো সরকার কিভাবে আশা করতে পারি? যদিও এটা সত্যি যে রাজনীতিতে ভালো ও দক্ষ মানুষ পাওয়ার জন্য বর্তমান রাজনীতিবিদদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

রাজনীতি সবসময় একটি জটিল জিনিস। কূট-কৌশল ও রাজ-কৌশল দুটিই আয়ত্ত্ব করা এত সহজ কাজ নয়। তবুও রাজনীতি যেহেতু জনগনের জীবন মান পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, সেহেতু রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখাও ঠিক নয়। আমার মনে হয় পৃথিবীর সব মানুষই রাজনৈতিকভাবে সচেতন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবাই রাজনীতি করেন। তবে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে ভালো মানুষ না আসলে পরোক্ষ রাজনীতিতে অংশগ্রহণকারীরা সবসময় ভুলভাবে পরিচালিত হয়।

আমরা যেভাবেই দেখিনা কেন, বাংলাদেশে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির অবসান হওয়া এখনও অনেক দূরের পথ। বাংলাদেশে প্রধান দুই দলের পরিবারের বাইরে থেকে সরকার প্রধান হওয়া প্রায় অসম্ভব। এটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এটাকে স্বীকার করে নিয়ে সরকার পরিচালনায় দক্ষ ও সৎ মানুষ টেনে আনতে পারলে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু যেভাবে রাজনীতির মাঠ কালো টাকার ব্যবসায়ীদের হাতে বন্দী, তাতে করে জনগণের সেবা করবার মানসিকতা সম্পন্ন সৎ মানুষদের পক্ষে মনোনয়ন নিশ্চিত করা সত্যি কঠিন।

একটি বিষয় স্বীকার করতেই হবে, বর্তমান বিশ্ব পুরোপুরি বাণিজ্য নির্ভর। যার কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। শত শত দক্ষ রিপাবলিকান থাকা সত্বেও আমেরিকার প্রেসিডন্ট হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধুমাত্র টাকার জোরে তিনি এখন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা। আমেরিকার নিয়ম কিন্তু আরও খারাপ। একজন প্রেসিডেন্টের হাতে প্রচুর ক্ষমতা থাকে। তিনি তার ইচ্ছেমত মন্ত্রিসভা সাজান। কে যোগ্য, কে দলের ত্যাগী নেতা এসব তিনি না দেখলেও চলে। আমাদের মত দেশে তবুও দলের ত্যাগী নেতাদের মাঝেমধ্যে মূল্যায়ণ করা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমেরিকার সরকার পরিচালনায় একা প্রেসিডেন্ট বা কোন মন্ত্রী কিছু করতে পারেন না, যেখানে আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী বা তার অনুগতরা সংসদের তোয়াক্কা না করে চাইলেই সব করতে পারেন। আমাদের সিস্টেম যেহেতু এরকম, তাই সরকারে ভালো মানুষ জায়গা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে এখনও প্রচুর দক্ষ ও ভালো মানুষ আছেন যারা সরকারে স্থান পেলে দেশের আমূল পরিবর্তন করতে পারেন। দেশের শিক্ষা ও শিল্প প্রসারে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে হলে উপযুক্ত লোকদের মন্ত্রীসভায় আসতে হবে। কিন্তু সবাই যদি পেছন থেকে শুধুমাত্র রাজনীতির দোষ খুঁজতে থাকি তাহলে খারাপ মানুষদের থেকে দেশ রক্ষা করা যাবেনা। পেছন থেকে কথা না বলে সামনে এসে হাল ধরতে এগিয়ে আসতে হবে। টাকাওয়ালাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে সামনে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের তথাকথিত বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবী ও ভালো মানুষরা টাকা খেয়ে ঐ টাকাওয়ালাদের পেছনে ঘুরতেই পছন্দ করেন। যার কারণে অনেক সময় দলের প্রধানের পক্ষে ভালো বা খারাপ, যোগ্য-অযোগ্যদের পার্থক্য করা সম্ভব হয়না।

বাংলাদেশে যে আজকে রাজনৈতিক দৈন্যদশা চলছে তার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজ বহুলাংশে দায়ি। একসময় বুদ্ধিজীবীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ছিলেন সরকারের গার্ডিয়ান। ধীরে ধীরে সেই ধারার অবলোপন হয়েছে। আর ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়না। তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনীতি শেখার পথও বন্ধ। এরকম অবস্থার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরাই দায়ি। আসলে আমরা সামনে থেকে যাদের যোগ্য ভাবি তারাই যখন নানাভাবে কলুষিত, তখন ভাল-মন্দ, সৎ-অসৎ নির্বাচন করা কঠিন। তবুও অনেক যোগ্য মানুষই আছেন যারা রাজনীতিতে আসলে বাংলাদেশের চেহারা একদিন পাল্টে যাবে। আমরা আশা করি সেই দিন দূরে নয়, যেদিন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকরা রাজনীতিতে আসবেন এবং বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিবেন।

লেখক: ড. মো: ফজলুল করিম
শিক্ষক ও গবেষক, কুমামতো বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।