মন্ত্রীরা ডিজিটাল প্রতিবন্ধী!!!

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ এর ব্লগ
Published : 4 June 2012, 07:30 PM
Updated : 4 June 2012, 07:30 PM

সরকারের অসাধু, দুর্নীতিবাজ, দুষ্ট মন্ত্রী, এমপিদের সম্পর্কে মন্তব্য (যথার্থ) করায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে রোববার সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেশবরেণ্য অধ্যাপককে নিয়ে সমালোচনার ঝড়ে তোলেন জনগণের ভোটে সংসদের মাটি পারানোর সৌভাগ্যবান সাংসদরা। হেভিওয়েট সাংসদের কেউ কেউ অংশ নেন এ সমালোচনায়। সবশেষে স্পিকারের চেয়ারে থাকা প্যানেল চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আশরাফ অধ্যাপক সায়ীদকে সংসদে এসে ১৬ কোটি মানুষের কাছে শর্তহীন ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। এজন্য কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী বিশেষ অধিকার রক্ষা কমিটিতে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু তার মাত্র কয়েক ঘন্টার মাথায় চলতি সংসদের আরেকজন কোমড়ে জোরওয়ালা মহাজোট সরকারের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু মন্ত্রীদের নিয়ে করে বসছেন ভিন্নধর্মী এক মন্তব্য। তিনি বললেন-'ডিজিটাল সরকারের অনেক মন্ত্রী ও প্রশাসন ডিজিটাল প্রতিবন্ধী।' প্রতিবন্ধীত্ব দূর করতে প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেয়ারও আহবান জানান জাদরেল এই নেতা।

বিচক্ষণ এ রাজনীতিক প্রতিবন্ধী মন্ত্রীদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আরো বলেন-‌' প্রতিবন্ধী মন্ত্রী ও প্রশাসনকে সুস্থ করে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা হলে এসব ডিজিটাল প্রতিবন্ধী মন্ত্রীদের দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না।'

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে কর্মসংস্থান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্তকরণ নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে ইনু এসব কথা বলেন।

শুধু ইনুই নন; মহাজোটের অনেক শরিকই নানাভাবে সরকার প্রধানকে সর্তক করতে চাইছেন। সচেতনতার বোধটা জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। এক সময়ের স্বৈরচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও মাঝে মাঝে বলেন- সরকারের মন্ত্রীদের কুকীর্তির কারণে মহাজোটকে আগামী নির্বাচনে বড় ধরণের খেসারত দিতে হবে। এমনকি বার্ধক্যকে পাশ কাটিয়ে মনের জোরে বলে ওঠেন-'আগামী দিনে জাতীয় পার্টির ক্ষমতায় যাওয়া নিশ্চিত'
আগামী নির্বাচনে একা নির্বাচন করার সাহসও বুকে রাখেন জনপ্রত্যাখ্যাত সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

মহাজোট শরিকদের এসব আক্কেলগুড়ুম বক্তব্য শুনে জনগণের মাথায় হাত (বলে কী!)। ভাল নেই মহাজোটের ড্রাইভার দল আওয়ামী লীগও। মহাজোট নিয়ে একরকম মহাবিপাকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও। মেধাবী ও জনগণের সমর্থনে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাও বুঝতে পারছেন-মহাজোট সরকারের জনপ্রিয়তার বেরোমিটারের পারদ প্রায় তলানি ছুই ছুই। বুঝতে পারছেন, নিজে একা সৎ হলেই হয় না। আশপাশের মানুষ সৎ না হলে অল্পদিনেই বিপুল জনপ্রিয়তা পরিণত হয় জনরোষে। কিন্তু এর পরও সম্প্রতি সময়ে তাঁর অযাচিত কিছু বক্তব্যে মহাজোট হিতৈশীদের দিলে চোট লাগে। সমানভাবে চোট লাগে দিন বদলের স্বপ্ন দেখা সাধারণ মানুষগুলোর মনে। 'গণ্যমাধ্যম মিথ্যাচার করে' এমন বক্তব্য শুনে বেদনায় নীল হতে হয় শান্তিকামী সংবাদকর্মীদের।

যা হোক, মূল কথা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। বলতে চেয়েছিলাম, মন্ত্রী, এমপিদের নিয়ে শিক্ষাবিদ আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ যথার্থ ও সময়োপযোগী মন্তব্য করায় তাকে সংসদে গিয়ে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে। ঠিক একদিন বাদে মন্ত্রীদের প্রতিবন্ধী বলে সম্বোদন করায় সরকারের দোস্ত দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুকেও কি এখন সংসদে দাঁড়িয়ে করজোড়ে মাপ চাইতে হবে? নাকি সরকারি লোক বলে পার পেয়ে যাবেন? ফজলুল আজিমরা তো এখন পেছনের সারিতে বসে হাতে তালি দেবেন। এমন ভাব দেখাবেন 'প্রতিবন্ধী বলেছে; বেশ করেছে?' আর মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত শেখ পরিবারের অন্যতম উত্তরসূরী শেখ ফজলুল করিম সেলিমও হয়তো মুখ টিপে হাসবেন ট্রেজারী বেঞ্চে বসে। তবে সাহারা, ফারুক, আশরাফ, মুহিতদের মতো কয়েকজন মন্ত্রী মুখ খুললেও খুলতে পারেন। পানি কতদূর গড়ায় তা দেখার অপেক্ষায়…।