বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তরুণ নেতৃত্ব চায় যুক্তরাষ্ট্র

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ এর ব্লগ
Published : 7 May 2012, 04:05 PM
Updated : 7 May 2012, 04:05 PM

বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ধারার চর্চা ছড়িয়ে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তরুন ও মেধাবীদের কর্ম তৎপরতার মাধ্যমেই তা সম্ভব। এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। সন্ত্রাসবাদ দূর হোক। প্রতিষ্ঠিত হোক শান্তি ও সমৃদ্ধির ধারা।

রোববার বাংলাদেশের সঙ্গে আড্ডা (এ কনভারসেশন উইথ বাংলাদেশ) শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে দর্শকদের প্রশ্নের সরাসরি জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। তরুন দর্শকদের সরাসরি অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইএসডিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর সোয়া ১২ টায় এটি শেষ হয়। বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজ এবং ইন্টারনেট টিভি চ্যানেল দৃক টিভি অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান মুন্নি সাহা।

উন্নয়নশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে তরুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই উল্লেখ করে হিলারি বলেন, তরুণরা এগিয়ে এলে দেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নশীল বিশ্বকে এগিয়ে নিতে তরুণদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সব সময় উন্নয়ন পদক্ষেপের পাশে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এক কথা অনস্বীকার্য যে, উন্নত দেশগুলো অতিমাত্রায় নগরায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ায় দরিদ্রদেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্রদেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পাশে রয়েছে। এজন্য প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদেশগুলো কানকুন, কোপেনহেগেন ও সর্বশেষ ডারবানে জলবায়ু ঝুঁকি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্মেলন করেছে। সম্মেলন থেকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিরা ঝুঁকি মোকাবেলায় এক সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেন। এটা সম্ভাবনার দিক।

সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হিলারি বলেন, বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি না যে, শুধু ইসলাম প্রধান দেশগুলোতেই সন্ত্রাসবাদ বেশি। ইসলাম ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোন দ্বন্দ্ব নেই। সন্ত্রাস যেকোন ধর্মেই হতে পারে। বিশ্বের প্রত্যেকটি নাগরিকেরই তার নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কখনই কারো ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধা হয়ে হবে না। প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসন নাগরিকদের মধ্যে এ তথ্য পরিষ্কার করছে।

বিশ্বজুড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার ব্লগ ইত্যাদির কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু সাংবাদিকরাই নন। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সাধারণ মানুষও যুক্ত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কোন সংবাদ বিশ্বজুড়ে সারা ফেলছে। যোগাযোগের উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলেও মনে করেন তিনি।

নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে নারীদেরকেও তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। নারীদেরকেও এখন আর পিছিয়ে থাকলে হবে না। এজন্য রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব রয়েছে।

সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে শিক্ষার বিকল্প নেই উল্লেখ করে হিলারি বলেন, নারীকে কেবল শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। নারীকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমিও পারবো।

নিজ জীবনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট পত্নী বলেন, আমার জীবনে এতো দূর আসার পেছনে আমার পরিবারের ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে আমার মায়ের অবদান এ ক্ষেত্রে বেশি। আমার পরিবার সবসময় আমাকে সাহস জুগিয়েছে। ভালো কাজে উদ্ধুদ্ধ করেছে। আমি সর্বদা একথা বিশ্বাস করতাম যে মানুষ চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারে। তার চেষ্টা তাকে সাফল্যে পৌঁছে দেয়।

পোশাক শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অভিব্যক্তি কী? অনুষ্ঠানে আগত এক দর্শকের এ প্রশ্নের জবাবে হিলারি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকার, চীনের মতো দক্ষিণ এশিয়া দেশের পোশাক শ্রমিকরা সে দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য অসামান্য অবদান রাখছে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। অথচ এ শ্রমিকদের উপর অত্যাচার নির্যাতন মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিহত আমিনুলের পরিবার ও তার সহকর্মীরা আমিনুলের অনুপস্থিতি অনুভব করছে। তাই সরকারের উচিত হবে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচার করা।

***
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে : http://dhakatimes24.com, ৬ মে ২০১২